somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সদাসদী জমিদার বাড়ী - গোপালদী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ২১)

০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টলটলে পুকুরের জলে স্বচ্ছ নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি আয়নার মত দেখাচ্ছিলো উপর থেকে, ঠিক তার পেছনে সবুজ লতাগুল্মের ঝোপ এর উপরে দুচারটি গাছ দাঁড়িয়ে, তার পাদদেশ ঘেঁষে দৃষ্টি এগিয়ে দিলে হলদে সর্ষে ক্ষেতের বিস্তীর্ন জমিন যার শেষপ্রান্তের দিগন্ত রেখায় আবার সবুজ গাছের সারি। এমন প্রকৃতির রূপ দেখলে যে কেউই দৌড় দিবে সেই দিকে। তাই তো আমার ভ্রমণসাথী এক বন্ধুর ছয় বছরের ছেলেটি বাঁধনমুক্ত থাকায় এক দৌড়ে পুকুরের সিঁড়ি বেয়ে সোজা নীচে নেমে গেল একেবারে। আমাদের সমস্বর চিৎকারে বেচারা উল্টো ভয় পেয়ে গেল, সে তো পানিতে নামতো না, বরং আমাদের চিৎকারে ভয়েই পানিতে পড়ে যেতে পারতো। হ্যাঁ, কথা হচ্ছিলো সদাসদী জমিদার বাড়ীতে প্রবেশ এর মুখে থাকা একটা পুকুর এর। গত জানুয়ারী মাসের শেষ শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ভ্রমণের সময় প্রায় পাঁচ বছর পর কোন জমিদার বাড়ী ভ্রমণ করার সুযোগ পেলাম। এমনিতেও প্রায় তিন বছর ঘোরাঘুরি একেবারে বন্ধ ছিলো। বহুদিন পর জমিদার বাড়ীর খোঁজে বের হয়ে সেদিন বেশ ঘোরাঘুরি হয়েছিলো। তো আজ কথা বলছি সদাসদী জমিদার বাড়ীর, যা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভায় অবস্থিত।







প্রায় দেড়শত বছর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বর্তমান গোপালদী পৌরসভা এলাকায় ৩টি জমিদার পরিবারের ইতিহাস জানা যায়, তারা ছিলো সরদার পরিবার, তেলি পরিবার এবং ভুঁইয়া পরিবার। এদেরে মধ্যে সম্পদ এবং ক্ষমতার মাপকাঠিতে এগিয়ে ছিলো সরদার পরিবার। সরদার পরিবারের তিন সন্তান শ্রী প্রসন্ন কুমার, মরিন্দ্র কুমার আর গোপাল চন্দ্র। সেই গোপালচন্দ্রের নামানুসারেই বর্তমান গোপালদী নামটি রাখা হয়। এর সাথেই এখানে রয়েছে ভুঁইয়া বাড়ি যার জমিদার ছিলেন হরিচন্দ্র ভুঁইয়া এবং কানাইচন্দ্র ভুঁইয়া নামক দুই ভাই। অপরদিকে তেলি পরিবার নিয়ে বিশদ কোন তথ্য জোগার করতে পারি নাই।





