somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: মুক্তি

১৭ ই জুন, ২০১১ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলছে মাসুম। অন্ধকারের মাঝে ওর চোখদুটো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আজ তিন দিন তিন রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে মাসুম। যখন ঘর থেকে বেরিয়েছিল, শোভা তখন অনেক বাধা দিয়েছে।শুধু একটা কথাই মাসুম বলে এসেছে শোভাকে, আমি ফিরে আসব, এক নতুন জীবন নিয়ে ফিরে আসব । সত্যি আজকে রাতটা কোনো রকমে পুলিশ আর বিপক্ষ দলের হাত থেকে বাঁচতে পারলেই এক নতুন জীবন। শোভাকে নিয়ে চলে যাবে এক অন্য শহরে, অচেনা মানুষের ভীড়ে। মুছে ফেলবে জীবনের ঘৃন্য এই অধ্যায়। অস্ত্র, সন্ত্রাস, রাজনীতি সবকিছু। দলীয় বড়ভাইরা সরকম আশ্বাসও দিয়েছে। এটাই মাসুমের শেষ অপারেশন। আজ অবশ্য মাসুমকে দলের খুব প্রয়োজনও ছিল। গুলি করতে মাসুমের হাত একটুও কাঁপেনা। গত দু'দিনে মাসুম দু'জন এবং আজও একজনকে খুন করেছে। ভয় জিনিসটা ওর মধ্যে বিন্দু মাত্র সময়ের জন্যও ছিলনা। তাই খুব সহজেই সে হয়ে উঠেছে বড় বড় নেতাদের খুব কাছের মানুষ। খুব প্রয়োজনীয় অস্ত্র। বড় ভাইদের কথায় অনেক লাশ ফেলেছে সে রাজপথে । সে সব কথা বড়ভাইরা মনেও রেখেছে। তাই আজকের পর এক নতুন জীবনে মাসুমকে তারা স্বাগতও জানিয়েছে। বিনিময়ে শুধু এই তিনদিন মাসুমকে জীবন হাতে নিয়ে লড়তে হয়েছে। আজ যে বিপক্ষ দলও অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়বে ওদের উপর তা হয়ত বড় নেতারা আগে থেকেই জানত। আর তাই সকালে শোভা ক্লিনিকে শোনার পরও মাসুমকে দলীয় অফিস থেকে যেতে দেয়নি।

মাসুমের ব্যাপারটা ভালোলাগছেনা। এভাবে অতর্কিত হামলায় ওদের জীবনও যেতে পারত। নেতারা এভাবে ওদের জীবন নিয়ে কেন খেলল তা মাসুম বুঝতে পারছেনা। আরও একটা ব্যাপার অস্পষ্ট ঠেকছে মাসুমের কাছে। অফিসের ভিতরে ওরা আলো জ্বালেনি , কোনো শব্দও করেনি, আর ওদের দলীয় অফিসে আশ্রয় নেয়ার কথা দু'একজন বড়ভাই ছাড়া আর কারো জানার কথা না। তাহলে বিপক্ষ দলের ছেলেরা কিভাবে জানল? কি জানি এত কিছু আর ভাবতে ভালোও লাগছেনা মাসুমের। এসব এখন মাসুমের জীবনের পুরোনো অধ্যায় , আর দলের কেউ নিহতও হয়নি এই ঘটনায়। শুধু মারুফের বা হাতে একটা গুলি লেগেছে। বরং বিপক্ষ দলেরই একটা লাশ ফেলে দিয়েছে মাসুম। একদম কপালে তাক করে গুলি চালিয়েছে।

আজ খুন করে মাসুমের খুব অনুশোচনা হচ্ছে। ঠিক যেদিন প্রথম খুন করেছিল সেদিনের মত। কিন্তু সেদিনও কোনো উপায় ছিলনা , আজও না। জীবন বাঁচাতেই এই দু'টো খুন করতে হয়েছে মাসুমকে। মাসুমের ভালো লাগছে এই ভেবে যে এই বিভীষিকাময় খেলা ওকে আর খেলতে হবেনা। আজ থেকে মাসুমের মুক্ত জীবন। প্রাণ ভরে মুক্তির স্বাদ নিতে ইচ্ছা করছে। যদি শোভা এখন কাছে থাকত তাহলে চিৎকার করে বলত শোভাকে , আমি ফিরে এসেছি, এক নতুন আমি। শোভা এখন ক্লিনিকে। সকালে অপারেশন হয়েছে। কি জানি এখন কেমন আছে শোভা আর কেমনই বা হয়েছে ওদের মেয়ে।

