সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ইহা একটি ব্যক্তিগত প্যাঁচাল সমৃদ্ধ পোস্ট। দূর্বল লেখনী আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে। সুতরাং পোস্টে প্রবেশ করলে বিরক্ত হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই আসুন
ফোন রিসিভ না করা নিয়ে তুমুল ঝগড়া হলো। তার সাথে সমস্ত ঝগড়ার ৯৯ শতাংশ ঝগড়া হয়ে থাকে ফোন রিসিভ না করা নিয়েঃ
- "তোমার ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হইতে আর খাইতে দুই ঘন্টা লাগে?
- হ্যা, লাগে। তোমাকে কতবার বলছি যে ফোন কাটার পর আর ফোন দিবানা। কথা বলা গেলে তো রিসভ করতামই, তাইনা?
- আর তোমাকে কতবার বলছি যে একবার রিসিভ করে বলবা এখন কথা বলা যাবেনা। তাহলেই তো আর কল দেইনা।
- রিসিভ করলে তো তুমি আর রাখতে চাওনা।
- আমি রাখতে না চাইলে কি হবে? তুমি তো ঠিকই রাখো। নিজের দোষটা কখনো স্বীকার করতে চাওনা!"
বেশ কিছুক্ষণ থেকেই ঝগড়া করছি। মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে আছে। এই মেয়ের সাথে তর্ক করে পারা যায়না। তাই চুপ করে আছি।
কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করার পর সে নীরবতা ভাঙলোঃ
- "স্যরি!
- কি?
- স্যরি স্যরি স্যরি!
- কেন? তুমি স্যরি বলবা কেন? স্যরি তো আমার বলা উচিৎ, তাইনা? দোষ তো আমি করছি। আচ্ছা এবার বলো তো কি কি দোষ করছি, আর কি কি স্বীকার করলাম না?
- তুমি দোষ করবা কেন? সব দোষ তো আমিই করি।
- উল্টাপাল্টা কথা বাদ দিয়ে বলো কি দোষ স্বীকার করলাম না। তাহলেই আর সেই দোষ করবো না।
- তুমি দোষ করো নাই, আমি কেন বারবার ফোন দেই! এটাই আমার দোষ। তুমি তো অনেক ব্যস্ত থাকো, তাই রিসিভ করতে পারোনা। আচ্ছা, তুমি কখন ফ্রী থাকো সময়টা বলো। এখন থেকে তখনই ফোন দিবো।"
এটা পুরনো কথা, ফোন রিসভ করা নিয়ে ঝগড়া হলেই মাঝে মাঝে এমন ডায়লগ শুনতে হয়। এই কথা আবার শোনার পর মেজাজ খারাপের মাত্রাটা এইমাত্র মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করলো। আস্তে করে বললামঃ
- "মরার পর।
- কি! আমি জানতে চাইছি কখন ফ্রী থাকবা, তাই বলে এটা বলবে তুমি! (কান্নার শব্দ পেলাম) যাকে এতো ভালোবাসি তার মৃত্যুকামনা করবো আমি! ওকে, আর কখনই ফোন দিতে চাইবো না। রাখতেছি এখন। তুমিও আর কখনোই আমাকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করবা না।
এটাও খুব অপরিচিত না। আমি ফোন দেওয়ার আগেই সে আবার ফোন দেবে, একটু অভিমান দেখিয়ে আবার সুন্দর করে কথা বলবে, সুন্দর করে হাসবে। মুখে বললামঃ
- আচ্ছা, দিওনা। আমিও ফোন দিবোনা।"
ফোন কেটে গেলো। ফেইসবুকে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি ইনবক্সে তার মেসেজঃ "প্রবলেম কি তোমার? ফোন রিসিভ করোনা কেনো?"
এটা ফোনে কথা বলার আগে পাঠানো মেসেজ, তাই রিপ্লাই দিলামনা। সাথে সাথেই আবার তার ফোন। রিসভ করে চুপ করে থাকলাম। ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠঃ
- "আমার যতো ছবি আছে তোমার কাছে, সব ডিলিট করে দিবা। আর কখনো ফোন দিবা না। রাখলাম।"
খুব হাসি পেলো শুনে! এই মেয়েটার আসলেই মাথা খারাপ। কিছু একটা হলেই এমন করে। বয়স বাড়িয়াছে, কিন্তু বুদ্ধি বাড়ে নাই। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। এবার ফেইসবুক মেসেজের রিপ্লাই দিলামঃ
- "তোমার সব ছবি ডিলিট করে দিছি"
ঘন্টাখানেক পর তার রিপ্লাইঃ "এটাই ভালোবাসা! "
দেখে আবারও হাসি পেলো, এই মেয়েটা বিশ্বাস করে ফেলেছে!
