somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজ্ঞ বালক
আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অণুগল্প: প্রেমিক

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মফঃস্বলের এই বাসাটার চারপাশে অনেক গাছপালা। সবগুলোর নামও জানি না আমি।



হৃদয়কে জিজ্ঞেস করাতে ও বেশ কিছু চিনিয়েছিল, কিন্তু তাও সবগুলো গাছের নামই আমি জানতে চাচ্ছিলাম। এই বাসার একজন মালী আছে, তাকেই ধরে বসলাম। হাজার হোক মেমসাহেব বলে কথা। আমাকে নিজের হাতে সবগুলো গাছের নাম, প্রকৃতি, ফল-ফুল, বিচিত্রতা শিখিয়ে তবে ক্ষান্ত দিলেন তিনি। কিন্তু, সেই হারুণ কাকাও এই গাছটার নাম বলতে পারলেন না। তার এই বাসায় আসার আরও অনেক আগের থেকেই নাকি এই গাছটা এখানে আছে। তবে এরকম গাছ নাকি আর একটাও নেই এই শহরে। এমনকি ডিসি সাহেব একবার গাছটার কলম করে নিজের বাসায় লাগিয়েছিলেন। কাজ হয় নি, মরে গিয়েছিল অকালেই চারাগাছটা।

এ সব জানার পর থেকেই, গাছটার জন্য আমার ভীষণ মায়া হত। গাছটা কি ভীষণ একা, কি নিঃসঙ্গ। হৃদয় অফিসে চলে গেলে আমি ঘরের কাজ শেষ করে এই গাছের ছায়াতে এসে বসি। হারুণ কাকা একটা ছাউনি বানিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন, কিংবা একটা চেয়ার নিয়ে এসে বসার কথা। কিছুই শুনি নি আমি। এই গাছের ছায়াতেই আমার দিব্যি হয়ে যায়। নীচে পরে থাকা পাতার বিছানা, আর ঘাসের চাদরই আমার জন্য যথেষ্ট।

বাতাসেও যেন এই গাছের পাতাগুলো নড়ে না। একদম শান্ত, ধীর, স্থির। কোন পাখিকেও দেখলাম না এই গাছের ডালে এসে বসতে। ফুল কিংবা ফলের বালাই নেই বলেই হয়তো ওদেরও কোন আগ্রহ জন্মায় না। অসুবিধে কি, আমি তো আছি - ওর বন্ধু। এখন এই গাছের নীচে এসে প্রায়ই শুয়ে থাকি আমি। হারুণ কাকা হৃদয়কে আমার এই পাগলামির কথা বলেছেন, ও অবশ্য প্রশ্রয়ের হাসি দিয়ে উড়িয়েই দিয়েছে। মাঝখান থেকে বদির মা-কে এখন প্রতিদিন এই গাছতলাটাও একটু সাফসুতরো করে যেতে হয় আর কি। শুয়ে শুয়ে আমি ঠাণ্ডা মাটির স্পর্শ নেই। ঘাসের নীচে লুকিয়ে থাকা মাটি। সেই মাটিতে কেমন গুমোট-প্রাচীন গন্ধ। গন্ধটা যেন আমার ভেতরটা আস্তে আস্তে দখল করে নিচ্ছে, আমি যেন বহুকাল আগের কোন প্রাগৈতিহাসিক মানবী। এই গাছের সামনে নৈবদ্য সাজিয়ে প্রতিদিন বন্দনা করে চলছি এই অতীতহীন অস্তিত্বের।

এখন গাছটা আমার সাথে কথা বলে। আমাকে কাছে ডাকে। গাছটাকে বৃষ্টির মধ্যে জড়িয়ে ধরে ছিলাম আমি, গায়ে একটা সুতোও ছিল না তখন। হারুণ কাকা, বদির মা বাসায় ছিল না আর সেই সুযোগে এই বন্যতা বের হয়ে এসেছে আমার সুশীল চামড়ার নীচ থেকে। সে এক বিস্ময়কর অনুভূতি। ভীষণ তীব্র, আবেগী এক জলোচ্ছ্বাস শেষে আমি উপুড় হয়ে শুয়েছিলাম গাছটার নীচে। বৃষ্টিতে ভিজে মাটিটা তখন নরম, গন্ধটাও মিষ্টি। গাছটা আমাকে নির্দেশ দিয়েছিল আর আমি মাটি খুঁড়ে চলছিলাম যতক্ষণ না শিকড়ের একটা টুকরো দেখা যায়। সেটাকে ধরে ফিসফিস করে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম আমি। কত প্রশ্ন করেছে আমাকে, আমি অবিরাম উত্তর দিয়েছি। নিজের কথা, বাবা-মা-ভাই, হৃদয়ের কথা, নিজের ফেলে আসা জীবনের কথা। বদলে আমাকে নিজের অতীত ইতিহাসের কথা বলেছে গাছটা, পৃথিবীর ইতিহাসের কথা, সৃষ্টি আর ধ্বংসের কথা, শুরুর আর শেষের কথা। সেই সাথে খাবার চেয়েছে সে। এসব মাটি আর পানিতে সাধ মেটে না তার। লালচে কালো সেই তরলটা চাই তার। রক্ত চাই, অনেক অনেক রক্ত। পিচ্ছিল, চটচটে, পাঁশুটে গন্ধের সেই তরল।

আমার মধ্যে অন্য এক শক্তির উপস্থিতি টের পেলাম আমি। আমি যেন এক সদ্য প্রেমে পড়া কিশোরী। বন্য আর জান্তব সেই অনুভূতি আমাকে স্থির হতে দেয় না, তাড়িয়ে বেড়ায়। আমার ভেতরে থাকা শক্তিটা আমার ভিত কাঁপিয়ে তোলে, ভাবায়, তৃষ্ণার্ত করে তোলে। আমি জানি, রক্ত চাই আমার প্রেমিকের। আমারও চাই। রক্ত আমাকে নতুন জীবন দেবে। জীবনের অন্তেই তো নতুন শুরুর প্রতিশ্রুতি। আর এভাবেই নিজেকে সার্থক করে তুলতে পারবো আমি, উপযুক্ত করে তুলতে পারবো আমার প্রেমিকের জন্য। গাছটার নীচে থইথই পানিতে টিপটিপ পড়তে থাকা বৃষ্টিতে নগ্ন গায়ে শুয়ে অবিরাম নিজের নতুন জন্মের কথা ভেবে কাঁদতে থাকলাম আমি।

রক্তই সুন্দর, রক্তের শক্তি অবিনশ্বর, অসীম। এক পাত্র থেকে আরেক পাত্রে স্থানান্তর হয় সেই সুপ্ত শক্তি। অমরত্বের ধারক ও বাহক, জীবনীশক্তির কেন্দ্রবিন্দু। নিজের নতুন প্রেমিক এই বৃক্ষকে নিজের পুরানো ও প্রথম প্রেমের রক্ত দিয়ে স্নান করাতে হবে আমাক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:০৫
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×