somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্ট মিশে শূন্যে- ( পর্ব-৪)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃহষ্পতিবার আসলেই মন বলতে থাকে আজ নাইটেই ঢাকা যেতে হবে। নীলা আর তার এক নারী কলিগ আছমা একসাথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আগেও নীলা প্রতি সপ্তাহে ঢাকা যেত, কিন্তু ইদানিং একটা টান অনুভব করে- এযে বিনে সুতার টান। মনের ভিতর পরাণ পোড়ে। খুব পরাণ পোড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ও কর্ম জীবনে কয়েকটি ছেলেই ওকে প্রপোজ করেছে, নীলা তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোথাকার কে, তার জন্য এত মায়া কেন, তাকে দেখার জন্য মনটা কেন এমন আকুলি-বিকুলি করতে থাকে! নীলা মাঝে মাঝে নিজের উপরই রাগ করতে থাকে। আজ বৃহস্পতিবার, অথচ আজকে সে ঢাকা যাবে না। শুক্রবারে বাড়িওয়ালার মেয়ের বিয়ে। তাকে দাওয়াত করেছে। সামনেই রাহাতের পরীক্ষা। আর একারণেই নীলা রাহাতকে বলেছে যে তিন মাসের ভিতর আর দেখা হবে না।
:
ক্লাস শেষ করে নীলা আর ওর আরেক কলিগ আছমা একটা রিক্সা নিয়ে সোজা যমুনা টি বাঁধে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলার দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিল আছমা। শীতের তীব্রতা একটু হলেও কমেছে, সাদা মেঘগুলো উড়ে অলস সময় পার করছে। যমুনার ঢেউগুলোর যেন কোন তাড়া নেই, আয়েসী ঢংয়ে বইয়ে যাচ্ছে। নদীর কোল ঘেষে এদিক সেদিক চর জেগে উঠেছে।
:
নীলা বলে, আপা ! ছাত্র ছাত্রীরা যে কোন সময় এদিক আসবে। নীচে ঐ দুর্বা ঘাসের উপর যে ইটগুলো আছে ঐখানে যেয়ে বসি। আছমা মাথা নেড়ে সায় দেয়।
আছমা ব্যাগ হতে দুটি পেয়ারা বের করে। আছমা নীলার হাতে একটা পেয়ারা দিয়ে বলে, নে শীতের দিনের পেয়ারা- খেয়ে নে, খুবই মজার পেয়ারা। আমাদের বাড়ি হতে পাঠিয়েছে। আছমা আপা যখন নীলাকে তুই বলে সম্মোধন করে তখন মনে হয় আপা কত জনমের আপন। দুইজন পেয়ারা খায় আর গল্পের ভেতরে ডুবে যায়। যমুনার পানি যেন তার চলা বন্ধ করে ওদের কথাগুলোই মন ভরে শুনছে।
:
নীলা তুই কলেজে আসার পর সব কিছুতেই একটা গতি ফিরে পেয়েছে। তুই কি যাদু জানিস। দেখ ! ছাত্ররা নিয়মিত ক্লাস করছে, টিউটরিয়াল পরীক্ষাগুলো ঠিকমত দিচ্ছে। তুই সপ্তাহিকভিত্তিতে বিতর্ক আর উপস্থিত বক্তৃতার কথা মিটিংএ প্রস্তাব দিয়েছিলি তা খুবই প্রশংসিত হয়েছে। হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট স্যার বললেন যে আগামী সপ্তাহ হতে আমরা এটা শুরু করবো। আর পারিবারিক ও সম্পর্কের বন্ধন, সাপ্রদায়িক সম্প্রীতি, সহযোগিতা, আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্ন বিশ্বাস, যুব সমাজকে মাদকের গ্রাস হতে রক্ষা করাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো হাইলাইট করে স্পিরিচুয়াল ডেভেলপমেন্টের জন্য সকল ধর্মের ধর্মীয় পুস্তক হতে পয়েন্ট কালেক্ট করে ছাত্রদের সাথে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলি ওটা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। হুম, শুনলাম ছাত্ররাও এটাকে এ্যাপলাই করার জন্য বলছে।
শোন ! ঐ দিন হারুন স্যার বলছিলেন যে নীলার ক্রিয়েটিভিটি আছে। নীলা পেয়ারায় এক কামড় দিয়ে বলে কি যে বলেন আছমা আপা। আমার চেয়ে আপনারা অনেক বেশি পারদর্শী।
নীলার দিকে তাকিয়ে বলে, হারুন স্যার তোকে ভীষণ পছন্দ করে। নীলা আছমার চোখে চোখ রাখে।
আছমা বলে না না নীলা ! তোকে আসলে সব টিচারগণই ভীষণ স্নেহ করে। আর তুই ঢাকায় বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছিস। শোন! তুই যেখানে যাবি, আমায় কিন্তু সেখানেই নিয়ে যাবি, বুঝলি।
নীলা আর আছমার উপর দিয়ে এক ঝাক পাখি উড়ে যায়। সূর্যের আলো পানিতে পরে পানি যেন চিকচিক করছে। নীলা পানির দিকে তাকিয়ে বলে, আচ্ছা আছমা আপা ! আপনি তারিক ভাইকে কেন বিয়ে করলেন না ! প্রশ্নটা শুনে আছমার মুখটা যেন অন্ধকার হয়ে যায়। ঘাসের দিকে তাকিয়ে বলে, এমন অনেক কথা আছে যা কাউকেই বলা যায় না, শুধু মনের ভিতর বয়ে বেড়াতে হয়রে নীলা। নীলা এবার একটু নড়েচড়ে বসে। আপা ! যদি আমাকে বলেন তবে আমিও না হয় আপনার কষ্টের একটু ভাগীদার হলাম-এই আর কি। আছমা আনমনা হয়ে যায়, বলে তবে শোন।
