somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবচেয়ে বড় জাহাজ গুলো (পর্ব ৩)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবচেয়ে বড় কন্টেইনার আর বাল্ক ক্যারিয়ারের পর আবার হাজির হলাম বড় জাহাজ নিয়ে। আজ কথা হবে ট্যাংকার নিয়ে। তেলবাহী ট্যাংকার।
সমুদ্রপথে তেল পরিবহনে ট্যাংকারের গুরত্ব অপরিসীম। মূলত পাইপলাইনে এবং ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল পরিবহন করা যায় তবে ট্যাংকারে পরিবহন অনেকটাই সস্তা। ট্যাংকারে করে তেল পরিবহনের কারনে সবচে বড় রুটে তেল পরিবহনেও তেলের দাম গ্যালন প্রতি মাত্র ২ থেকে ৪ সেন্ট বৃদ্ধি পায়। (১ গ্যালন=৩.৮ লিটার)


বড় জাহাজের ইতিহাসে ট্যাংকার জাহাজ খুব গৌরবজনক সময় পার করে এসেছে কারন এখন পর্যন্ত মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় জাহাজটি ছিল একটি তেলবাহী ট্যাংকার যা ২০১০ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়।
যদিও জাহাজটি এখন অতীত তবু আগে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক।
অনলাইনে আপনি worlds largest tanker লিখে সার্চ করলে অনেকগুলো ফলাফল পাবেন। সবচেয়ে বেশি পাবেন নিচের নামগুলো Knock Nevis, Seawise Giant, Happy Giant, Jahre Viking.



কিন্তু মজার ব্যাপার হল সবগুলো নামই একই জাহাজের। বিভিন্ন সময়ে মালিকানা বদল হয়ে এই নাম ধারন করেছিল ইতিহাসের সবচে বড় এই জাহাজটি।
জাহাজটি এতটাই বড় ছিল যে অনায়াসে ৪ টি ফুটবল মাঠ তাতে এঁটে যেত। বিশাল
মোমেন্টামের কারনে একে থামাতে হলে প্রায় সাড়ে ৫ মাইল আগে থেকেই ইঞ্জিন বন্ধ করা লাগত।


এর দৈর্ঘ্য ছিল ৪৫৮. ৪৫ মিটার অর্থাৎ প্রায় অর্ধ কিলোমিটার। প্রস্থ প্রায় ৬৮.৮ মিটার। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং (দৈর্ঘ্য ৪৪৩ মিটার) এবং পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের (দৈর্ঘ্য ৪২৪মিটার) সাথে তুলনা করে চলে তার।


জাহাজটির প্রথম নাম ছিল SEAWISE GIANT. দৈত্যাকার আকারের জন্য প্রথম থেকেই এই নামে পরিচিত হয় সে। Sumitomo Heavy Industries জাহাজটি তৈরির কাজ শুরু করে ১৯৭৯ সালে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে জাহাজটি তার প্রকৃত গ্রীক মালিকের কাছে হস্তান্তরের আগেই মালিক দেউলিয়া হয়ে যায়। শিপইয়ার্ড তারপর জাহাজটি বিক্রি করে দেয় হংকং ভিত্তিক জাহাজ কোম্পানি OOCL এর কাছে। জাহাজটির ধারন ক্ষমতা তখন ছিল ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টন। OOCL জাহাজটিকে গ্রহন করার আগে মডিফাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। সামনের দৈর্ঘ্য আরও কয়েক মিটার বাড়িয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৮৭০০০ টন ধারণক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করে। তৈরি হয় ইতিহাস।


১৯৮১ সালে এই দৈত্য ৫,৬৪,৭৬৩ টন ধারন ক্ষমতা নিয়ে সমুদ্রে নামে। সবকিছু ঠিকমতই চলছিল কিন্তু ১৯৮৬ সালে ইরান ইরাক যুদ্ধে মিসাইলের আঘাতে ইরানের খারগ দ্বীপের কাছাকাছি অগভীর জলে নিমজ্জিত হয়।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৮৮ সালে নরওয়েজিয়ান শিপওনার আন্দ্রেস জাহরে জাহাজটিকে উদ্ধার করে ভাসিয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত Keppel Shipyard এ নিয়ে আসেন। ১৯৮৯ সালে নরওয়ের মালিক জাহাজটির নাম রাখেন Happy Giant.


পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে সমুদ্রে ভাসার আগে মালিকের নাম অনুযায়ী তার নাম হয় Jahre Viking. ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই নামেই টানা সার্ভ করে জাহাজটি।


২০০৪ সালে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ফার্স্ট ওলসেন ট্যাংকার জাহাজটি কিনে নেয় এবং একে একটি ভাসমান স্টোরেজ আকারে কনভার্ট করে।
নতুন নাম করন করা হয় Knock Nevis. এরপর কাতারে অবস্থিত আল শাহীন তেল ক্ষেত্রের কাছেই স্থায়ী নোঙ্গর করা অবস্থায় জাহাজটি অবস্থান করতে থাকে।


২০১০ সালে ভারতীয় জাহাজ ভাঙ্গার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে জাহাজটি স্ক্র্যাপ করে।


হংকং মেরিটাইম জাদুঘরের সামনে তার নোঙ্গরটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়া হয়েছে।

জাহাজটি স্ক্র্যাপ করার পর সবচেয়ে বড় ট্যাংকারের তালিকায় একসাথে চলে আসে ৪ টি জাহাজ। তারা ৪ বোন।


TI Asia


TI Europa


TI Oceania


এবং TI Africa.
এবার আসছি বর্তমান বিশ্বের সবচে বড় ট্যাংকারগুলোর গল্পে।
সিস্টার ভেসেল এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাহাজগুলোর গঠন বৈশিষ্ট্য হুবহু একই থাকে। ট্যাংকার ইন্টারন্যাশনাল (TI) এর এই ৪ টি জাহাজের দৈর্ঘ্য ৩৮০ মিটার করে। আর ধারণক্ষমতা ৪, ৪১,৮৯৩ টন। জাহাজগুলোর স্রস্টা ও সেই Daewoo Shipbuilding and Marine Engineering. বলেছিলাম না?? বড় জাহাজ বানানোই তাদের নেশা। ২০০২-২০০৩ সালে তৈরি করার সময় তাদের নাম ছিল Alhambra, Metropolis, Fairfax , Tara তাদের মালিক ছিল গ্রীক শিপিং কর্পোরেশন Hellespont. পরবর্তীতে Overseas Shipholding Group কিনে নেয় Tara এবং Fairfax কে। তাদের নাম রাখে TI Africa এবং TI Oceania. EURONAV NVনামক অপর বেলজিয়াম কোম্পানি Alhambra ও Metropolis কে কিনে নেয় এবং নাম রাখে TI Asia ও TI Europa। একসাথে এদেরকে বলা হয় the fantastic four. এরা হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ যারা দুর্ঘটনাতে পড়ে তেল ছড়িয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাবে না। double hulled.

ইতোমধ্যে TI ASIA আর TI AFRICA কে সুপারট্যাংকার থেকে কনভার্ট করে ভাসমান স্টোরেজ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে Knock Nevis এর জায়গায়।
বাকি দুটি এখনও ভাসমান আছে। প্রতিটি জাহাজের সার্ভিস স্পীড ১৬.৫ নট।
এদের প্রস্থ ৬৮ মিটার আর ড্রাফ্‌ট ২৪.৫ মিটার।
TI OCEANIA এবং TI Europaমূলত পারস্য উপসাগরের তৈল সমৃদ্ধ দেশ গুলো থেকে অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ করে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কিছু দেশে পৌঁছে দেয়।
এতটুকুই থাক। কেমন লাগলো জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:১১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×