আতঙ্কের নাম “ সুন্দরীর বুকে ব্যাথা ”
হিমেল বিকন
শোনা গেল সে এলাকায় এক সুন্দরী এসেছে। সেই থেকেই সে এলাকার ছেলেগুলো ভদ্র ও শান্তশিষ্ট হয়ে উঠল। এলাকার বড় ভাই খালেদ বাবু আর রাস্তায় মারামারি, ঝগড়া-বিবাদ করেন না। গাছে উঠে আম, জাম, বরই চুরি করা মকিত রায়হান আর গাছেই ওঠে না। ক্রিকেট মাঠে বলে বলে ছক্কা পেটানো বাঘা সাদিক আর মাঠেই যায় না। সবাই যেন তাদের নিয়মিত কাজ ছেড়ে হঠাৎই শান্ত হয়ে উঠল। তারা এখন সেই সুন্দরীর বাসার সামের চায়ের দোকানে তপস্যা করে। চা দোকানের রশিদ কাকা এতে খুশি কি বেজার বোঝা যায় না। কিন্তু এলাকার মুরব্বীরা ছেলেপুলের এমন শান্তশিষ্ট ভদ্র আচরনের ভেতর কেমন একটা সুপ্ত অশান্তের স্রোত টের পায়। এরই মাঝে শুরু হলো এক নতুন আতঙ্ক, যার নাম “ সুন্দরীর বুকে ব্যাথা ” ।
এক ভোর বেলায় সুন্দরী বেরিয়েছে তার কোচিং এর উদ্দেশ্যে। পরনে নীল থ্রী পিচ, শীতের জন্য চিকুন সুন্দরীর গায়ে সোয়েটার, অসম্ভব ঠান্ডায় তার সাদা আঙুলগুলো যেন চুপসে গেছে, সাজানো আকৃতির ছোট ঠোটগুলো যেন কাপা কাপা ভাব, কাজলে ঘেরা হরিণ টানা চোখের ভেতর কৃষ্ণকাল মনি জোড়া তার, বাহিরে প্লাস্টিক ফ্রেমের চশমা, সামনে গুটি কয়েক চুল ঝুলানো, পেছনে বাকী চুলগুলো অনভিজ্ঞ হাতে কাকড়া মেরে দেওয়া, পায়ে হিল। অতী দ্রুত হাটে সে, মাঝে মাঝে পা তার কেমন একে বেকে হাটে, হাটার মাঝে সময় দুই মাথাও চুলকায় সে। ফোনে বলছিল সে, আগে পরে কী বলল জানা গেল না। সুন্দরী কথায় কথায় বলে উঠল, “ কী আর বলব! কেমন অসুস্থ অসুস্থ লাগছে। বুকে ব্যাথা ”। হঠাৎই যেন জগৎ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সুন্দরী যেন কিছুই বুঝল না। আর সেই থেকেই শুরু হলো এই আতঙ্ক,” সুন্দরীর বুকে ব্যাথা ”।
কিছু দিন পর শোনা গেল এলাকায় দুই গ্রূপের ভেতর বড় মারামারি হয়ে গেছে। কিন্তু এলাকার বড় ভাইয়েরা কিছুই জানতে পারল না। কেমন যেন মনে হচ্ছে এত দিনে বালকেরা বুঝেছে যে, মারামারি গ্যাঞ্জামের ভেতর সম্মানের কিছু নেই। বরং খানিকটা লজ্জা-অপমান, বোকামী আছে। কিন্তু এতটুকু জানা গেল যে, তাদের মারামারি সুন্দরীর বুকে ব্যাথার কারনে হয়েছে।
কোচিং এ পরীক্ষার খাতা দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরী নিজের খাতা হাতে নিতেই দেখতে পেল তার নামের পাশে কে যেন বিভিষন লিখে কেটে দিয়েছে। সে অবাক হল না। সুন্দরী মেয়েদের সবাই জ্বালাতন করে। কোচিং থেকে ফেরার পথে সুন্দরী দেখতে পেল খালেদ বাবুসহ তার কিছু ছোট ভাইব্রাদারেরা চায়ের দোকানে বসে কি যেন করছে। মনে হচ্ছে বিশিষ্ট্য বুদ্ধিজীবিরা বিশেষ কোনো বুদ্ধি বের করছে। সুন্দরীকে দেখে খালেদ বাবু যেন উচু গলায় ঘোষণা দিচ্ছে, “ সুন্দরীর বুকে ব্যাথা, আমার বুকে সুন্দরীর ব্যাথা “। সুন্দরী যেন কিছুই শুনতে পেল