এমএ পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। তোর তারিক ভাই একটা বেসরকারী সংস্থায় কাজ পেয়েছে। হঠাৎ সন্ধার পর মোবাইলে আমাকে জানালো যে তার বাবা অসুস্থ, তাকে এখনই বাড়ি যেতে হবে। জানিস তো ওর বাড়ি ছিল বরিশাল। ও চলে গেল। আমি মোবাইল করলেও ধরে না। আবার বেশির ভাগ সময়ই মোবাইল বন্ধ করে রাখে। একদিন মাগরিবের নামাজের পর আমি ওকে ফোন দিলাম। ও পাশ হতে ওর গলা ভেসে এল, বললো আছমা ! এই একটু আগে আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। আমি প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। এটা হতেই পারে না। বিয়ে কি ছেলে খেলা নাকি। হাজারটা কথা না হলে নাকি বিয়েই হয় না - আর সেখানে তারিক বাড়িতে গেল আর ওর বাবা মা ওকে একটা মেয়ে ধরে বিয়ে দিয়ে দিল। তারিক বললো, আছমা ! আসলে আমার কোন হাত ছিল না। পুরোটাই আমার বাবা, মা এবং বোনেরা ঠিক করে রেখেছিল। আমি একেবারেই বিয়েতে রাজী ছিলাম না। এক প্রকার জোর করে এমনটা হয়েছে।
নীলা ! সেই সময়ে আমার কেমন অনুভূতি হয়েছিল তা আমি কাউকেউ বোঝাতে পারবো না। আমি সাথে সাথেই ওর সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড বিল্লালকে ফোন দেই। ও বলে যে সত্যিই ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মানুষ খুবই স্বার্থপর হয়রে নীলা। খুব স্বার্থপর হয়। সেই সময় কত রাত না জেগে কাটিয়ে দিয়েছি। কত দিন পেটে কিছুই পরে নাই। তবে সেই যন্ত্রনাময় সময়গুলোতে আমার বান্ধবী মনোয়ারা আমাকে ভীষণ মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে। আর তা না হলে এই আমি তোর সামনে বসে কথা বলতে পারতাম না। আছমার দুচোখ বেয়ে পানির ঝর্ণাধারা বইছে। নীলা অজান্তেই আছমার পিঠে হাত রাখে। পরম যতনে আছমার দুচোখের পানি মুছে দেয়। নীলার বুকের গহীন হতে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
:
নীলা বলে আপা কেউ কেউ স্বার্থপর হলেও সবাই কিন্তু স্বার্থপর নয়। যদি সবাই স্বার্থপর হতো তো এই পৃথিবী কবেই ধ্বংস হয়ে যেত। আর কেউ কখনোই কাউকে ঠকিয়ে ভালো থাকতে পারে না। আমার তো মনে হয় যা হয়েছে তা আপনার ভালোর জন্যই হয়েছে। তারিক ভাই যদি আমার ভালো আপাকে বিয়ে করে পরে কষ্ট দিত ! তখন কি হতো বলেন তো। সিয়াম ভাই কিন্তু আপনার পিছনে ঘুর ঘুর করে। আমরা একটু-আধটু হলেও বুঝতে পারি। সিয়াম ভাই খুবই ব্রিলিয়ান্ট আর কি চমৎকার ব্যবহার। আপনি ভেবে দেখবেন আপা। এবার নীলা আড়চোখে আছমার দিকে তাকিয়ে বলে, চলেনতো আপা ! আপনাকে আমি আজ নৌকায় চড়াবো।
:
নীলা আর আছমা এক ঘন্টার জন্য একটা নৌকা ভাড়া করে। মাঝি ধীরলয়ে পানি ভেধ করে বৈঠা চালাচ্ছে আর মিষ্টি সুরে নীচু গলায় গাইছে “ প্রেমের মরা জলে ডুবে না, তুমি সুজন দেইখা কইরো পিরিত, মরলে যেন ভুলে না দরদী, প্রেমের মরা জলে ডুবে না---” নীলা মাঝির গান শুনছে আর ভাবছে সে কি ভুল করছে। সেও তো রাহাতের প্রেমে মজেছে। চোখ বন্ধ করলে শুধুই রাহাতের মুখটাই ভেসে ওঠে। মনে হয় আমি সব করতে পারবো রাহাতের জন্য। রাহাতকে মাদক হতে সরিয়ে আনতেই হবে। বড় খালার ছেলে নাসির সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি প্রকল্পে জয়েন করেছে। ওর পোস্টিং প্লেস মীরপুর। ওরা মাদক বন্ধের জন্য মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এবং পুলিশের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। প্রয়োজনে নাসির ভাইয়ের সহযোগিতা নিতে হবে। দূর দিগন্তে ‍সূর্য ঢলে পরেছে। চারিদিকে নীরবতা। মাঝে মাঝে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শোনা যাচ্ছে। আছমা নীচু হয়ে হাত দিয়ে নদীর পানি নিয়ে খেলা করছে। ক্লান্ত পাখি ফিরে যাচ্ছে নীড়ে। যমুনার বাতাস আছমার শাড়ির আঁচল ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে দূর অজানায়। নীলার মন ঘুরে ফিরে চলে যাচ্ছে বখাটে ছেলেটার কাছে। দিগন্ত জুড়ে আলো আধারিতে ভরিয়ে দিয়ে সূর্য অন্য কোন দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে। মসজিদের মিনার হতে মিষ্টি সুরে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
:
-- চলবে--
নোট: যে কোন ধরনের ইতিবাচক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে।
আগের পর্বসমূহের লিংক:
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-৩)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-২)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-১)
:
লায়লা
৩১ জানুয়ারী,২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×