somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা টু ভাসমান পেয়ারার বাজার ভায়া খান জাহান আলীর দেশ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে কম খরচে ভাসমান পেয়ারার বাগান সহ খান জাহান আলীর দেশ ঘুরে আসা। তা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করি...।

কই ঘুরতে যাবো না যাবো এসব ভাবতে ভাবতে বন্ধু আকিব সাজেস্ট করলো চল ভাসমান পেয়ারার বাগান থেকে ঘুরে আসি। ঈদের আগে হওয়ায় আর তেমন কাউকে পাওয়া গেলো না। অগত্যা দুইজনেই ভাসমান পেয়ারা বাগান দেখতে বের হয়ে পরলাম। আমার আবার স্বভাব ট্যুর দেয়ার আগে যতটা সম্ভব ইনফরমেশন কালেক্ট করা। যাই হোক ভাসমান পেয়ারার বাগান দেখা একদিনের ব্যাপার ভাবলাম ঝালকাঠি থেকে বাগেরহাটের দুরুত্ব খুব বেশি না। চাইলেই এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়। এর সাথে বোনাস হিসাবে পেতে পারেন শতবর্ষী প্যাডেল ষ্টীমার।

আমরা ভাসমান পেয়ারার বাগানে যাওয়ার আগে যেই প্রবলেমটায় পরি সেটা হইলো, এখানে যাওয়ার অনেকগুলো অল্টারনেট আছে তাই কোন রুট ধরে গেলে ভালো হবে সেটা ফিক্সড করা একটা প্যারা হয়ে দাড়ায়। আপনি চাইলে অনেকভাবেই যেতে পারেন ভিম্রুলির পেয়ারার বাগানে। তবে আমার মনে হয় দুইটা রুট সবচেয়ে বেস্ট হয় ভাসমান পেয়ারার বাগানে যাওয়ার জন্য।

রুট ১
ঢাকা থেকে ষ্টীমারে বা লঞ্চে সোজা বরিশাল। তবে আমার মনে হয় ষ্টীমারে গেলেই ভালো তাহলে আপনি একদম সকাল ৫-৬ টায় বরিশাল লঞ্চ ঘাটে পৌছাবেন। লঞ্চে গেলে আগে পৌছাবেন তখন এমনেতেই বসে থাকতে হবে। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে আপনি অটো তে করে যাবেন নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড এ। নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে অনেক মাহিন্দ্রা(সিএনজির আর একটা ভার্সন আর কি) পাবেন সেগুলো তে উঠে পড়ুন বানারিপাড়ার উদ্দেশে, সময় লাগবে কম বেশি ৩০-৪০ মিনিটের মত। আপনার মনে হবে আপনি উড়ে যাচ্ছেন। রাস্তা একদম ভালো। বানারিপাড়া নেমে অটোতে করে যাবেন কুরিয়ানা বাজার। বানারিপাড়া থেকে অটোতে করে একটু ভিতরে আসলেই দেখতে থাকবেন পেয়ারা আর আমড়ার বাগান শুরু। ২০ মিনিটেই কুরিয়ানা বাজার ঘাটে পৌঁছে যাবেন। এখানে এসে ট্রলার ভাড়া করুন, যে ভিম্রুলি যাবেন। পড়বে ৫০০-৮০০ টাকা আসলে যার থেকে ওরা যা নিয়ে পারে। কুরিয়ানা হাট বার থাকলে নৌকার হাট দেখতে পাবেন। তাই ইচ্ছা থাকলে কি কি বার হাট বসে জেনে যাবেন। কুরিয়ানা থেকে ট্রলারে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মত ভিম্রুলি যেতে এর মধ্যেই আপনি আটঘরা ভাসমান বাজার হয়ে যাবেন। কুরিয়ানা থেকে ভিম্রুলির যাওয়ার খাল টা অদ্ভুত রকম সুন্দর। মানুষ-জন না দেখলে আপনার ফিল হইতে পারে সাজানো সুন্দরবনে চলে এসেছেন। এই রুটে গেলে আপনি ১২ টার মধ্যেই কুরিয়ানা, আটঘরা ও ভিম্রুলি ঘুরে দেখতে পাবেন।

রুট ২
ঢাকা থেকে ষ্টীমারে ঝালকাঠি লঞ্চ ঘাটে নামবেন। ষ্টীমার ঝালকাঠি ঘাট নেয় সকাল ৮ টায়। নেমে হালকা নাস্তা করে পাশের ট্রলার ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে যেতে পারেন বা অটোতে করে ভিম্রুলি যেতে পারেন। আমার মতে ট্রলারে না যাওয়াই ভালো। অটোতে ভিম্রুলি জনপ্রতি ৩০ টাকা করে সময় লাগবে আধ ঘন্টা সেখানে ট্রলারে সময় তো বেশি লাগবেই আর লোক গুলা টাউট। তারপর ও আপনারা ট্রলারে যাইতে যাইলে কথা বলে নিবেন। আমরা ভাড়া করছিলাম ১২০০ দিয়ে। ট্রলারে সময় লাগবে কম বেশি এক থেকে দেড় ঘন্টা। ট্রলার নিলে আপনি বাগানে ঢুকার জন্য আবার আপনার ছোট নৌকা ভাড়া করতে হবে। এইখানে বিকল্প আছে যেটা আমার মনে হয় না কেউ জানে সেটা হইলো ‘ফ্রেন্ডস পার্ক এন্ড পিকনিক স্পট’ নামে একটা প্রতিষ্ঠান ৩০০ টাকার মাধ্যমে আপনাকে ঝালকাঠি সাধনার মোর থেকে অটোতে করে ভিম্রুলি নিয়ে আসবে এবং পেয়ারার বাগান ঘুরিয়ে দেখাবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে আটঘরা কুরিয়ানা যেতে আবার ট্রলার ভাড়া করতে হবে। ভাড়া পড়বে ৩০০-৪০০ টাকা।