পুকুরঘাট ধরে এগিয়ে ভেতরের দিকে গিয়ে বামে তাকালেই চোখে পড়বে সরদার বাড়ী, কারুকার্যখচিত দ্বিতল জমিদার বাড়িটি ১০১ কক্ষবিশিষ্ট। বাড়ির সম্মুখপানে প্রসস্থ একটি উঠোন যার ৩ দিকে রয়েছে আরও তিনটি বাড়ি। এই বাড়ীর নির্মাণশৈলীতে মোগল আমলের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। অযত্ন আর অবহেলায় ভেঙে পড়েছে রন্ধনশালা। লতাগুল্ম গজিয়ে ঢেকে গেছে পূজা-অর্চনার ঘর ও শৌচাগার। এই বাড়ীর নিচতলায় চলত দাপ্তরিক কর্মকান্ড আর দ্বিতীয় তলায় ছিল শয়ন কক্ষ, জলসাঘর ও পূজা-অর্চনার ঘর। কারুকার্য খচিত দরজা-জানালাগুলো এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এরই মধ্যে খসে পড়েছে মূল স্থাপনার পলেস্তারাসহ নানা অংশ। চুরি হয়ে গেছে অনেক মূল্যবান পাথরসহ আসবাবপত্র। আর শুরুতেই তো বলেছি সেই পুকুরের গল্প, যেখানে রয়েছে দুটি শানবাঁধানো ঘাট। অনেক আগে এই দুই ঘাটের মাঝে একটি দেয়াল ছিল, যা দিয়ে দুটি ঘাটের মাঝে একটা পর্দা তৈরী করা হয়েছিলো। এই ঘাটগুলোর একটিতে পুরুষ, অন্যটিতে মেয়েরা গোসল করত। পুরো জমিদার বাড়ীর স্থাপনার সর্বত্র আর দশটা জমিদার বাড়ীর মতই অযত্ন আর ক্ষয়ে যাওয়ার ভগ্নদশা পরিলক্ষিত হয়েছে।





আমরা সময় নিয়ে জমিদার বাড়ীটির চারিধার ঘুরে ঘুরে দেখলাম, ছবি তোলা হল অনেকগুলো। এরপর এখান হতে দলের কাছ থেকে আমি বিদায় নিয়ে আলাদ হয়ে যাই। সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে চলে যাবে, আর আমি রওনা দিলাম আরও তিনটি জমিদার বাড়ীর খোঁজে। সেই গল্পগুলো এই সিরিজের পরবর্তী পর্বগুলোতে থাকবে। আর হ্যাঁ, জমিদার বাড়ি নিয়ে ধারাবাহিক লেখা শুরু করার পর এই বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করে দুঃখ হয়, কিভাবে অবহেলায় এসব নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে। উন্নতবিশ্বে যে সকল স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেইসকল স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়, ক্ষয়ে যায় অস্থি-মজ্জা সকল, ঘুণে ধরে বিচূর্ণ হয় ইতিহাসের পাতা। অপূর্ব সকল স্থাপনা আর নির্মাণশৈলী নিয়ে আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচেতে পড়ে আছে অসংখ্য জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীসহ আরও কত স্থাপনা। আর এই সব স্থাপনার কিছু কথা এই বোকা মানুষটার ছেঁড়া খাতায় লিখে রাখার প্রয়াস হল এই “বাংলার জমিদার বাড়ী” সিরিজ।






















"বাংলার জমিদার বাড়ী" সিরিজের আগের পোস্টগুলোঃ

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০১)
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি -বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০২)
মহেড়া জমিদার বাড়ি - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৩)
লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৪)
দুবলহাটি জমিদার বাড়ি - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৫)
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর রাজবাড়ি - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৬ )
তেওতা জমিদার বাড়ী - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৭)
দালাল বাজার জমিদার বাড়ী - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৮ )
দত্তপাড়া জমিদার বাড়ীর খোঁজে - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ০৯ )
ভৌতিক সন্ধ্যায় কামানখোলা জমিদার বাড়ী প্রাঙ্গনে - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১০ )
কালের সাক্ষী - শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১১)
খুঁজে পেলাম 'ইসহাক জমিদার বাড়ী' - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১২)
বলিয়াদি জমিদার বাড়ী - চারশত বছরের ইতিহাস (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৩)
ভুলে যাওয়ার পথে কাশিমপুর জমিদার বাড়ী - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৪)
করটিয়া জমিদার বাড়ী (টাঙ্গাইল) (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৫)
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির খোঁজে (বাংলার জমিদার বাড়ি - পর্ব ১৬)
মুরাপাড়া জমিদার বাড়ীর আঙ্গিনায় (বাংলার জমিদার বাড়ি - পর্ব ১৭)
"ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ী" যেখানে যেতে যেতে রাত হয়ে যায় ;) (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৮)
হাবড়া জমিদার বাড়ী - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ১৯)
ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ী - (বাংলার জমিদার বাড়ী - পর্ব ২০)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:১১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×