somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ২

২৬ শে মে, ২০০৯ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১


আজ মনটা বেশ প্রফুল্ল। অফিসে আসার পথে রিক্সায় বসে আপন মনে হেসেছি। বেশ কয়েকজনকেই দেখলাম আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে। আমিও সমানতালে তাদের উদ্দ্যেশ্যে অদ্ভুত করে হাসলাম। অফিসে নিজের চেম্বারে প্রবেশ করার পরপরই আমার সহকারী স্বাতী হোসেইন ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললেন -

"আমি কি আসতে পারি স্যার?"
আমি মনে মনে বললাম ফাজলামো করার আর জায়গা পাও না। যদিও মুখে বললাম -
"আসুন প্লিজ"
ভদ্র মহিলাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে।

"কেমন আছেন স্যার?"

"জ্বী ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?"

"আমিও ভাল আছি। ভাবী কেমন আছেন?"

"ভাবীর এখনো বিয়ে হয়নি" ভদ্র মহিলা ভাল করেই জানেন আমি অবিবাহিত। তবুও তার এই প্রশ্ন থাকবেই। মনে মনে বিরক্ত হলেও কখনো তা মুখে প্রকাশ করিনি। বরঞ্চ একদিক দিয়ে স্বস্তি বোধ করি এই ভেবে ভদ্র মহিলা যদি হুট করে প্রশ্ন করেন আপনার বাচ্চারা কেমন আছে? তাহলে ব্যাপারটি আরো বিব্রতকর হবে।

"ওহ! স্যরি স্যার। আপনিতো এখনো বিয়ে করেননি"

"আপনি কি আর কিছু বলবেন?"

"জ্বী স্যার। একটু আগেই খবর পেলাম আমার শ্বশুড় মারা গেছেন। আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলাম। স্যার আমার দু'দিনের ছুটি লাগবে"। কথাগুলো বলার সময় ভদ্র মহিলার মুখে আশ্চর্য রকমের আনন্দের হাসি দেখলাম। আমার এমনিতে কৌতুহল একটু কম। তবে তার এই আচরণে কৌতুহল মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম -

"আপনার শ্বশুড় মারা গেছেন আর আপনি এতো আনন্দিত ঘটনা কি?"

"স্যার এখন বলার মত সময় নেই। দু'দিন পরে বলব আপনাকে"

"আচ্ছা ঠিক আছে। ছুটির জন্য দরখাস্ত এনেছেন?"

"জ্বী না স্যার। খুব তাড়াহুড়ার মাঝে আছি, তাই ভাবলাম দু'দিন পর দরখাস্ত দিব"

"তাহলে এক কাজ করবেন আপনি দু'দিন পরে ছুটি নিয়ে যাবে"

অবাক ব্যাপার!! ভদ্র মহিলার মুখের হাসি এতটুকু মলিন হল না। যদিও যে মহিলা নিজের শ্বশুড়ের মৃত্যু সংবাদে খুশি হন তিনি যে আমার সামান্য এই কথায় কষ্ট পাবেন তা আশা করা যায় না।

"আচ্ছা স্যার আমি এখুনি দরখাস্ত নিয়ে আসছি"

"ঠিক আছে আপনি দরখাস্ত নিয়ে আসুন"

ভদ্র মহিলা চলে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যদিও মনের প্রফুল্ল ভাবটা ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম এটাতো হতে দেয়া যায় না। তখনই গতকাল রাতের একটি ঘটনা মনে পড়ল। খালার বাসা থেকে হেঁটে বাসায় আসছি। পথে এক ভদ্রলোক আমাকে থামালেন -

"ভাই নূর মোহাম্মদ সাহেবের বাড়ি কোনটা?"

আমি বললাম "ভাইয়া আমিতো চিনি না অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করেন"

ভদ্রলোক হুট করে রেগে গেলেন। "এই এলাকায় থাকেন কিন্তু এলাকার বিশিষ্ট ভদ্রলোকের বাড়ি চিনেন না এটা কেমন কথা? আপনারা যে কি ধরনের মানুষ?"

"ভাইয়া আপনাকে কে বলল আমি এই এলাকায় থাকি?"

"দেখেতো মনে হচ্ছে এই এলাকারই মানুষ"

"জ্বী না। আমি এই এলাকায় থাকিনা। এখানে বেড়াতে এসেছি"

ভদ্রলোক যথেষ্ট বিব্রতবোধ করছেন। তাকে আরো বিব্রত করার জন্য আকন্ঠ বিস্তৃত এক হাসি দিলাম তার চোখের দিকে তাকিয়ে। তিনি আর কিছু না বলেই ঘুরে হাঁটা দিলেন।

এই মুহুর্তে অফিসে বসে ঘটনাটি মনে করে হাসছি আর তখনই ইন্টারকমটা বেজে উঠল। রিসিভার তুলে অপর পক্ষের কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম ম্যানেজার সাহেবের কন্ঠ। সাথে সাথে শুরু হলো বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত ওনার বকাঝকা।

"জহির সাহেব আপনার মত গর্দভ আমি আমার জীবনে দ্বিতীয়টি আর দেখিনি। আপনাকে কতবার বলেছি এ্যাকাউন্টস এর ফাইলে যেন কোন ভুল না থাকে? আপনি এত বড় গর্দভ যে যোগ-বিয়োগে ভুল করেছেন। আপনার জন্য গণশিক্ষার স্কুল থেকে শিক্ষক আনতে হবে যোগ-বিয়োগ শেখানোর জন্য"।

আমি সবিনয়ে বললাম "স্যার এটা এ্যাকাউন্টস সেকশন না। আর আমি জহির সাহেব না। আপনার বোধহয় নাম্বার ডায়াল করতে ভুল হয়েছে"

"এতক্ষণ বলেননি কেন? আর আপনি কে? এটা কোন সেকশান?"

আমি কোন উত্তর না দিয়েই রিসিভারটা নামিয়ে রাখলাম। নিজের প্রতিক্রিয়ায় নিজেই যথেষ্ট অবাক হলাম। আমার রেগে যাওয়ার কথা। উল্টো আমার হাসি পাচ্ছে। Strange!!!!

অফিসে বাকী সময় একঘেয়ে ফাইল ওয়ার্ক করেই কাটালাম। মাঝে একবার স্বাতী হোসাইনের ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করলাম। অফিস ছুটি হতেই জটিল অনেক চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে বের হলাম। মনে মনে প্ল্যান আঁটছি আজ সন্ধ্যায় কি করব, না করব।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×