somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদিসের গল্প : রাসুল সা.এর চরিত্র দেখে এক ইহুদি মুসলমান হলেন

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( এই লেখাটি বেশ কয়েকবছর আগের, ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত "' হাদিস পড়ি গল্প লিখি - অনুর্ধ্ব ১৮ "' নামে একটি প্রতিযোগিতায় এটি দিয়েছিলাম। রাসুল সা.কে নিয়ে লেখার যোগ্যতা অধমের নেই। তাছাড়া নিতান্তই কাঁচা হাতের লেখা, তবে কিভাবে যেন এটা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে টিকে যায়।)

মদিনা, রাসুলের শহর। প্রতিদিনের মতো আজো এখানে সন্ধ্যা হয়েছে। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে বেশ খানিকক্ষণ আগেই। রাসুল সা.'র সাহাবিরা মাগরিবের নামাজের জন্য অপেক্ষমান। উত্তপ্ত মরুভূমিতে এখন কিছুটা শীতল হাওয়া বইছে।

তখন আরবে ইসলামের জয়জয়কার, ইসলাম যেন মরু সাহারার বুকে শীতল ঝর্ণাধারা। বুক উজাড় করা প্রেম দিয়ে সবাইকে আপন করে নিচ্ছে সে। নির্বাসিত মনুষ্যত্ব আবার খুঁজে পেয়েছে ইতিহাস।

সহসা মুয়াজ্জিন বেলালের কণ্ঠে শোনা গেল আজানের সুমধুর সুর, প্রতিধ্বনিত হলো নগরীর অলিতে - গলিতে। অল্পসময়ে মসজিদে নববি ভরে গেল। খেজুর পাতার ছাউনি দেয়া মসজিদ,অথচ নামাজের কাতার পরিপূর্ণ। নামাজ পড়ালেন রাসুল সা .।তখন তিনি মদিনার মুকুটহীন সম্রাট।

এমন সময় মদিনার পথ ধরে এলো একদল পথিক -মুসাফির। লক্ষ্য মদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি। এরা যাত্রাবিরতি করলো মসজিদ প্রাঙ্গণে, ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ সবার। রাসুল সা. এদের দেখতে পেয়ে নিয়ে গেলেন মসজিদে, সাহাবিদের বললেন, 'যাও তাদের নিয়ে গিয়ে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করাও, এরা আমাদের অতিথি। ' রাসুল নিজেও একজন অতিথি ঘরে নিয়ে গেলেন।

এই ঘটনা তখনকার, যখন আরবের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিলো পাপের বিষবাষ্প, কোন আগন্তুক দেখলেই তার সর্বস্ব কেড়ে নিতো লুটেরা আরব বেদুইনেরা । সেখানে তিনি আগন্তুকদের সাদরে আপ্যায়ন করছেন!! তিনি বিশ্বনবী হবেন না তো কে হবে? এমন মানবতা আর কে দেখাবে?

রাসুল সা. এর সেই অতিথি ছিলো ইহুদি, কিন্তু নবিজী তাকে স্বহস্তে খাওয়ালেন। তবে লোকটি মেহমান হলে কি হবে! সে একটু দুষ্ট প্রকৃতির। সে ভাবল, আজ আমি ঘরের সব খাবার একাই খাব। আর করলো ও তাই। একেবারে পেট পুরে খেলো। রাসুল সা. নিজেই তার জন্য বিছানা করলেন, এবার সে ঘুমাবে।

গভীর রাত, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে অতিথির। একেতো দূরের ভ্রমণে ক্লান্ত, আবার খেয়েছে ও বেশি। পেট এ অত্যাচার সইবে কেন? তার প্রচণ্ড বাতরুম চাপলো। কিন্তু এতো রাতে, অজানা অচেনা জায়গায় কোথায় যাবে সে? এমন সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বিছানা নষ্ট করে ফেলেছে আগন্তুক। এবার ভয় পেয়ে গেল ইহুদি, মুহাম্মদ সা. মদিনার সম্রাট। তার ঘরে এমন অপকর্ম? লোকটি ভয়ে পালিয়ে গেলো।

ছুটে পালাচ্ছে সে যেদিকে দুচোখ যায়। যদি মুহাম্মদের লোকেরা তাকে ধরে ফেলে - এমন ভয়ে ছুটছে প্রাণপণে। এমনি সময় তার মনে হলো সে তলোয়ার ফেলে এসেছে মদিনায়। সে যুগে তলোয়ার ছাড়া ভ্রমণ কল্পনাই করা যায় না। কি করবে আগন্তুক? সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আবার মদিনায় ফিরে যাবে, তলোয়ার ছাড়া একমুহুর্ত কাটানো অসম্ভব।

চুপিচুপি মুহাম্মদ সা. এর ঘরে এসে ঢুকেছে ইহুদি। মনে ভয় কি জানি কি হয়। কিন্তু একি কি দেখছে সে?

সামনের দৃশ্য দেখে মেহমান নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। রাসুল সা. নিজের হাতের লোকটির নষ্ট করে যাওয়া বিছানা ধুয়ে দিচ্ছেন। চেহারায় রাগের চিহ্ন নেই।

রাসুল সা. তাকে দেখে ছুটে এসেছেন তার কাছে। তাকে বলতে লাগলেন, ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে, রাতে তোমার খোঁজ নিতে পারিনি, আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট করেছ। আমাকে মাফ করে দাও!

ইহুদি ভাবতে ও পারছে না রক্ত মাংসে গড়া মানুষ এতো ভালো হয়, মানবিক হয়। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হলো কালেমা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ '।রাসুল সা. এর অনুপম চরিত্র দেখে সেও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×