আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত হই। ক্রিকেটারদের সাফল্যের বয়ান গাইতে পিছপা হই না। আবার সাধারণ ব্যর্থতাতেও ক্রিকেটারদের যে বিষোদগারের সম্মুখীন হতে হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে প্রকৃত জিনিসটি এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের গায়ে তকমা হিসেবে লাগতে পারেনি তা হলো-ক্রিকেটারদের স্বাভাবিক নৈপুণ্য প্রদর্শনের ধারাবাহিকতা। কোনো বড় দলকে হারালে এখনো সেটা আমাদের কাছে দৈবাৎ বা "বড় দলের পচা শামুকে পা কাটা"র মতোই মনে হয়। কারণ বড় দলকে হারিয়ে গৌরবান্বিত ক্রিকেট টিমের ভেতরে যে স্পৃহা,জয়ক্ষুধা এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার প্রয়োজন থাকা দরকার ঠিক সেই জিনিসটাকেই পরবর্তী সময়ে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যে ব্যাটসমান এক ইনিংসে বড় রান করেন, পরবর্তী সময়ে তিনিই ডাক মারতে মারতে হয়রান হয়ে যান বলা যায়। ধারাবাহিক ভালো খেলার মনোভাব এখনো গড়ে ওঠেনি আমাদের ক্রিকেটারদের মানসিকতায়।
নৈপুণ্য বা অর্জনের বিচার করতে বসলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অপ্রাপ্তিটাকেই বড় বলে মনে হয়-এবং সেটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রকৃত অবস্থান। এটা মনে রাখা দরকার যে, জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কিম্বা ওয়েস্টিন্ডিজের তৃতীয় সারির একটা দলের সাথে ম্যাচ জিতে অথবা এই সারির কোনো দলের কাছে সিরিজ জিতে বাংলাদেশের গৌরবের ঢেঁকুর তোলার সুযোগ আর নেই। এটা ছিলো এক দশক আগের ঘটনা। এখন জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, ওমান মানের যে কোনো দলকে বাংলাদেশ অনায়াসে হারাবে তো বটেই বরং অস্ট্রেলিয়া-ভারত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা সমমানের দলগুলোকেও তটস্থ রাখার মতো ক্ষমতা অর্জন, প্রদর্শন করার সফলতা অর্জন করতে হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অথচ হয় উল্টোটা। গত বিশ্বকাপ এবং গত টি টুয়েন্টি কাপে পুনরায় আয়ারল্যান্ড এবং কানাডার মতো নন-টেস্ট ট্যাস্টাস এবং আই সি সি'র সহযোগী সদস্য দেশের কাছে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের। এর কোনো অজুহাত চলে না। যেখানে ভালো দলগুলোর বিরুদ্ধেও বাংলাদেশের পরাজয়ে দলের পারফরমেন্সে নৈপুণ্যের সার্বিক ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে সেখানে আয়ারল্যান্ডের মতো, কানাডার মতো চুনোপুঁটির কাছে রাঘব বোয়াল বাংলাদেশের উল্টো খাবারে পরিণত হওয়ার ব্যাপারটা কোনো তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণেই যেন মিলতে চায় না। কারণ এ ব্যর্থতা বড় লজ্জার,বড় অনুশোচনার। তেমন অনুশোচনার বিষয় বর্তমানে শেষ হওয়া তৃদেশীয় আইডিয়া কাপের চরম হাতাশা জনক ফলাফল।
ক্রিকেটারদের জীবনমান উন্নত হয়েছে, তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স স্ফীত হয়েছে- কিন্তু খেলার মান উন্নত হয়নি। অতীতে দেখেছি- বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে যে দলের ক্ষুদ্র দলের কাছে অনায়াস মাথা নোয়ানো, অতঃপর বিদায় এবং সাবেক ক্রিকেটবোদ্ধাদের সমালোচনার আগুনে পুড়ে ক্যাম্প বর্জনের মতো অনাকাঙিক্ষত আচরণের ঘটনাও ঘটেছিল। সেখানে কি তাদের দাম্ভিকতাই প্রকাশ পায় না? সাফল্যে তারা যদি অকুণ্ঠ প্রশংসাবাণীকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন তবে ব্যর্থতায় কেন সমালোচকের প্রতি বিপরীত সমালোচনা এবং ক্যাম্প বর্জনের হুমকির মতো ধিক্কারজনক ঘটনা? মাত্র কিছু দিন আগে স্বদেশের মাটিতে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজে বাংলাদেশের টাইগারদের মিউ মিউ ভাব দেখে সত্যি করুনা হয়!
আমাদের দেশের ক্রিকেটের উন্নতি নাহলেও-ক্রিকেটারদের ভাগ্যের বদল হয় দিনে দিনে। ক্যাপ্টেন কিম্বা অন্য খেলোয়ারও বদল হয় প্রায় নিয়মিত বিরতিতেই। তামিমুলের পরিবর্তে সাকিবুল আসে। সাকিবুলের পরিবর্তে মুমিনুল আসে, মাহমুদুলের বদলে যিনি আসেন-তিনি তার যোগ্যতায় 'মাশরাফুল' কিম্বা 'সাকিবুল' হয়ে যোগ্যতার মানদন্ডে একই স্থানে অবস্থান করেন-এটাই যদি হয় আমাদের ক্রিকেটের উন্নতি- তাহলে বলার কিছু নেই।
ক্রিকেট আমাদের স্বপ্ন, ক্রিকেটার সেই স্বপ্নের নায়ক। তাদের কাছ থেকে সব সময় নায়কোচিত আচরণই প্রত্যাশিত। তাদের সাফল্যের জন্য সব সময়ে প্রার্থনা করে দেশের মানুষ। কেবলই অধিনায়কের আসনে কিছুদিন পর পর নতুন মুখের আমদানি তেমন নয় বরং ক্রিকেটারদের মানসিকতায় অদম্য শক্তি তৈরি করতে হবে, আনতে হবে জয়ক্ষুধা, জানতে হবে ধারাবাহিকতার মূলমন্ত্র। তবেই বোধহয় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের কাছে অস্ট্রেলিয়া-ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কার পরাজয়কে আর দৈবাৎ বলে মনে হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। সময় হয়েছে ক্রিকেটের আদুভাইদের বিদায় করে নতুনদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার।
অটঃ আমাদের ক্রিকেট মানের ক্রমবর্ধমান নিম্নগামীতা দেখেই এমন একটা লেখা লিখতে হলো।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০