মুখরা রমনী বশিকরণ মন্ত্র.....
আমাদের বাড়ির দুই দিকে আমার দুই চাচা, দুই ফুফুর বাড়ি পাশাপাশি। আবার আমার দুই মামাদের বাড়িও অনতি দূরে। আমার বারো বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের যৌথ পরিবারে আমার বড়ো হওয়া। আমার যখন দশ বছর বয়স তখন আমার ফুফাতো বোনের বিয়ে হয় ততকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার কোটালিপাড়া থানার কুশলা ইউনিয়নের এক বনেদী পরিবারে। বর-কনে উভয় ঢাকা শহরের বাসিন্দা হলেও রেওয়াজ অনুযায়ী বরের গ্রামের বাড়িতেও মহা ধুমধামে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছিল। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিলো। আমরা শতাধিক স্বজন আপাকে (ফিরতি নাইওর) আনতে যাই গোপালগঞ্জে।
তখন ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ-কোটালিপাড়া যাতায়াত করা ছিলো বিরাট ঝক্কির ব্যাপার। বরিশাল ও ঢাকা থেকে রিজার্ভ বাস, মাইক্রোবাস, কার বহর নিয়ে সকালে যাত্রা করে গোপালগঞ্জ- কোটালিপাড়া পৌঁছাতে রাত আটটা। তারপর বেশ কিছুটা পথ হেটে কুশলা চৌধুরী বাড়ি পৌঁছাতে হয়েছিলো। তখন ঐ এলাকায় কারেন্ট ছিলনা। ৩০/৪০ মিনিটের হাটা পথ পুরোটাই ৪/৫ টা হ্যাজাক লাইট আর পাঁচ ব্যাটারি টর্চ লাইট জ্বালিয়ে বর পক্ষ নিয়ে যায়।
আমাদের সাথে অন্যান্য মালপত্র ছাড়াও পাঁচ মন রসগোল্লা ছিলো। রসগোল্লা নিয়ে আসা হয়েছিল বরিশালের বিখ্যাত "গরবরান" নামের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান থেকে। হাটা পথে সকল ভাড়ী মালপত্র এবং মিষ্টির হাড়িগুলো আমাদের মতো কিশোর তরুণদের হাতে দেওয়া হয় বয়ে নেওয়ার জন্য। আমি ছোট তাই আমার হাতে কোনো লাগেজ দেওয়া হয়নি। মিষ্টির হাড়িও দেয়নি কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই একটা মিষ্টির হাড়ি নিজ হাতে বয়ে নেই। তখন শীতকাল ছিলো। হ্যাজাক লাইট আর অনেক গুলো টর্চ লাইটেও কুয়াশায় ১৫/২০ ফিট সামনে দেখা যেতো না...পথ চলতে চলতেই আমি গোটা দশেক রসগোল্লা খেয়ে ফেলি। আমার ইমিডিয়েট বড়ো তিন কাজীনদের ফুসলিয়ে মিষ্টি খাওয়াই যাতে আমি একাই ধরা না খাই.....
বিয়ে বাড়িতে যাওয়া কণে পক্ষের বিশাল বহরে আমিই কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলাম। আপার অনেক জন ননদ ননদিনী সবাই বয়সে বড়ো- কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট। যখন আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই তার কিছুদিন আগেই আমার মাথা ন্যাড়া করা হয়েছিল!
একেতো আমি ছোট তার উপর আমার মাথা ন্যাড়া। আমার বিয়াইনরা আমাকে পেয়ে বসে। সারাক্ষণ আমাকে ক্ষেপায়। একজন বিয়াইন আমার মাথায় টোকা দিয়ে সুর মিলিয়ে বলে, "নাইড়্যা মাথায় কাউয়ার মল, টাক দিলে যায় বরিশাল"! এর সাথে অন্যসব বেয়াইনরাও আমার মাথায় টোকা দিয়ে সুর করে কোরাস কণ্ঠে "নাইড়্যা মাথায় কাউয়ার মল, টাক দিলে যায় বরিশাল"- বলে আমাকে ক্ষেপাতে থাকে....
কিছুক্ষণের জন্য আমি দমে যাই!
পরক্ষণেই বুদ্ধি করে বলি- "যে আমার মাথায় টোকা দিয়ে ওইসব পচা কথা বলবে- সে আমার বৌ হবে!"
আমার বলা মন্ত্র কাজে লাগে। আমাকে নিয়ে কেউ আর ছড়া কাটে না.... কারণ, এই ন্যাড়ার বৌ হতে কেউ রাজী না!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



