ছবিসুত্রঃ পিন্টারেস্ট।
কিছু বিকেল আসে তীব্র বিষণ্ণতা নিয়ে। শেষ বিকেলের রক্তিম আভায় দুঃখ গুলোকে মনে হয় গ্যাস বেলুনে উড়িয়ে দিই। টুপ টুপ করে ঝড়ে পড়া শিশির বিন্দু কাশফুলের ডগায় আলতো করে ব্যথার পরশ বুলিয়ে দেয়, সেই শিশিরের ভেজা অনুভূতি কারো হৃদয়ে হাহাকার তুলে দেয় একান্তই আপনার কারো জন্য। মনে হয় এই বিকেল এর ধূসর বিষণ্ণতা শ্যাম্পেন এর বুদুবুদ এর সাথে একাকার হয়ে যাক। কিন্তু নীল অপরাজিতার মত চুপটি করে হৃদয়ের গহীনে কিছু ব্যথা জমে থাকে। আদতে কিছু হাহাকার পুষে রাখতে হয় আয়নায় লাগানো টিপের মত। পলাশ রাঙ্গানো রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে বহুবার আমি তীব্র অভিমান ভুলে আকাশপানে ভালবাসা বিলিয়েছি।
এই যে তীব্র আলোর ঝলকানি চারদিকে, ট্রেনের হুইসেল, অথচ ফেরার তাড়া নেই। কারণ এই ট্রেন এখন অন্যমুখি। এভাবেই ধীরে ধীরে কখন আমাদের জীবনের গতিপথ বদলে যায় আমরা টের পাই না, হয়তোবা পেতে চাই না। আমরা আমাদের মত ভাবতে পছন্দ করি কিন্তু জীবনের হিসেব অন্য। দিনশেষে অপেক্ষা আর উপেক্ষার দোলাচলে সবকিছু গুলিয়ে যায়। সন্তানের জন্য মায়ের অপেক্ষা, কিংবা হাসপাতালের করিডোরে বাবার ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চাহনি, ভাইয়ের অক্সিমিটার এ তাকাতে গিয়ে দম আটকে আসা । এই বুঝি কিছু হয়ে গেল, সবই ভালবাসা। তবু কোথাও না কোথাও আমরা হেরে যায়। হয়তোবা হেরে যেতে হয়। খুব ভালবাসার কারো সাথে হারাতেই বোধহয় একধরণের জিত লুকিয়ে থাকে। কিংবা হার জিতের প্রশ্নই এখানে অবান্তর।
প্রিয়তম, তুমি কেমন আছো?
ভেবো না এটা কোন চিঠি না। এটা আমার একান্তই এলোমেলো কিছু অনুভূতি। শেষ যে বার চিঠি নিয়ে তুমি খুব বিরক্ত হলে, তারপর আর কখনো তোমাকে চিঠি দেয়ার ইচ্ছে হয়নি, খামবন্দী করে ফেলে রেখেছি। কিন্তু নতুন বছরে খুব ইচ্ছে হল রংধনু রঙে একটা চিঠি হোক এবার। দেখো, হয়তোবা তুমি চাওনি বলে ঈশ্বর ও চায়নি। এখন তো শুধু অপেক্ষা ........
এই তো কয়দিন আগেও ভাবছিলাম, আমাদের দেখা হোক কুয়াশা ভেজা শান্ত, বুনো ফুলের মাদকতায় ভরা লন্ডন ব্রিজে। হয়তোবা আমাদের দেখা হোক শেষ ট্রেনে। বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে নাহয় আরেকবার আমার ছণ্ণছাড়া জীবন গতি খুঁজে পেত। খুব ইচ্ছে হত শিউলি কুড়াতে গিয়ে একটা ভোর কুড়াই দু'হাতে তোমার সাথে। সে আর হয়ে উঠেনি ।
হলিউড, বলিউড না ; দেরিদা, ফুঁকো, সিডনি শেলডন থেকে শুরু করে সাদাত হোসাইন হয়ে আমরা আবার হুমায়ূন আহমেদ এই থামতাম। সেসব এখন বাকির খাতায় পড়ে গেল। আমাদের তথাকথিত কোন ভ্যালেন্টাইন্ কিংবা ফাল্গুন নেই। কিন্তু আমার লেপ্টে যাওয়া কাজল জানে কতবার শহীদ মিনার পার হতে গিয়ে আমি আমূল কেঁপে উঠেছি। প্রতিটা আঠা ছেড়ে দেয়া টিপ জানে, প্রতিটা শ্বাস- প্রশ্বাস এ তুমি কতটা কাছের ছিলে।
অন্য অনেকের মত তোমার গল্প, কবিতার কোথাও আমি নেই। নাইবা থাকলাম, আমার গল্পজুড়ে বরং তুমিই থাকো।
জীবন বোধহয় অতিমাত্রায় নাটকীয়তা পছন্দ করে। নাহলে, এমন কেন হবে বলতো? ঝুম বৃষ্টিতে বহুদিন ব্যঙের ঘ্যানর ঘ্যানর শুনতে শুনতে চা'য়ের কাপ নিয়ে বসা হয়নি। এই সেদিন ও হলো না। এক কাপ চা'য়ের জন্য এতটা হাহাকার জমে যাবে আমি কখনো ভাবি নি।
জীবনে কখন কি ঘটে যায় আমরা কেউ জানি না। তবু ও আমরা স্বপ্ন দেখি। কোন চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ এ আমি যেতে চাই না। এ শহর কিংবা অন্য কোন শহরের হ্যালোজেন এর আলোয় এক কাপ চা'য়ের আবদার তুমি পুষিয়ে দিও।
আবার নাহয় কোন জ্যোৎস্না মাখা সন্ধ্যায় শার্টের হাতা গুটিয়ে দিতে গিয়ে তোমায় ছুঁয়ে দিব। বহুদেশ পরে তুমি ভালো থেকো।
যখন কিছুই করার থাকেনা, অভিধানে একটা শব্দ শুধু আলগোছে থেকে যায়, অপেক্ষা.....
সেই অপেক্ষার নোনা ব্যথার ওপারে তুমি ভালো থেকো,
তুষার শুভ্র কন্টকাকীর্ণ সমস্ত পথ পেরিয়ে নিজেকে শুদ্ধতম মানুষ হিসেবে গড়ে তোল।
ভাল থেকো প্রিয়।
সেদিনের মত আবারো বলছি.... পরাহত জীবনের কোন এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আবারো হাতে হাত রাখার আহবান জানাবে কি ??
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:১৮