somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েটে রাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুয়েটে রাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে। আমার মতন কট্টর রাজনৈতিক নাস্তিকের জন্য সংবাদটি অনেকটা "সমকামী বিবাহ আইন বৈধ" হবার মতন ঘটনা। কট্টর ধার্মিকদের মতন কট্টর রাজনীতিবিদরা খেপবেন, কট্টর নাস্তিক থেকে শুরু করে মানবাধিকারে বিশ্বাসীদের মতন আমি বলবো, "আলহামদুলিল্লাহ!"

এইবার কিছু কথা বলি।

এইটা অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই যে বাংলাদেশের জন্মের আগের ও পরের অনেক বড় বড় মাইল ফলকে ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। ৪৮-৫২র ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যূন্থান, একাত্তুর, নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন - ছাত্ররাজনীতির অবদানকে অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই। কিন্তু এর পরে কী হয়েছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। পুরো নব্বই দশক জুড়ে আমার স্কুল জীবন ছিল, এবং আমি দেখেছি পাড়ার বড় ভাই থেকে শুরু করে চাচা মামার বন্ধু, যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, মেধাবী ছাত্র - ছাত্ররাজনীতির নোংরামির শিকার হয়ে হয় খুন হয়েছে, নাহয় খুনি। চিটাগংয়ে আমার দাদার কবরের পাশেই শুয়ে আছে এক একুশ বছর তরুনের মৃতদেহ যে নব্বইয়ের দশকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। লালখান বাজারে ছিল তাঁর বাড়ি। বেঁচে থাকলে এখন তাঁর সুন্দর সংসার হতো, বাচ্চারাও হয়তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো।
এই যে আবরার, সেওতো রাজনৈতিক খুনেরই শিকার। নিজের বড় ভাই, সহপাঠীরা ওকে খুন করেছে। শুধু তাই না, লাশ ফেলে রেখে নির্বিকার চিত্তে বার্সেলোনার খেলা দেখেছে। এরা কেউ রাস্তার ছেলে নয়, বস্তিবাসী নয়, দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠের ছাত্র। বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী কিছু মাথার অন্যতম অধিকারী। এদেরই এই আচরণ। তাহলে অন্যদের অবস্থা কী হতে পারে বুঝে নেন।
আমি নিজে সরকারি কলেজে পড়েছি। তাতেই আমার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সাধ মিটে গেছে। যারা ক্রমাগত বুলির শিকার হয়েছেন, বছরের পর বছর, তাঁদের অবস্থা কী হতে পারে কল্পনা করতে পারেন? অনেকের সামর্থ্যে নাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ যোগান দেয়া। তাঁদেরকে জেনে শুনেই সাপের গর্তে ঠেলে দেয়া হয়। তাঁদের অসহায়ত্বটা একটু বুঝুন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, উশৃঙ্খল ছাত্রদের উশৃঙ্খলতার জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে কেন? ব্যবহৃত হতে পারে বহুল পরিচিত বাংলা প্রবাদ, মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে বাদ দিতে হবে?
আমাদের বুঝতে হবে আমাদের দৌড় কতটুকু। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সিস্টেমে আমরা এই বিশৃঙ্খলা শুধরাতে পারবো না। এইটা পরম সত্য। আপনি যত দ্রুত মেনে নিবেন, তত দ্রুত সুখী হবেন। আমাদের রাজনীতিবিদরা এখনও সমস্যার কথা স্বীকারই করতে চাইছেন না। প্রশ্ন করলেই বলেন, "ছাত্ররাজনীতি নষ্ট করেছে জিয়াউর রহমান।" তা জিয়া মরে ভূত হয়েছেন আশির দশকের শুরুতে, আপনারা ক্ষমতায় আছেন এক যুগের বেশি, আপনার ছাত্ররা বলে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। জিয়াউর রহমানের এতই ক্ষমতা যে আপনার ছেলেরা তাঁকে ভুলতেই পারছে না? এই কথার মধ্য দিয়ে আপনারাতো নিজেদেরই দুর্বল প্রমান করলেন।
আমাদের দেশে যেকোন সংগঠনে ভাল নিয়্যতে কিছু একটা করতে যান, হয় আপনাকে বদলি করে দিবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়, নাহয় পরিবারকে হেনস্থা করা হবে, নাহয় আপনার জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হবে। সেই অনাদিকাল ধরে এমনটাই ঘটে আসছে। আমার নিজের দাদা এর শিকার হয়েছেন। আমাকে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামাত শিবির বুঝায়ে লাভ নাই।
প্রবাদ নিয়ে বলতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে "ব্যথাটা" আসলে কি। এটা কী স্বাভাবিক মাসল পুল? নাকি ক্যান্সার? যদি ক্যান্সার হয়, তাহলে মেডিকেল ডক্টররাই হাত, পা বা অন্যান্য অঙ্গ কেটে বাদ দেন। কেন? কারন সেটা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে প্রাণঘাতী হয়ে যায়। যদি মাথা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারতো, তাহলে অবশ্যই মাথাও কেটে বাদ দিত। পারেনা বলেই ব্রেইন টিউমারে মানুষ মারা যায়।
ছাত্ররাজনীতি এখন কেবল "হাতে পায়ে ম্যাজম্যাজ করছে" ধরনের ব্যথা না। এটি টার্মিনাল স্টেজের ক্যান্সার। এন্টিবায়োটিকে চলবে না, কেমোথেরাপি অবশ্যম্ভাবী। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেই ওরা শুধরে যাবেনা। এই ব্যাপারটা আপনাকে বুঝতে হবে। না বুঝলে নিজেরই ক্ষতি।
আপনাকে বুঝতে হবে স্কুল কলেজের ছাত্ররা আঠারো উনিশ বছরের তরুণ হয়। এই সময়ে মাথা ঠিকভাবে কাজ করেনা।বুদ্ধির পরিপক্কতা আসেনা। এই সময়েই আপনি তাঁদের হাতে টাকা আর ক্ষমতা তুলে দিচ্ছেন। এই সময়ে অস্ত্র উঠছে তাঁদের হাতে। আপনি কোন বুদ্ধিতে বিবেচনা করছেন যে ওরা ভদ্র হয়ে চলবে? সম্প্রতি শেষ হওয়া দূর্গা পূজার উদাহরণ নেয়া যাক। অসুরকে যে কোন পুরুষ বধ করতে পারবেনা, সেই বরতো কোন দেবতাই দিয়েছিল, নাকি? তেমনই আমাদের সরকারি দল যদি অভয়দান করে বলে স্কুল কলেজ ক্যাম্পাসে যা খুশি কর, তোদের কিচ্ছু হবেনা, তাহলে ওদের থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?

