somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা!

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাকা পয়সার বিপদে আছি জেনে ভদ্রলোক আমাকে সাহায্য করবার চেষ্টা করেন। না, সরাসরি টাকা দিয়ে নয়; তবে এমন কাজের মাধ্যমে, যাতে আমার হাতে টাকা আসে।


এখানে পৌছার ৩০-৩৫ মিনিট পরপরই খবর পেলাম যে দেশে থাকতে উনার প্রতিষ্ঠান (যেখানে উনি চাকরী করেন) এর জন্য করা একটা কাজ এপ্রুভ হয়েছে; এবং বেশ ভালো অঙ্কের একটা টাকা উনি আমার জন্য ম্যানেজ করতে পেরেছেন। পরদিনই উনার বাসায় হাজির হলাম টাকাটা নিতে এবং প্রথমবারের জন্য সরাসরি দেখা করতে।

প্রথম পরিচয়েই তার ভদ্রতার পরিচয় পেলাম। "ঝাড়া ভদ্রলোক" যাকে বলে আরকি।

দ্রুতই আমাকে উনি বিভিন্ন কাজে লাগানো শুরু করলেন। দেশে থাকতে যে কাজের জন্য ১০,০০০ টাকা চার্জ করতেও গলা কাঁপতো, উনি অনায়েসে সেই কাজের জন্য ৫০/৬০ হাজার টাকার সমপরিমান বের করে দেবার ব্যবস্থা করতেন। ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি যে আসলে উনি যে টাকা বের করছেন, তা এ দেশের তুলনায় খুবই নগন্য; প্রতিষ্ঠান কোন প্রোফেশনাল কম্পানিতে গেলে ৫/৬ লাখের নিচে কাজ করাতে পারতো না!

উনার মাধ্যম হয়ে বিভিন্ন লোকের সাথে পরিচয় হয়েছে; তাদেরও বিভিন্ন কাজে লাগাতে লাগলেন তিনি। বেশ ভালো একটা পরিস্থিতিতে চলে আসলাম।

এবার মূল গল্পের টাইটেলে আসি! 'মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা' এর কথা।

একদিন উনি হঠাৎই কোন বলা নাই কওয়া নাই লাবানের গুনাগুন সম্পর্কে বেশ লম্বা লেকচার দিলেন; এবং লেকচার শেষে হাতে একটা আধালিটারের লাবান ধরিয়ে দিলেন। লাবান যে খুব পছন্দ করি তা নয়; তবে তিনি এত ভালোবেসে লাবান দিলেন, না নিয়ে কি পারা যায়? গাড়িতে বসেই সেরে দিলাম পুরা আধা লিটার।

দু'দিন বাদেই তার সাথে দেখা, আবার হাতে লাবান ধরিয়ে দিলেন। সাথে সাথে জানান দিলেন যে তিনি এপ্রুভাল ম্যানেজ করেছেন, এখন থেকে আমি তার অফিসে বসে আমার কাজ করতে পারবো। আপাতত স্থায়ী একটা জায়গা পাওয়ায় আমি মহা খুশি। ঢক ঢক করে লাবান সাবাড় করে দিলাম!

অফিসে প্রতিদিন আসি, এসে উনার ডেস্কে গিয়ে দেখা করি, লাবান উপহার পাই। একদম যে প্রতিদিন তা নয়, তবে সপ্তাহে ৫দিনের মধ্যে ৩দিন অন্তত পাই। এই লাবান রহস্য ধীরে ধীরে আমার কাছে জটিল হয়ে উঠতে লাগলো। এত লাবান দেবার ঘটনা কি? একদিন জিজ্ঞাসাও করেছিলাম। তিনি সামান্য এড়িয়ে যাবার ভঙ্গীতে বললেন যে, আমার স্বাস্থ্য সুস্থ থাকুক এটাই উনার চাওয়া!

হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় ভদ্রলোক কল করে বললেন যে উনার খুব জরুরী মিটিং আছে আগামীকাল সকালে, তো আমাকে তার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে একটা মার্কেটে নামায় দিয়ে আসতে হবে; আর ৩/৪ ঘন্টা পর তাকে আবার বাসায় পৌছে দিতে হবে।

তো যেই কথা সেই কাজ; সকালে মার্কেটে নামিয়ে দিয়ে আসলাম। দুপুর বেলা উনাকে নিয়ে আসতে গিয়ে লাবান রহস্যের জট খুললো! আমার গাড়ির প্রায় ২৫% জায়গা জুড়ে লাবান! ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের লাবানের বোতল! ভদ্রমহিলাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবার সময় উনি আমাকে ৬টা লাবানের একটা কেস হাতে ধরিয়ে দিলেন!

বুঝতে বাকি থাকলোনা যে ভদ্রমহিলা ভালোবেসে তার স্বামীকে লাবান ধরিয়ে দেন, আর তার স্বামী আরও বেশী ভালোবেসে (প্রায়সই) আমাকে সেই লাবান ধরিয়ে দেন!

এরপর কেটে গেছে বহুদিন। একটা প্রতিষ্ঠানে জয়েন করেছি। সেখানে এসে বহু মানুষের সাথে পরিচয়। যদিও এই প্রতিষ্ঠানে আসবার আগে থেকেই কাজের সূত্রধরে প্রায় গোটা দশ লোককে চিনি; আর এখানে আসবার পর আরও কয়েকজনের সাথে খুব ভালো খাতির হয়ে গেলো।

হঠাৎই একদিন এক কলিগ আপেল কেটে নিয়ে হাজির! পুরা খোসা ছিলে কেটে নিয়ে আসছে। দেখতে কিছুটা গাবের মত লাগছে। তো আমি খানে ওয়ালা মানুষ খেয়ে নিলাম। পরদিন আবার সে একই পন্থায় আপেল নিয়ে হাজির। এভাবে তার পরের দিনও।

ঘটনা যখন সপ্তাহ পরিয়ে আধা-মাসে প্রায়, তখন তার দুরভিসন্ধী বুঝতে পারলাম। জিজ্ঞাসা করলাম যে সে এমনটা কেন করছে। উত্তর আসলো আমার শরীর সুস্থ থাকুক এটা সে চায়; কেননা আমি তার অনেক কাজে হেল্প করি!

আবার জিজ্ঞাসা করলাম যে, এটা তার বাসা থেকে ধরিয়ে দেওয়া হয় কি না! উত্তর আসলো হ্যাঁ; তার মা প্রতিদিন একটা আপেল তার ব্যাগে পুরে দেয়; আর বাসায় ফিরলে চেক হয় যে আপেল খাওয়া হয়েছে কি না।

দুইটা ঘটনার এমন আচানক মিল দেখে আমি কিছুটা হতভম্ব হবার দশা।

এরও প্রায় ৩মাস পর এক দুপুরে লক্ষ্য করলাম, আমার এক হাতে লাবান, এক হাতে আপেল। ঐ ভদ্রলোক আমার কাছে নাই, তাই তিনি আমাকে লাবান দিয়েছেন এমন না; আবর ঐ কলিগও আজ অফিসে আসেন নাই, তাই তিনিও আমাকে আপেল দিয়েছেন এমন না। বরং লাবান আর আপেলের উপরে আমার এখন তৈরী হয়েছে 'মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা'!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৫৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×