না, সে বাসার গলির ভেতর ঢুকে গেল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার বুকের ব্যাথা যেন মাথায় উঠে গেল। খালেদ বাবু মকিত রায়হানের হাতে কি যেন একটা দিল, ফিসফিস করে কিছু বলল। অতঃপর মকিত রায়হান হেটে এসে সুন্দরীর পেছন পেছন সুন্দরীর বাসার গলিতে ঢুকল। গলিতে ঢুকেই মকিত রায়হান বার কয়েক গান গাইল, “ও সুন্দরী তোমার বুকে কেন ব্যাথা, আমার বুকে সুন্দরী তোমার ব্যাথা ”। এবার সে সুন্দরীকে ডাক দিল। সুন্দরী তার দিকে ঘুরে দাড়াল। মকিত বলল, “ সুন্দরী তোমার বুকে কীসের ব্যাথা? “। সুন্দরী কিছু না বলে ঘুরে চলে যাচ্ছিল। তখন মকিত রায়হান এগিয়ে গিয়ে তার পথ আটকে দাড়াল। মকিত আবার বলা শুরু করল, “ সুন্দরী দেখ তোমাকে প্রথম দিন দেখার পর থেকেই আমার ভেতর কেমন যেন একটা লাগে “। সুন্দরী কিছুই বলল না। মকিত নিজেই আবার বলল, “ সুন্দরী! তোমার বুকে কোথায় ব্যাথা? “
এদিকে গলির বাহিরে চায়ের দোকানে খালেদ বাবু ফুরফুরে মনে গান গাইছেন আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। চায়ের দোকান থেকে সুন্দরী ও মকিত রায়হানের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তাদের কথা বার্তা শোনা ও যাচ্ছে না। খালেদ বাবু রাস্তার মোড়ে মিনহাজ শেখকে দেখে ডাক দিলেন। মিনহাজ শেখ কাছে আসতেই খালেদ বাবু বলে উঠলেন, “ আরে ভায়া মিনহাজ! দেখতো আমার নতুন মোবাইল ফোনটা কেমন হয়েছে ভায়া! ”। মিনহাজ উত্তরে বলল, “ অনেক ভালা হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক দামী ফোন “। হঠাৎই যেন বিকট একটা শব্দ হল, লোক জনের চোখ মুখ কেমন জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল, ইলেকট্রিক তারের উপর বসে থাকা কাকগুলো ঝাপটা মারা শুব্দে উড়ে গেল, শব্দটা প্রতিধ্বনি হতে থাকল। ঠিক তখনই দেখা গেল, মকিত রায়হান কানে মোবাইল ফোন ধরে সুন্দরীর গলি থেকে বের হয়ে অন্য দিকে হেটে চলে যাচ্ছে। খালেদ বাবু দু তিনবার ডাক দেওয়ার পর সে খালেদ বাবুর কাছে এলো। খালেদ বাবু জিজ্ঞাসা করল, “ কি হয়েছে? “ মকিত কিছুই বলল না। হাত সরাতেই দেখা গেল, ছোট সুন্দর হাতের লাল ছায়া মকিত রায়হানের মুখের বা পাশে লেপ্টে আছে। তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সাদা চামড়ার সুন্দর নরম হাতের কোমল চড় খুবই যন্ত্রনাদায়ক হয়। যেন তারই ব্যাখ্যা একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা হয়ে খালেদ বাবুর কাছে এল। মিনহাজ শেখ কেবল মকিত রায়হানের দিকে তাকিয়েই রইল। কিচ্ছুটি বলতে পারল না। মকিত নিজে থেকেই বলল, “ ভাই আমি সত্যি কিছু বলি নি। কেবল আপনার ফোন নাম্বারটা দিতে গেছিলাম ”।
এটা আমার কাল্পনিক গল্প। দয়া করে কেউ আশে পাশের সুন্দরীর সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৩৪