somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিএমওতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা। এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যের চাহিদা। খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ব্যবহারে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যের গুণগত মান আর সহজলভ্যতা। প্রযুক্তির নানা উৎকর্ষতার মাঝেও এর বিরূপ দিকগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। সেরকমই এক প্রযুক্তির নাম জিএমও। জিএমও হচ্ছে জেনেটিক্যালী মডিফাইড অর্গানিজম, আবার কখনো কখনো জিইও অর্থাৎ জেনেটিক্যালী ইঞ্জিনিয়ার্ড অর্গানিজম ও বলা হয়। সংক্ষেপে জিএমও বা জিই ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃত্রিমভাবে কোন জেনেটিক ইনফরমেশন, অর্গানিজমে ঢুকিয়ে দিয়েই জিএমও তৈরী করা হয় অর্থাৎ কোন একটি অর্গানিজমে, কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের নিউক্লিওটাইড সিকুয়েন্স অর্থাৎ ফরেন ডিএনএ পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে ঢুকিয়ে, অর্গানিজমকে জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন করা হলে ঐ অর্গানিজমকে জিএমও বলে।
১৯৯৬ সনে প্রথম জিএম ফসলের চাষ ও বাজারজাত শুরু হয় আমেরিকায়। সে সময় ১.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি চাষ হয়েছিল। গত ১৪ বছরে জিএম ফসলের চাষে জমির পরিমাণ বেড়ে ১৪৮ মিলিয়ন হেক্টর হয়েছে, অর্থাৎ ৮৭ গুণ বেড়েছে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পোকামাকড় প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, ফসলের গুণাগুণ ও স্বাদের পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে জিএমও টেকনোলজী ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে খুব বড় আকারের শাকসবজি, ফল, মাছ, মুরগি, অধিক উত্‍পাদনশীল ধান, গম, ভুট্টা রোগ পোকা প্রতিরোধী জাত, অধিক উত্‍পাদকারী গাভী ইত্যাদি জিএম ফুড ২৯টি দেশে চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশে জিএম ফসলের চাষ শুরু না হলেও, নানারকম বিদেশী দ্রব্যের আমদানির মাধ্যমে দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে জিএম ফসল। এর মধ্যের রয়েছে বিটি বেগুন, গোল্ডেন রাইস, সয়াবিন ইত্যাদি।
বিটি বেগুন হল ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধী বেগুন, যা জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে তৈরি করা এক ধরনের জিএম ফসল। অনেকে মনে করেন বায়োটেকনোলজি শব্দ থেকে বিটি বেগুনের নামকরণ করা হয় যা সঠিক নয়। বিটি হল Bacillus thuringensis (বেসিলাস থুরেনজেনসিস) এর সংক্ষিপ্ত নাম। বেসিলাস থুরেনজেনসিস মাটিতে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা এক ধরনের কীটনাশক প্রোটিন উৎপন্ন করে যা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করতে পারে। মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় বাংলাদেশ ভারত ও ফিলিপাইনে বিটি বেগুন চাষ চালু করার জন্য এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০০৫ সালে। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবার বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় জিনগত ভাবে রূপান্তরিত বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন দেয়। স্বাস্থ্যগতদিক থেকে বিটি বেগুনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ভয়াবহ। মানুষের স্বাস্থ্য ছাড়াও পরিবেশের জন্য এই বেগুন চরম ক্ষতিকর। অনেকেই দাবি করেন, বিটি বেগুন মানুষের খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। জিনগত পরিবর্তনের কারণে এতে যে বিষ তৈরি হয় তা মানুষের লোহিত কণা ধংস করে দেয়। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য এই বিটি বেগুন ক্ষতিকর।
গোল্ডেন রাইস হচ্ছে বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ জৈব প্রযু্ক্তি প্রকৌশলের মাধ্যমে রূপান্তরিত ধান। এই ধানের সূত্রপাত হয় মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভিটামিন এ অভাবজনিত রাতকানা রোগ দমনে। একদশক ধরে গোল্ডেন রাইস নিয়ে চলছে নানামুখী তুমুল বিতর্ক। বিটা ক্যারোটিন শোষিত হয়ে শরীরে বিষাক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। হজম প্রক্রিয়ায় বিটা ক্যারোটিন পরিবর্তিত হয়ে রেটিনল বা রেটিনোইক এসিড তে রূপান্তরিত হতে পারে, যা চর্বি বা Plasma তে জমা হতে পারে কিন্তু এর প্রভাব বিষাক্ত এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। নিম্ন মাত্রায় ভিটামিন-এ স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ তলপেট, নাকে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং শিশুদের Fontanelle সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী বিষাক্ততা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলগুলোর ব্যথা সৃষ্টি, চুল পড়া, শুষ্কতা জ্বর, ওজন হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠোঁটে ফাটলের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের সয়াবিন তেলের একটি বড় অংশ আমদানি করা হয় আমেরিকা, ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনা থেকে। অথচ ঐ সমস্ত দেশের সয়াবিন তেলের প্রায় সবটাই জিএমও বা জেনেটিকালি মোডিফাইড। জিএম ফুডের অতিরিক্ত জিন দেহের পাকস্থলী কিংবা তন্ত্রের উপর হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে জিএম ফুডে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন অনুপ্রবেশ করালে দেহের এন্টিবডি বা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জিএম খাদ্য খেলে প্রজননক্ষমতা হ্রাস, শিশুর জন্মগত ত্রুটি, কিডনিতে সমস্যা, যকৃতে সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যদি জটিল রোগ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে- জিএম ফুডে ঢুকানো অন্যজীবের জিন মানুষের পাকস্থলী ও অন্ত্রে হজম হয় না৷ কখনো রক্তের মাধ্যমে জন্মগত ডিএনএ-এর সাথে মিশে গিয়ে আচরণের পরিবর্তন আনে৷ এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০০ ভাগ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে জিএমও ফুড ব্যবহার হলেও সেটা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে না। অথচ বর্হিবিশ্বে জিএমও ফুড থাকলে তা প্যাকেটের গায়ে স্পষ্ট লেখা থাকে, ফলে অধিকাংশ মানুষ আগে থেকেই সচেতন হতে পারে। জিএম খাদ্যের অনেক ভালো দিক থাকলেও, এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত। যেকোন জিএমও খাদ্যকে অনুমোদন দেয়ার আগে এর স্বাস্থ্যঝুকি নিরূপণ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×