সকাল বেলা মলয় চিঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে একটুও ভালো লাগছেনা বাবুই এর। চিঠি মানেই যত দূঃসংবাদ।
মলয় কাকু তুমি এক কাপ চা হাতে আসতে পারতে, মা খুশি হত। তা না নিয়ে এসেছো এক চিঠি দূঃসংবাদ। মার মন খারাপ দেখতে আমার ভালো লাগেনা।তুমি চিঠি টা নিয়ে যাওনা এখান থেকে । চিঠিটা মার রিডিং রুমে রেখে দু কাপ চা নিয়ে এসো, আমি আর মা বারান্দায় বসে চা খাব আজকে। সাথে টোস্ট বিস্কিট দেবে, আর কালকের প্রথম আলোর নকশা টা নিয়ে আসবে। ঠিক আছে।
মলয় চুপচাপ নিচে চলে গেল। আজ খুকুমনির মনটা বেশ ভালো। খুকুমনির পছন্দের দারচিনি ফ্লেভার চা ,টোস্ট আর নকশা হাতে উপরে এসেই দেখে মা মেয়ে চায়ের টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে। আজ দিদিমনি নীলগীরি যাবে, সাথে বাবুই কে নিয়ে যাবে।এই খুশিতে বাবুই আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। দুপুরের খাবার গুছিয়ে নিতে হবে, বাবুই এর নাস্তা, দিদিমনির প্লান্ট কালেকশন ব্যাগ, ইমারজেন্সি ওষুধের বাক্স, প্রেসার মাপার যন্ত্র আরও কত কি। মলয় তাই অনেক ব্যাস্ত । ফ্লাক্সে গরম পানি নিতে হবে, টি ব্যাগ, কখন আবার দিদিমনি চা চেয়ে বসে। খুকুমনির জন্য মলয় দুইটা রঙিন ঘুড়ি কিনেছে । মলয়ের তো ইচ্ছে করে পৃথিবীর সব খেলনা এনে দিতে কিন্তু এই কম্পিউটারটাই হয়েছে যত নষ্টের মূল। সারাদিন বাবুই কম্পিউটার নিয়েই বসে থাকে ।কোনো খেলনাতেই কোনো আগ্রহ নেই। এখন তো খেলার বয়স, গল্প শোনার বয়স, হাসিখুসি থাকার বয়স।এতটুকু বাচ্চা চুপচাপ কম্পিউটারে কাজ করে দেখলে মলয়ের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
নীলগীরি যাবার রাস্তাটা অনেক সুন্দর। যতবারই নীলিমা ঐ রাস্তায় যায় ভয়ে চুপচাপ বসে থাকে। বাবুই অবশ্য অনেক স্বাভাবিক। ওকে দেখে মনেই হচ্ছেনা গাড়ি এমন ভয়ংকর একটা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা বাবার মত সাহসী হয়েছে। অথবা মার মত। সারাটা জীবন পাহাড়ে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে আসাটাও তো কম সাহসের কাজ না। রাস্তার পাশ দিয়ে হালকা মেঘ ভেসে যাচ্ছে ।বাবুই খুবই এক্সাইটেড। আকাশী রংয়ের একটা ফ্রক পরেছে আজ। নিজেই পছন্দ করে বের করেছে আলমাড়ি থেকে। মেয়েটার আনন্দ দেখে মনটা ভরে যাচ্ছে নীলিমার। নীলগীরি পৌছে মলয় ঘুড়ি গুলো দিয়েছে বাবুই কে। দুপুরে খাবার পর নীলিমা বেড়িয়েছে গাছের খোঁজে। মলয় কে ইচ্ছে করেই সাথে নেয়নি।মলয়ের কাছে ঘুড়ি উরানো শিখছে বাবুই। প্রতিদিন যদি আজকের দিনটার মত এমন সুন্দর হত!
বিকেলে রিসোর্টে ফিরে দেখে বাবুই ঘুড়ি উরানো শিখে ফেলেছে। মনের আনন্দে ঘুড়ি উরাচ্ছে । মাকে দেখেই দৌড়ে কাছে চলে এলো। মলয় ও সাথে সাথে চা নিয়ে হাজির। চা খেয়েই রওনা দিতে হবে। মা মেয়ে অনেক গল্প করবে রাস্তায় যেতে যেতে। আজ অনেক দিন পর গুন গুন করে গান গাইছে নীলিমা। মাকে গান গাইতে শুনে খুব ভালো লাগছে বাবুই এর।
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে....।