আমিঅ আবার লিখলামঃ "ভালোবাসার মানুষ একটা কথা বলছে, সেটা না রাখলে কি চলে?" অনেকক্ষণ আর কোনো রিপ্লাই নেই। ঘন্টা তিনেক পর তার নাম্বার থেকে একটা মিসড কল আসলো। প্রায় সাথে সাথেই হবু শাশুড়ির নাম্বার থেকে ফোনঃ
- "বাবা ভালো আছো?
- জ্বী, আপনি ভালো?
- হ্যা, বাসার সবাই ভালো?
- জ্বী, ভালো আছে সবাই।
- সাথীর কি হইছে বাবা? কান্নাকাটি করতেছে কেন? জিজ্ঞেস করলাম তো কিছু বলেনা। তাই ভাবলাম তুমি কিছু বলছো নাকি...
- কান্নাকাটি করে এখনও? তেমন কিছু তো হয়নাই। এই সকালে ফোন দিছিলো, রিসিভ করিনাই; তাই নিয়ে একটু ঝগড়া হইছে। আচ্ছা আমি ফোন দিচ্ছি ওকে।
- আচ্ছা বাবা, দেখো।"
ছবি ডিলিট করার কথা বলার পরেই এটা হয়েছে সেটা বুঝতে আর বাকী নেই। কয়েকবার ফোন দেয়ার পর রিসিভ করলোঃ
- তুমি ফোন দিছো কেন আমাকে?
- কি হইছে তোমার? কান্নাকাটি করো ক্যান?
- আমি কান্নাকাটি করলে তোমার কি? তুমি কে?
- আমি কে সেটা জানোনা? তাহলে কার জন্য কান্নাকাটি করো?
- আমার ইচ্ছা হইছে আমি কান্নাকাটি করবো।
- আচ্ছা, ঠিক আছে। কান্নাকাটি করা ভালো, মন হালকা থাকে। তুমি কান্নাকাটি করো, কিন্তু অন্যরা যেনো না দেখে।
- আমি কি কাউকে ডেকে এনে দেখাইছি?
- আচ্ছা হইছে, এবার চুপ করো।
- চুপ করবো না। তুমি ছবি ডিলিট করছো কেন?
- তুমিই তো ডিলিট করতে বলছো, তাই করছি
-
- আচ্ছা, হইছে তো... ছবি ডিলিট করার জন্য এতো কান্নাকাটি করতেছো! অনেক হইছে এবার থামো। নিজেই ছবি ডিলিট করতে বলবা আবার ডিলিট করলে কান্নাকাটি করবা?!! ছবি ডিলিট করিনাই। এবার কান্না থামাও। তোমার সাথে মজা করছি। তোমার ছবি কি আমি ডিলিট করতে পারি?
- চুপ! বেদ্দপ! (ন্যাকা সুরে)
- এবার থামো, নো কান্নাকাটি।
- তাহলে স্যরি বলো!
- আমি স্যরি বলবো! কেন! আমি কি কিছু করছি স্যরি বলার মতো!
- স্যরি বলো, তাহলে আর কাঁদবো না।
- পারবো না স্যরি বলতে, রাখলাম এখন। কান্নাকাটি থামাও।
আসন্ন ২১ এপ্রিলে আমাদের প্রেমের ৩ বছর পূর্ণ হবে। এভাবেই চলে এসেছে ৩ টা বছর। কারও প্রতি কারও ভালোবাসা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরেও মাঝে মাঝে এরকম ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। এরকম ব্রেক আপ আর প্যাচ আপও এরই মধ্যে কয়েকবার হয়ে গেছে। ঝগড়া উত্তর উত্তাপ বড় জোর ৩ দিন থাকে, তারপর আবার স্বাভাবিক। কবি বলেছেন- প্রতিটা ঝগড়াই প্রেমকে নতুন করে জন্ম দেয়... কবি খারাপ বলেন নাই
কষ্ট করে এত বড় প্যাচাল পড়ার জন্য ধন্যবাদ।