somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফার্মের মুরগির বিষাক্ততা

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান তরুণ ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে, ঘোরাঘুরি অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা বলতে তারা বোঝে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া আর খাবারের ছবিসহ চেক-ইন দেয়া। তাদের এই ঝোঁককে পুঁজি করে রাস্তায় রাস্তায় গড়ে উঠছে জমকালো সব রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টে নানা ধরনের দেশী-বিদেশী দাঁতভাঙা নামের খাবারের প্রধান উপকরণ হচ্ছে মুরগি, প্রধানত ফার্মের মুরগি। কিন্তু এই ফার্মের মুরগীর প্রধান খাদ্যই যে এক ধরনের বিষ তা আমাদের কল্পনার বাইরে।
কৃষিখাতের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে পোলট্রিশিল্প। বর্তমানে এ শিল্পে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশের আমিষের অনেকটাই পূরণ হয় এই পোলট্রিশিল্প থেকে। কিন্তু ভয়াবহতার বিষয় হচ্ছে, এই সব ফার্মে মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্যানারির বর্জ্য যাতে থাকে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম।


বাংলাদেশের ৯০% ট্যানারী হাজারীবাগে অবস্থিত। বর্তমানে এখানে প্রায় ২০০ টির বেশি ট্যানারী শিল্প রয়েছে। বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পগুলো বছরে প্রায় দেড় কোটি র্বগফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে। চামড়া প্রস্তুতকরণে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের ভারী ধাতু যার নাম ক্রোমিয়াম। ট্যানারির বর্জ্যে অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ও ভারী ধাতুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় ক্রোমিয়াম। ঢাকার চামড়ার ট্যানারী সমূহে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর চামড়া উচ্ছিষ্ট সমূহ প্যাকেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের মুরগির খামার প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলোর কাছে। এসব কোম্পানী মুরগির খাবার তৈরিতে ব্যবহার করছে ট্যানারির বর্জ্য। এইসব খাবারে পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম। ক্রোমিয়াম ভারী ধাতু হওয়ায় এটি সহজে বিয়োজিত হয় না, বরং প্রাণীদেহের বিভিন্ন অংশে জমতে থাকে। ফার্মের মুরগির খাবার ক্রোমিয়াম মিশ্রিত থাকায় এটি মুরগির শরীরের বিভিন্ন অংশে জমতে থাকে। যা খাওয়ার পরে সরাসরি প্রবেশ করে মানুষের শরীরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবুল হোসেন এর এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মুরগির রক্তে, মাংসে, হাড়ে, মগজে ও কলিজায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে এবং অন্যান্য অংশের তুলনায় হাড়ে ও মগজে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি ক্রোমিয়াম। তার গবেষণায় দেখা যায়, মুরগির হাড়ে ও মগজে পাওয়া যায় যথাক্রমে ২০০০ মাইক্রোগ্রাম ও ৪৫২০ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম, যা মানুষের সহনীয় মাত্রার তুলনায় অত্যন্ত বেশি। ক্রোমিয়ামের গলনাঙ্ক সাধারণত ২৯০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, কিন্তু চুলায় মুরগি রান্না করা হয় মাত্র ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এতে রান্নার পরেও ক্রোমিয়ামের কোন পরিবর্তন হয় না এবং এটি কোন প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই প্রবেশ করছে মানুষের শরীরে।
ক্রোমিয়াম এক ধরনের মিনারেলস যা মানুষের শরীরে প্রয়োজন কিন্তু অতি অল্প পরিমাণে। আর এভাবে অতিমাত্রায় মুরগির মাধ্যমে যে ক্রোমিয়াম দেহে প্রবেশ করছে তা বিষাক্ত বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এর প্রভাব ভয়াবহ কেননা শিশুদের জন্য এর সহনীয় মাত্রা অত্যন্ত কম। ক্রোমিয়ামকে বলা হয় কারসিনোজেন (carcinogen) অর্থাৎ যা ক্যান্সারের কারণ। মানুষের বিভিন্ন অঙ্গে, যেমন যকৃত, কিডনী, পাকস্থলী ইত্যাদি অংশে ক্যান্সার এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে ক্রোমিয়ামকে। এছাড়া বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা যেমন, বমি, বদহজম, পাকস্থলীর সমস্যা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়।
ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, মুরগির মাংসের দৈনিক চাহিদা প্রায় এক হাজার সাতশো টন। প্রতিদিন ডিমের চাহিদা দুই থেকে সোয়া দুই কোটি। বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন একজন ৭ গ্রাম ডিম, ১৪ গ্রাম মুরগির মাংস খায়। এর থেকে আমিষ আসে যথাক্রমে এক ও তিন গ্রাম। মুরগি ও ডিম থেকে দৈনিক চার গ্রাম আমিষ। প্রতিদিনের খাদ্যে ৩৩-৬৬ শতাংশ আমিষ থাকার কথা। এর মধ্যে প্রাণিজ আমিষ থাকবে কমপক্ষে ১৫ গ্রাম। ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস সকল বয়সের মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য খুবই দরকারি খাদ্য। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট শরীরে জমা থাকে। কিন্তু আমিষ জমা থাকে না। প্রতিদিনের খাদ্য থেকে এটা গ্রহণ করতে হয়। দেশী মুরগির দাম বেশি ও অতটা সহজলভ্য না হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ ফার্মের মুরগির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষের অতি লোভের কারণে এই প্রয়োজনীয় ও নির্ভরযোগ্য জিনিসটি বিষে পরিণত হয়েছে। যথাযথ ব্যাবস্থা না নিলে এটি বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুকিতে বড় মাত্রার প্রভাব ফেলবে।

সূত্রঃ
http://dhakatimes.com.bd/2014/04/13/38274/chromium-is-found-in-chicken/
http://forum.daffodilvarsity.edu.bd/index.php?topic=21668.0
http://bangla.bdnews24.com/business/article982388.bdnews
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×