অনেকদিন পর পরিচিত শহরে নিজেকে কেমন অচেনা লাগছে। বান্দরবন থেকে সোজা চলে এসেছে ঢাকা এয়ারপোর্টে। কোনো বন্ধু বা আত্মীয় কারো সাথেই যোগাযোগ করতে ইচ্ছা করছেনা। একবার শফিক কে দেখতে যাবে ভেবেছিল। পরে মনে হল থাক না। শফিকের কাছে আমার বান্দরবন থাকা আর বালতিমুরে থাকা কিইবা এমন তফাৎ। তার চেয়ে নীরবে যাওয়াটাই ভালো লাগছে নীলিমার কাছে। মলয় একরকম জোর করেই সাথে এসেছে। বাবুই কে ছেড়ে থাকতে মলয় এর খুবই কষ্ট হবে। মলয়ের মেয়ে শান্তি ম্যালেরিয়ায় মারা যাবার পর থেকে বাবুইয়ের মাঝেই মলয় শান্তিকে খুঁজেছে। আজ বাবুই ও দূরে চলে যাচ্ছে। মলয় বুঝতে পারছে দিদিমনি হয়ত আর কখনই ফিরবেনা। ল্যাবরেটরির সব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে নিথিন নামের একটা পাহাড়ি ছেলে আর এলাকার একটা এনজিওর হাতে। নিথিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে ল্যাবের দায়িত্ব নিয়েছে। বাসাটাও থাকছে। নিথিন থাকবে এই বাসায়। মলয়ই ল্যাবরেটরি ও বাসার দেখাশোনা করবে।নতুন কম্পিউটার কেনা হয়েছে। ইন্টারনেট কানেকশান। বালতিমুরে বসেই সব খোঁজখবর রাখতে পারবে নীলিমা। আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের সাথেও নিথিনের যোগাযোগ করে দিয়েছে।
নীলিমা অবশ্য আপাতত দুই বছরের জন্যই যাচ্ছে। পি এইচ ডির থিওরি শেষ করে আবার ফিরে আসবে। সেরকমই কথা আছে। রিসার্চের সব কাজ শেষ করে আবার ফিরে যাবে আ্যমেরিকায়। রিপোর্ট তৈরীর সময় টা ওখানেই থাকতে চায়।তারপর পর পি এইচ ডি শেষে চলে যাবে অচেনা কোনো শহরে। আবার নতুন পথচলা। চেনা মানুষের ভিড়ে এভাবে পালিয়ে বেড়ানোর চেয়ে অচেনা মানুষের মাঝে হারিয়ে যাওয়াই ভালো। বাবুই বেশ পজিটিভলি নিয়েছে এটাই ভালো লাগছে। মলয় বিদায় দেবার সময় খুব কেঁদেছে। প্লেনে উঠেও খুব সাবলীল বাবুই। মলয় এত কাঁদলো তা দেখে এতটুকু মেয়ে কেঁদে অস্থির হয়ে যাবার কথা। অথচ মেয়েটা কিছুই বলছেনা। ঠিক ওর বাবার মত অনুভূতিহীন, যেদিন বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো সেদিন ও রবি ঠিক এমনই নীরব ছিল। একবারও নিষেধ করনি। রবি কখনই বলেনি ওর জীবনে নীলিমাকে প্রয়োজন,শুধু শুধুই নীলিমা মা বাবা ক্যারিয়ার সব ছেড়ে সংসারের স্বপ্ন দেখেছে।
নীলিমার বুকের ভেতর তীব্র একটা কষ্ট হচ্ছে। মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় নিজের কিছু হয়ে গেলে বাবুইকে কে দেখবে? বাবুইও কি বিষয়টা ভাবে? বয়সের তুলনায় বাবুই অনেক ম্যাচিউর্ড। মাঝে মাঝে ওর এই বাড়াবাড়িটা দেখে খুব রাগ হয়, যেমন এখন হচ্ছে আবার কখনও মনে হয় ওর মত ম্যাচিউর্ড হয়ে বড় হয়ে উঠতে পারলে নীলিমার জীবনটা এমন হতনা। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ফ্লাইট রানওয়ে পার হয়ে আকাশের সীমানায় চলে যাবে। আজ কোনো পিছুটান নেই।একমাত্র সঙ্গী বাবুই কে নিয়ে অজানার পথে পাড়ি দেয়া।