সন্ধ্যায় গোলাগুলির শব্দে এলাকায় কেমন একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে কেমন যেন গা ছমছম করা একটা নিস্তব্ধতা। গলির দোকানপাট সব সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ হয়ে গেছে। গুলি ছোরার পর যখনই বুঝতে পেরেছে লক্ষ ভুল হয়নি , সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে এসেছে মাসুম। আজ আর কোনো খুন করার ইচ্ছা ছিলনা মাসুমের। শোভাকে বিয়ে করার পর অনেক কষ্ট দিয়েছে কিন্তু কথা দিয়েছিল সন্তানের বাবা মাসুম কোনো মানুষ খুন করবেনা। কিন্তু সে কথা মাসুম রাখতে পারল না। এক সন্ত্রাসীকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিল শোভা। কত কষ্টই না করতে হয়েছে তাকে মাসুমের সংসারে। ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলনা। কিন্তু খুনের আসামি সন্ত্রাসী মাসুমকে প্রায়ই পালিয়ে বেড়াতে হত। কিভাবে যে সে সময় গুলো পার করেছে শোভা তা শুধু শোভাই জানে। বাড়িওয়ালা ভদ্রমহিলা শোভাকে নিজের মেয়ের মত আপন করে নিয়েছিলেন বলেই হয়ত সে এখনও বেঁচে আছে। কাল রাতেও তিনি শোভাকে ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছেন। সব দেখাশোনাও তিনিই করছেন।

অন্ধকার গলি যেন শেষ হতেই চায়না। অনেক অলিগলি পেরিয়ে এখন মাসুম ক্লিনিকের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। আর একটু পথ বাকি। এই একটু সময় মনে হচ্ছে অনন্তকাল। বড় রাস্তার কাছে এসেই মাসুম বুঝতে পারল বড় রাস্তায় অনেক পুলিশ। ক্লিনিকের কাছে এত পুলিশ কেন? তাহলে পুলিশ কি জানতে পেরেছে যে খুনটা মাসুমই করেছে। কিন্তু কিভাবে ? সবাই তো সাথে সাথেই পালিয়ে গেছে। পুলিশ নিশ্চই বুঝতে পেরেছে মাসুম যে কোনো ভাবেই শোভাকে দেখতে ক্লিনিকে যাবে, আর তাই এখানে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এতটা পথ পাড়ি দিয়ে ক্লিনিকের এতো কাছে এসে শোভাকে দেখতে পাবেনা ভাবতেই মাসুমের মাথার ভিতর সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ পেছন থেকে কয়েকজনের পায়ের শব্দ শুনে খুব ভয় পেয়ে গেল মাসুম, তাহলে কি পুলিশ তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে? গলার আওয়াজ শুনে চিনতে পারলো মাসুম এত ওদের দলেরই এক বড় ভাই। খুব অবাক হল মাসুম, জীবনে এই প্রথম সে এতটা ভয় পেয়েছে। শীতল একটা ভয়। বড় ভাইয়ের ডাক শুনে গলির মুখ থেকে কিছুটা পিছিয়ে এলো। পাশের ছেলেটা খানিকটা হুংকার ছেড়ে বলল , গলির মুখে কেন গিয়েছিলি? একটু হলেই তো পুলিশ ধরে ফেলত। আজকের অপারেশনে ছিলনা ছেলেটা। হঠাৎ কোথা থেকে এসে হাজির হল বুঝতে পারলনা মাসুম। আর এই ছেলেতো রীতিমত সমীহ করে চলত তাকে, আজ এভাবে কথা বলছে কেন? মাসুম বুঝতে পারল যেহেতু সে এই রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে তাই তাকে আর কেউ ভয় পায়না। পাশের আরেকটা ছেলে বলে উঠলো, ওদের একটা লাশ পড়েছে আজ, আমাদেরও একটা লাশ দরকার মাসুম ।
মাসুমের কথায় কোনো তেজ ছিলনা। সেই তেজী মাসুম আজ করুনকন্ঠে বড় ভাইকে বলল, এটাই তো ছিল তার শেষ অপারেশন, তার তো আর কোনো নতুন অপারেশনে যাবার কথা ছিলনা। সে তো এখন ওদের কেউনা, এখন তো মাসুম মুক্ত।
বড় ভাইয়ের কন্ঠস্বর কেমন ভয়াবহ শোনাল মাসুমের কাছে। তিনি মাসুমের কাঁধে হাতরেখে একটি কথাই শুধু বললেন, একথা তো শুধু আমরা জানি, আর কেউ তো জানেনা।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×