লোভ, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকি.....
নবারুণ ভট্টাচার্যের একটা কবিতার কয়েকটি লাইনঃ-
“আজ্ঞাবহ দাস, ওরে আজ্ঞাবহ দাস
সারা জীবন বাঁধলি আঁটি,
ছিঁড়লি বালের ঘাস,
আজ্ঞাবহ দাসমহাশয়, আজ্ঞাবহ দাস!
যতই তাকাস আড়ে আড়ে,
হঠাৎ এসে ঢুকবে গাঁড়ে,
বাম্বু ভিলার রেকটো–কিলার,
গাঁট–পাকানো বাঁশ,
আজ্ঞাবহ দাস রে আমার, আজ্ঞাবহ দাস।”
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই সবখানেই ‘ক্ষমতা’ দেখানোর চেষ্টা করেন৷ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে এই প্রবণতা বেশি৷
জবাবদিহিতা না থাকায় এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷ আবার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাবের জন্যও এই প্রবণতা বাড়ে৷ তবে দম্ভ দেখানোর মানুষ খুব বেশি না৷
ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দম্ভ দেখানোর অভিযোগের খবর সবচেয়ে বেশি৷ বিশেষ করে যখন যে সরকার ক্ষমতায় সেই সরকার সমর্থক ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধেই এই ধরনের ক্ষমতা দেখানোর অভিযোগ বেশি৷ আবার যেনো তেনো প্রকারে প্রত্যাশার চাইতে বেশী কাচা টাকার মালিক বনে গেলেও ক্ষমতা প্রদর্শনের আস্ফালন বেড়ে যায়। আর শুধু ছাত্রনেতা নয়৷ পাড়ার গুন্ডা মাস্তান চাঁদাবাজ সব অপপেশার মানুষের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ৷
"তুমি তোমার ক্ষমতাকে গোপন রাখো। গোপনেই তা মানুষের কল্যানে ব্যায় করো। যা দেখিয়ে বেড়াচ্ছো তা আমার পোষা কুকুরও দেখাতে পারে। সাত পুরুষের জমানো কড়ি দিয়ে যা কিনেছি তা ছেড়ে দেব, অথবা আমাকে দমিয়ে রাখা যাবে এ কল্পনা করার মত নির্বোধ কেন তুমি?"- ফেসবুকে আমার একটা লেখার অংশ বিশেষ।
"খালি কলসি বাজে বেশী"।
ভরা কলস বাজে না। প্রকৃত জ্ঞানী গুণী, ভালো মানুষ নিজের ঢোল নিজে পেটায় না। প্রকৃত শিক্ষায় মানুষকে বিনত করে। নম্র করে। ভরাট ও স্থিতধী করে। নিজেকে জাহির করার প্রবৃত্তি থাকে না কোনো প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের। মানুষ আমৃত্যু শিক্ষার্থী। অনুক্ষণ জীবন ও প্রকৃতি আমাদের শিক্ষা দিয়ে চলেছে। সেই পাঠ গ্রহণ করলে আমরা কি ছোট হয়ে যাই? কিন্তু মানুষ সর্বদা নিজেকে বড় করার এক অদম্য প্রতিযোগিতায় ছুটে চলেছে। একটু সুযোগ পেলেই 'আমি শ্রেষ্ঠ, আমি মহান মানব দরদী'- নানান উছলায় তার অলিখিত নিজেই প্রচার করতে উঠেপড়ে লাগি। ছলে বলে কৌশলে যতক্ষণ না অন্যকে ছোট করে নিজেকে বড় প্রমাণিত করতে পারছি- ততক্ষণ শান্তি নেই আমাদের।
"আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।
বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার
সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে
বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।"- হরিশচন্দ্র মিত্রের লেখা 'বড়ো কে' নামের এই ছড়া কবিতাটি শিশু শ্রেণী পড়েছি।
তবে আমার কিন্তু ছোট হতে বেশ লাগে।
আমি সত্যি সত্যিই সবার বিনত শিক্ষার্থী। কত কিছু যে শেখার আছে পৃথিবীতে। বিশেষ করে একেকজন মানুষ যে সত্যিই কী গভীর জ্ঞানের সমুদ্র! বিস্ময় লাগে। অথচ তাঁরা কত শান্ত, অবারিত। কত নিরহংকার। এ-প্রসঙ্গে প্রয়াত সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া, ডক্টর এমাজউদ্দীন স্যারের নামটা মনে আসছে। কী তাঁদের পান্ডিত্য! কী পড়াশোনা! অথচ কী নিরহংকার! এরকম আরও অনেক অনেক মানুষ রয়েছেন। যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
হজরত মুহম্মদ (সাঃ) উহুদে লুন্ঠিত এবং লাঞ্চিত হয়েছিলেন। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট ৩২ বছর বয়সে ইহলোক ছাড়েন। আর চেংগিস খান! যিনি বাগদাদ ও বসরায় মাত্র দেড় ঘন্টায় ১৭ লক্ষ সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যা করেছিলেন, তিনি মরেছেন তার সবচে প্রিয় এবং বিশ্বস্ত ঘোড়াটির পিঠ থেকে পরে। নমরুদ মরেছিল ক্ষুদ্র একটি মশার কারণে। তাই বলি, ক্ষমতা দেখিও না। লোভ, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকো।
এসবের ফল ভালো হয় না।
সবার জন্য শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



