somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চকবাজারের ঈদমেলা – হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি’র ডালা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট বেলায় দুই ঈদে চকবাজারের মেলা ছিল আমার কাছে খুবই চিত্তাকর্ষক, সে দুই যুগেরও বেশী সময়ের অতীত। আজ দুপুরে আগামাসি লেন থেকে ফেরার সময় চকবাজার হয়ে এলাম। মনে পড়ে গেল সেই জমজমাট মেলার স্মৃতি। আজকেও মেলার মত করে আচার, মাষের বড়া, খেজুর পিঠা, মিরচি-মুরালি সহ বেশকিছু মুখরোচক হালকা খাবারের দোকান দেখতে পেলাম, মূলত মেলা বলতে এখন এগুলোই রয়েছে, সাথে ছোট সাইজের দু’তিনটা নাগরদোলা। অথচ একসময় কি জমজমাট ছিল এই চকের মেলা (স্থানীয়দের কাছে এই নামেই পরিচিত)।

চকবাজার পুরোন ঢাকার লালবাগে অবস্থিত ঢাকার পুরানো বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৬০২ সালে মুঘল আমলে সেনাপতি মানসিংহ পূর্ববঙ্গে বিদ্রোহ দমন করতে এসে ভাওয়াল থেকে সদর দফতর স্থানান্তর করেছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায়। সেখানেই মুঘল দুর্গ স্থাপিত হয়েছিল, যার পাশেই গড়ে উঠে চকবাজার। তবে একসময় এই চকবাজারকে বহুলোক চৌক বন্দর নামে ডাকতেন। মানসিংহের আমল থেকে চকবাজার যাত্রা শুরু করলেও এটি পূর্ণতা লাভ করেছিল মুর্শীদকুলি খাঁর সময়ে। মুর্শিদ কুলি খাঁর পর ওয়াল্টার সাহেব নতুন করে চকবাজার তৈরি করেন। সে সময় তিনি কোমর পর্যন্ত উচু দেওয়াল দিয়ে চকবাজার ঘিরে দিয়েছিলেন এবং বাজারে প্রবেশের জন্য ১৬ টি গেট করে দিয়েছিলেন।

ইংরেজ শাসনের শুরু হতে পিছিয়ে যেতে থাকা মুসলমান সংস্কৃতি, ইংরেজ শাসনের কবল থেকে যখন একটু একটু করে মুক্ত হচ্ছিল উপমহাদেশ, সেই সময়ে আবার আরও বিস্তৃত পরিসরে ব্যাপ্তি পেতে থাকে। সেই উনবিংশ শতকের শেষ দিকে ধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ শেষে বসা শুরু করে ঢাকা শহরের ঈদের মেলা। পরবর্তীতে বিংশ শতকের শুরুর দিকেই চকবাজারে ঈদের মেলা বসতে আরম্ভ করে। সেই হিসেবে চকবাজারের ঈদের মেলার ঐতিহ্য শত বছরের, যা নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে। হয়ত পাঁচ অথবা দশ বছর, এর বেশী নয়, এই সময়ের ভেতরেই হারিয়ে যাবে পুরাতন ঢাকার চক বাজারের ঈদের মেলা।

