সৌদীতে কুরবানীর হাটটা খুব সম্ভবত দেখতে বাংলাদেশী হাট গুলির মতই হয়। আমি বাংলাদেশে থাকতে মাত্র এক কি দুইবার কুরবানীর হাটে গিয়েছি। যদ্দুর মনে পড়ে একই মনে হয়েছে।
পার্থক্য হচ্ছে এখানে তুলনা মূলক একটু বেশী সাজানো। এক এলাকায় গরু, এক এলাকায় খাসি, এক এলাকায় দুম্বা, এক এলাকায় উট। তবে কিছু কিছু খামারীর একাধিক ধরণের পশু থাকে, তাদের জন্য আলাদা একটা সাইড বরাদ্দ।
ঘটনায় যাওয়ার আগে আরও কিছু টুকটাক ইনফো দেই।
এখানে গরুর হাট সাধারণত এলাকা ভিত্তিক হয় না। একটা শহরে সাধারণত একটাই হাট হয়। গরু নিজেদের বাসায় এনে জবাই দেওয়া যায় না। সরকারী নির্দিষ্ট জায়গা আছে, সেখানে জবাই দিতে হয়। আপনি চাইলে হয়ত ওখানে নিজের হাতে জবাইটা দিতে পারবেন। তবে কাটাকাটি সব ওরাই করবে, নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে। অধিকাংশ সময়ই গরু ঈদের ২য় দিনে, এবং উঠ ঈদের তৃতীয় দিনে জবাই হয়। প্রথম দিনে সাধারণত ছাগল-দুম্বা জবাই হয়।
এবার ঘটনায় আসি।
২০১৯ সালের ঘটনা। কয়েকজন মিলে গরু কিনতে যাবো। এক বড় ভাইয়ের আব্বা-আম্মা দেশ থেকে এসেছেন, ছেলের সাথে ঈদ করবেন, সৌদীতে। আঙ্কেল যেহেতু গরু কেনায় পারদর্শী (অন্তত আমাদের থেকে), তাকে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। কুরবানীর হাটের সাইজ দেখে উনি একটু অবাকই হলেন। তবে সৌদীতে যেহেতু এলাকা ভিত্তিক হাট হয় না, তাই এমন বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
বেশ ঘুরাঘুরি করে একটা গরু আমাদের সবার মনে ধরলো। দামাদামী করে ঠিক করা হলো ৫হাজার ৯০০ রিয়াল। তখন রিয়ালের রেট ২২ টাকার কিছু আশেপাশে। মোটামুটি ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মত হয়।
আমরা সবাই পুরা টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। গরুর খামারী কোথা থেকে একটা রং এর কৌটা এনে একটা সাইন দিয়ে দিলেন যে এটা বিক্রি হয়ে গেছে।
আমরা চলে আসছিলাম, আঙ্কেল প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। বললেন গরু না নিয়ে কোথায় যাও? আমরা বললাম গরুতো ঈদের পরদিন নিবো। উনি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে তাহলে দাম কেন দিলে? দাম দিলে তো রশিদ কেন নিলে না?
আঙ্কেলের ছেলে একটু মাথা চুকলে বললো, আমরা কখন আসলে রশিদ নেই না। যাই হোক, আমরা আঙ্কেলের পিড়াপিড়িতে খামারীর ফোন নম্বর নিয়ে ফিরলাম।
ঈদের পরদিন আঙ্কেল আমাদের জানালেন যে উনি হাটে যেতে চান, এবং যখন আমরা দেখবো যে খামারী গরু নিয়ে চম্পট দিয়েছে, তখন আমাদের মুখের অবস্থা দেখতে চান। আমরা কিছু না বলে ৩/৪ জন চলে গেলাম উনাকে সাথে নিয়ে।
বেশ দূর থেকেই আমাদের খামারী ও গরু দেখা যাচ্ছিলো। আঙ্কেল বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। বললেন পুরা টাকাও দিছো, গরুও রেখে আসছে; ব্যাটা বলদ ওখানে দাড়িয়ে কি করে? ভাগে নাই কেন?
গরু নিয়ে যখন ফিরছি, আঙ্কেল অনুরোধ করলেন খামারীকে ১০০ রিয়াল বখশিশ দিতে তার সততার জন্য। খামারী বেশ অবাক হলেন, তবে বখশিশ নিতে দেরী করলেন না।
---------------
শুধু আঙ্কেল না, আমিও যখন প্রথমবার এমনটা দেখেছিলাম, আমিও সমান অবাক হয়েছিলাম। আমার মাথাতে এখনও ঠিকভাবে ধরে না যে দাম পরিশোধ করে গরু রেখে চলে আসলেও একজন খামারী কেন সেখান থেকে ভেগে যায় না! কেমন করে কোন রশিদ ছাড়াই কয়েকদিন পর গরু দিয়ে দেয়। আবার এই কয়দিন গরুর দেখভালও করে!
Photo by nousnou iwasaki on Unsplash