এই দুই রুট প্ল্যান ছাড়া আপনি আরো অনেক ভাবেই ভাসমান পেয়ারার বাগান দেখতে পারেন তবে আমার মনে হয় বানারিপারা হয়েই আসলে সব চেয়ে কম খরচে সুন্দরভাবে ভাসমান পেয়ারার বাগান দেখতে পাবেন। ভিম্রুলি আসলে যেটা মিস করবেন না সেটা হইলো বৌদি হোটেলের খাবার। এখানে গরম লাল সাদা মিষ্টির স্বাদ অনেকদিন আপনার মুখে লেগে থাকবে। আর নৌকা নিয়ে যখন পেয়ারার বাগান ঘুরবেন মনে হবে আপনি রাতারগুল আছেন।
বানারিপারা হয়ে আসলে আবার বানারিপারা হয়ে ব্যাক করলে যাওয়ার সময় আপনি গুটিয়া মসজিদ আর দুরগাসাগর দীঘি দেখে যেতে পারবেন। গুটিয়ার বিখ্যাত সন্দেশ র টেস্ট নিতে ভুল্বেন না। এর পর বরিশাল সহরে এসে যেকোন একটা মধ্যম মানের হোটেল নিতে পারেন ভাড়া পড়বে কম বেশি ৪০০-১০০০ টাকা।

২য় দিন সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠে প্রথম ট্রিপ ধরার ট্রাই করবেন(সম্ভব হলে আগের দিন খবর নিয়ে রাখবেন প্রথম ট্রিপ কখন)। বি আর টি সি বা ধানসিঁড়ি পরিবহনে করে ডিরেক্ট বাগেরহাট যেতে পারবেন। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। যাওয়ার সময় আপনি ঝালকাঠি পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাট পৌছাবেন। ধানসিঁড়ি পরিবহন এর খুব নাম ধাম শুনছিলাম কিন্তু হতাশ হইতে হইছে এদের স্টাফদের ব্যাবহার দেখে। যাই হোক আপনি ফার্স্ট ট্রিপ ধরতে পারলে ১০ টার মধ্যে বাগেরহাট পৌছাবেন। আপনি চাইলে আটো রিসার্ভ করে ষাট গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার, বাগেরহাট জাদুঘর, ঠাকুর দীঘি, পচা দীঘি, ঘোড়া দীঘি সহ দশ গম্বুজ মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, ছয় গম্বুজ মসজিদ, এক গম্বুজ মসজিদ, জিন্দা পীরের মাজার, বিবি বেগনি মসজিদ ও চুনাখোলা মসজিদ দেখতে পারেন। মসজিদ গুলো দেখতে অসম্ভব রকম সুন্দর। আর কাঠামো প্রায় কাছাকাছি। স্থাপনা গুলা সব শহরের ৭-৮ কিলোর মধ্যেই অবস্থিত তাই বিকালের মধ্যেই আপনার এগুলো দেখা শেষ হয়ে যাবে। অটো রিসার্ভ না করে চাইলে এমনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে শেয়ারড অটো তে ও ঘুরে দেখতে পারেন। নামগুলো মনে রাখুন যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে।
চাইলে আপনি রাতে বাগেরহাট থেকে বাসে ঢাকা ফিরতে পারেন বা পিরোজপুর হুলারহাট হয়ে লঞ্চে ঢাকা আসতে পারেন।

খরচঃ
সদরঘাট থেকে ষ্টীমারে বরিশাল ডেকে ভাড়া ২০০ চাইলে কেবিন ও নিতে পারেন সহজ ডট থেকে। বরিশাল থেকে নথুল্লাবাদ শেয়ারড অটো তে ১০ টাকা। নথুল্লাবাদ থেকে বানারিপাড়া মাহিন্দ্রা তে ৪০ টাকা। বানারিপারা থেকে কুরিয়ানা ২০ টাকা অটোতে। এর পর ট্রলার ভাড়া ডীপেন্ড করবে আপনি কত দিয়ে ভাড়া করেন।
বরিশাল থেকে বাগেরহাট ভাড়া ১৫০-২০০। অটো রিসার্ভ করলে পাঁচ ছয় ঘন্টার জন্য ৪০০-৫০০ লাগবে। আর বাগেরহাট থেকে পিরোজপুর সদর ভাড়া ৪০ টাকা। পিরোজপুর থেকে অটো তে হুলারহাট লঞ্চ ঘাট ভাড়া ২০ টাকা।

বি দ্রঃ আমরা মানুষের ফালতু খবর দেখে গিয়ে ভাসমান পেয়ার বাজারের আসল সৌন্দর্য দেখতে পাই নাই। আপনারা গেলে অবশ্যই হাটে একদম সকাল সকাল যাবনে। তখন ই হাটে রাশ থাকে।

হ্যাপি ট্রাভেলিং।


















সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×