চকবাজার মূলত একটি বর্গাকার স্থাপনাকে ঘিরে আবর্তিত, যার ভেতরে বেশ কিছু মার্কেট রয়েছে যেখানে কয়েক হাজার দোকান রয়েছে। শাহবাগ থেকে বকশীবাজার হয়ে উর্দুরোড দিয়ে চকবাজার থানা হয়ে যে সড়ক সংযোগ মুখ রয়েছে একে যদি চার প্রান্তের প্রথমটি ধরা হয় তবে হাতের ডান দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে চকবাজার শাহী মসজিদ হয়ে আরেক সংযোগ মুখ যা এসেছে পোস্তা হয়ে (কুরবানির ঈদে চামড়ার আড়ত হিসেবে যা মেইন নিউজে আসে)। অপর দিকে হাতে বাম দিক দিয়ে এগিয়ে গেলে যে সড়ক সংযোগ মুখ রয়েছে তা মূলত এসেছে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার হতে। আর ঠিক বিপরীতের শেষ সড়ক সংযোগ মুখ যা সদরঘাট হতে পাটুয়াটুলি, বাবুবাজার, ইমামগঞ্জ হয়ে চকে এসে মিশেছে। এই চার সড়ক সংযোগ মুখকে সংযোগকারী সড়ক জুড়েই মূল চকবাজার বিস্তৃত। চকবাজারের ইফতার বাজার বসে মূলত চকবাজার থানা’র সামনে হতে যে রাস্তা চকবাজার শাহী মসজিদের দিকে গেছে, সেই সড়কে। কিন্তু চকের মেলা বসতো এই চার সড়কের পুরোটা জুড়ে। সাথে তা একদিকে জেলখানা রোডে এবং অপরদিকে সদরঘাট রোডে বিস্তৃত হত। আর এখন চারটি রাস্তাই ফাঁকা, শুধু দুটি রাস্তার কিছু অংশে ফুটপাথ ঘেঁষে কিছু খাবার দোকান আর দুয়েকটি খেলনার দোকান হয়ত খুঁজে পেতে দেখা যাবে।

তো কি কি দেখেছি, সিকি শতক আগেকার চকবাজারের ঈদমেলা’য়? থানা থেকে জেলখানা অভিমুখের সড়কের পুরোটা জুড়ে থাকতে সারিসারি আচারের দোকান রাস্তার মাঝখান দিয়ে, আর ফুতপাথ ঘেঁষে খেলনার দোকান। থানা থেকে শাহী মসজিদের সড়কেও একই অবস্থা থাকত, তবে সেখানে আচারের জায়গায় পাওয়া যেত মিরচি-মুরালি, মাষের বড়া, খেজুর পিঠা, গজা, মিষ্টান্ন প্রভৃতি। জেলখানা রোড হতে চকবাজার হয়ে সদরঘাট যাওয়ার রাস্তা, যেখানে বিখ্যাত “নূরানি কোল্ড ড্রিংকস” এর দোকান রয়েছে, সেই সড়কে বসত খেলনার দোকান সব সাথে নিত্য ব্যাবহারের জিনিষপত্র। বাকী সড়কটি একটু ফাঁকা থাকলেও সেখানে নানান বস্তুর দেখা মিলত। তবে ছোটদের কাছে প্রিয় ছিল জেলখানাগামী রাস্তার মুখের অংশ।

সেই জায়গায় মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে কোথা হতে যেন আগমন ঘটতো মাটির খোলে মাটির চাকার টমটম গাড়ী’র প্রস্তুতকারকদের। সারাদিন ধরে রাশি রাশি সেই খেলনা তারা বানিয়ে যেত। পরবর্তীতে সেখানে যোগ হয় লাঠির হাতলযুক্ত টিনের পাখি, প্লেন এগুলো। সেইখানটার একটু দূরে, এখন যেখানে সিটি কর্পোরেশন মার্কেট হয়েছে, সেখানটায় পাবলিক টয়লেট ছিল যার সম্মুখটা ছিল ফাঁকা। সেই ফাঁকা জায়গায় বসত দুই/তিন’তলা উচ্চতার নাগরদোলা, একসাথে লাইন দিয়ে চার চারটি। সেই নাগরদোলার ক্লান্তিহীন ছন্দময় ক্যাঁচরম্যাচর শব্দে মুখর থাকতো পুরো মেলা প্রাঙ্গন। আমরা ছেলেপুলের দল লাইন দিয়ে উঠতাম সেই নাগরদোলায়, হাতে থাকতে কোন একটা খাবারের ঠোঙ্গা যা হয়ত কিছুক্ষণ আগে এই মেলা হতেই কেনা। আহ, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!!!

বি.দ্র.। উপরে শিরোনামে ব্যাবহার করা ছবিগুলো চকবাজারের মেলার নয় আর ছবি চারটি এই লিংকগুলো হতে নেয়াঃ

http://www.priyo.com/2014/07/29/89380.html
http://bn.wikipedia.org/wiki/চকবাজার
http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDRfMjNfMTNfNF8xNF8xXzM1NDU5
http://bn.bdfish.org/2012/02/পোড়াদহ-মাছের-মেলা/
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:১৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×