প্রশ্ন করতে পারেন, "কিন্তু দেশকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিলে কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতি শিখতে হবে। নাহলে আমরা ভাল, আদর্শ নেতা পাব কিভাবে?"

বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে অ্যামেরিকা, আমাদের এখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই। আমরা পড়ালেখা করেছি, কাজ করেছি। কোন ট্রাম্প, ওবামা, বুশ নিয়ে লাফালাফি করিনি। হ্যা, যখন প্রয়োজন হয়েছে, তখন নিজ উদ্যোগেই তার সাথে যুক্ত হয়েছি। যেমন গান ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে মুভমেন্ট। যেমন কালোদের জন্য ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স মুভমেন্ট। যেমন ট্রাম্পের অভিবাসন আইনের অযৌক্তিকতা নিয়ে মুভমেন্ট।
রাজনীতি শিখতে হলে কে বলেছে আপনাকে কোন পলিটিকাল পার্টির আন্ডারেই কাজ করতে হবে? পলিটিক্যাল সায়েন্সের প্র্যাকটিকাল ক্লাস আমরা করি ছাত্র পিটিয়ে। অতি সম্প্রতি স্কুল কলেজের সাধারণ ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমেছিল ট্রাফিক কন্ট্রোলে। তাঁরা লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভারদের গাড়ি চালাতে দেয়নি। তাঁরা এম্বুলেন্সের জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দিয়েছিল। তাঁরা ফুটপাথে মোটর সাইকেল উঠতে দেয়নি। পুরো বাংলাদেশ এক দুই সপ্তাহের জন্য ট্রাফিক আইন মেনে চলেছে। এরপরে ছাত্ররাজনৈতিকরা কী করেছিল সেটা মনে আছে? হেলমেট পরে, লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে এইসব সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়েছে। লুঙ্গি পরা লোকেরা ভাংচুর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জিম্মি হয়ে ছিল নিজেদের ক্যাম্পাসে। আপনি নিজে বিশ্বাস করেন এরাই দেশের আদর্শ নেতৃত্ব দিবে, ভাল কথা। আমাকে বিশ্বাস করাতে আসছেন? আপনার কনফিডেন্সের প্রশংসা করি।

দেশের জন্য ভাল কিছু করতে চাইলে কোন রাজনৈতিক দলের মোহর লাগেনা। গণজাগরণ মঞ্চ বা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন শুরু করেনাই। এই যে গ্রেটা থানবার্গ নামের একটি মেয়ে অগ্নিঝরা কণ্ঠে বিশ্বনেতাদের "হাউ ডেয়ার ইউ" বলে, সে কোন রাজনৈতিক দল থেকে রাজনীতি শিখে আসেনি। ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়টা উপলব্ধি করে সে নিজেই সাইন বোর্ড হাতে নিজের সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। ধীরে ধীরে তাঁর সাথে যুক্ত হয় গোটা বিশ্বের ছেলেপিলে। লিখে দিতে পারি, কাজটা বাংলাদেশে করলে ছাত্রলীগ/ছাত্রদল/ছাত্রশিবির বা অন্য যেকোন ছাত্ররাজনৈতিক দল হেলমেট আর লুঙ্গি পরে পিটিয়ে গ্রেটাকে হাসপাতালে পাঠাতো।
কারন ওরা প্রতিটা আন্দোলনেই বাম হাত ঢুকিয়ে নষ্ট করেছে।
ফিরে যান স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের দিনগুলোতে। তখনও রাজনৈতিক দল ছাড়াও সাধারণ ছাত্ররাও যুক্ত হয়েছিল। এইসবের উপর ভিত্তি করে বলতে পারি গণঅভ্যুত্থান, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ - সবগুলোই কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের একক কৃতিত্ব নয়, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে এসেছিল বলেই তা সফল হয়েছিল।

চিরকাল পড়ে এসেছি "ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ" অর্থাৎ, "ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা।" কখনই শুনবেন না "ছাত্রনং রাজনীতিনং তপঃ" কাজেই রাজনীতির চিন্তা বাদ দিয়ে বাবাজি তোমরা পড়ালেখা করো। শিক্ষিত হও। মেরুদন্ড শক্ত করো। কোন হারামজাদা পলিটিশিয়ানের ক্রীড়ানক হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিও না। আগে নিজের বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করো, তারপরে রাজনৈতিক দলে যোগদান করে দেশের নেতৃত্ব নাও।
কনফিউশন থাকলে আবরারের হত্যা ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি আর ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য পাশাপাশি রেখে পড়ুন। বুঝবেন শিক্ষিত আর অশিক্ষিত তেলবাজের মানসিকতার পার্থক্য।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৯
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×