somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : ভুল সবই ভুল !!

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

★ভাবনার শুরু★
সকালবেলায় শুকনো রুটি আর কুমড়োর তরকারি খেতে খেতে দেবল নিজের মনে বলল, "মিতাকে বিয়ে করাটা মস্ত বড় ভুল হয়েছে। ভুলটা ঝটপট শুধরে নিতে হবে।"
.
মিতার বাড়ির অবস্থা বিশাল। তাদের নানা রকমের ব্যাবসা। মিতার বাবা প্রবীরবাবু শহরের নামাজাদা ধনী। দেবল ভেবেছিল মিতাকে বিয়ে করলেই তার এই বেকার, ভিখিরির মতো জীবন থেকে উত্তরণ ঘটবে। মিতা অতীব কদাকার দেখতে। যেমন মোটা তেমনি কালো। শুধুমাত্র মিতার বাবার টাকার লোভে মিতাকে বিয়ে করেছে দেবল।
প্রেমের ফাঁদ পেতেছিল সে। মিতা টুপ্ করে সেই ফাঁদে পড়ে গেল। অতঃপর মিতাকে নিয়ে পালাল দেবল। কিন্তু অন্য কোথাও গেল না। ওখানেই নিজের ছোট্ট ভাড়া ঘরে নিয়ে গিয়ে তুলল। দেবল ধরেই নিয়েছিল তার পয়সাওয়ালা শ্বশুর কদিন পরেই এই বিয়েটা মেনে নেবে। কিন্তু বুঝতে ভুল হয়েছিল। তার শ্বশুর মানুষটা খুব জেদি। দেবলের মতো একটা চালচুলোহীন বেকারকে তাঁর মতো একজন অভিজাত মানুষের পক্ষে জামাই হিসাবে মানার কথা নয়, মানলেনও না। তবে থানা-পুলিশও করেননি। হয়তো পরিবারের সম্মানের কথা ভেবেই।
.
★প্রেম /আসল- নকল★
প্রথম কিছুদিন মিতার গয়না বিক্রি করে চলল। বেশ কিছু গয়না নিয়ে এসেছিল মিতা।
দেবল বেকার। এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কাজ-টাজ করার জন্য জন্মায়নি। দেবল কাজ পাওয়ার জন্য কোনো চেষ্টাও করল না। শুধু একটাই আশা যদি মিতার বাবা তাদের বিয়েটা মেনে নেয় তাহলে বাকি জীবনটা টাকার এভারেস্টে বসে পায়ের ওপর পা তুলে কাটিয়ে দেবে।
মিতা টিউশ্যানি ধরেছে। অত ধনী বাড়ির মেয়ে অথচ সব কষ্ট হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। মিতা পৃথিবীর সেই মেয়ে, যে, যাকে ভালবাসে তার জন্য সব করতে পারে। তাই ধনী পরিবারের মেয়ে হয়েও সমস্ত কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছে সে। দেবলকে পেয়ে মিতা সত্যিই খুব সুখী হয়েছে।
তার বাবা-মায়ের জন্য মন কেমন করে। মন কেমন করে ভাইয়ের জন্য। কিন্তু সে কোনও যোগাযোগ করেনি। দেবল অনেক জোরাজুরি করেছে তাও করেনি। সে তার বাবাকে জানে, খুব কঠোর মনের মানুষ। যতদিন না বাবা নিজে থেকে এই বিয়ে মেনে নিচ্ছে ততদিন যোগাযোগ না করাই উচিত।
.
★ শিকারির ধৈর্যচ্যুতি★
দেবল অনেক ভাবল। তারপর ঠিক করল সে পালাবে। তাদের বিয়ে হয়েছে মন্দিরে, লোকচক্ষুর আড়ালে। তাই এই বিয়ের কোনো সামাজিক বা আইনি মূল্য নেই। এখানে পড়ে থেকে লাভ নেই। বিয়ের পর তিন মাস হয়ে গেল। মিতার বাবা মেনে নেওয়ার হলে এতদিনে মেনে নিত। তাই এখানে সময় নষ্ট না করে অন্য কোনও শাঁসালো মেয়েকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা উচিত। তার চেহারা সিনেমার হিরোর মতো। মেয়ে ফাঁসানো তার বাঁ হাতের খেল।
.
★ আত্মজা★
মিতার বাড়িতে তিন মাস ধরেই শোকের আবহ। মিতা প্রবীরবাবুর একমাত্র মেয়ে। খুব আদরের। সেই মেয়ে এমন কাণ্ড ঘটানোয় প্রবীরবাবু যথেষ্ট আঘাত পেয়েছেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন ছেলেটি একটি মাকালফল। কোনও কাজ করে না। শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভেই সম্ভবত মিতাকে বিয়ে করেছে। প্রবীরবাবুর লোক লাগানো আছে। তারাই সমস্ত খবর দিচ্ছে। তাঁর অতি আদরের মেয়ে মিতা টিউশ্যানি করছে, আর ছেলেটা বসে বসে খাচ্ছে।
প্রবীরবাবুর স্ত্রী কেঁদে ভাসাচ্ছেন। তাঁর একটাই কথা,"আমি আর পারছি না, বিয়েটা মেনে নিয়ে তুমি মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনো।"
প্রবীরবাবুরও এক কথা, "মেয়ের কথা তুমি ভুলে যাও।"
.
তিনমাস পরে রাত্রিবেলায় মেয়েকে স্বপ্ন দেখলেন প্রবীরবাবু। মেয়ে হাপুস নয়নে কাঁদছে। তার পুতুল হারিয়ে গেছে। প্রবীরবাবু মেয়েকে কোলে তুলে চোখের জল মুছিয়ে বললেন, "কাঁদিস না, তোকে আমি আরও ভাল পুতুল এনে দেবো।"
ঘুমটা ভেঙে গেল। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন প্রবীরবাবু। তারপর স্ত্রীকে ডেকে বললেন, "তৈরি হয়ে নাও, মেয়ে-জামাইকে আনতে যাবো। যত অপদার্থই হোক মিতার যখন তাকে এতই পছন্দ তখন দুজনে এখানেই থাক।"
.
★ কপালে নেইকো ঘি★
দেবল পালাল। মাঝরাত। মিতা তখন অঘোরে ঘুমাচ্ছে। মিতার একটা ভারী হার দেবল আগেই ঝেঁপে দিয়েছিল। কাল ওটা বিক্রি করে ভাল টাকা পেয়েছে। ওই টাকা নিয়ে দেবল বেরিয়ে পড়ল নতুন শিকারের সন্ধানে।
.
দেবলের ট্রেন দুরন্ত গতিতে দৌড়চ্ছে। প্রবীরবাবু আর তাঁর স্ত্রী যখন তাঁদের মেয়ে-জামাইকে ঘরে নিয়ে যাবেন বলে গাড়ি থেকে নামলেন দেবল তখন অনেক দূর চলে গেছে।
ট্রেনের সিটে হেলান দিয়ে বসে দেবল তখন ভাবছে, ওই কেলে-ধুমসো মেয়েটাকে নিয়ে সারাজীবন ধ্যাড়ধ্যাড়ে ভাড়া ঘরে অভাবের মধ্যে কাটানোর হাত থেকে বড় জোর বেঁচে গেল সে...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ১:২০
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×