মরীচিকা (পর্ব-২৬)
সেবার বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় পার্বিক পরীক্ষার পর বিদ্যালয়ের সভাপতির নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এক জরুরী সভা ডাকলেন। ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে সভাপতির শরীরী ভাষাতে বোঝা যাচ্ছিল যে উনি বিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতির উপর খুব একটা খুশি নন। এমনিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উনি নিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখে চলতেন। নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে স্টাফদের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতেন না। সকাল-সন্ধ্যাতে আমাদের প্রত্যাহিক সম্বোধনে কেবল মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেন। ওনাকে কাউকে কোনদিন সুপ্রভাত বা শুভ সন্ধ্যা বলতে শুনিনি। মাঝে মাঝে যখন খোশমেজাজে থাকতেন তখন অবশ্য স্টাফদের প্রতি বেশ আন্তরিক মনে হলেও মোটের উপর গাম্ভীর্যের মধ্যে যেন প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক প্রকাশ পেত।
স্টাফ কাউন্সিলের সভায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা-সংক্রান্ত মানোন্নয়নের গুচ্ছ প্রস্তাবের সঙ্গে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল শিক্ষকদের পাঠদান সম্পর্কে সভাপতির অসন্তোষ প্রকাশ করা। সর্বশেষ পরীক্ষায় শ্রেণী ধরে ছাত্রদের প্রাপ্ত নম্বর ধরে ধরে উনি দেখাতে পারলেন যে শিক্ষকরা পাঠদানের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক নন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বলে কথা! এলাকার একজন সম্মানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসাবে ওনার বেশ সুনাম আছে। কাজেই ওনার মূল্যায়নকে অযৌক্তিক বলার মত ধৃষ্টতা কারো ছিল বলে মনে হয় না। সেদিনের ওনার আচরণে অন্যান্য অনেকের মতো আমিও বেশ অপমান বোধ করেছিলাম। মিটিংয়ে উনি পরামর্শ দিলেন পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রয়োজনে নিজেরা লিখে দিয়ে সর্বাধিক নম্বর দানের ব্যবস্থা করতে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিদ্যালয়ের বাৎসরিক অভিভাবক সভা আসন্ন।ইতিমধ্যে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি মনোনীত করে আমন্ত্রণপত্র প্রেরণের কাজটি সমাধা হয়ে গেছে। অভিভাবকদের আমন্ত্রণ পর্বটিও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারই মধ্যে সন্তোষজনক ফলাফল না হলে নির্দিষ্ট দিনে অভিভাবক মিটিং করা যে সম্ভব নয় সে কথা উনি আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দিলেন। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রেসিডেন্ট সাহেবের মনোভাবটি আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন।
সভাপতির নির্দেশ অনুসারে অভিভাবক মিটিংকে সামনে রেখে রাত জেগে ছাত্রদের লেখা উত্তরপত্র গুলো প্রয়োজনে বাম হাত দিয়ে স্থানে স্থানে লিখে যতটা সম্ভব সঠিক করার ও নম্বর দানের ব্যবস্থা করা হয়। লক্ষ্য ছিল সর্বাধিক নম্বর প্রদান করা ।কয়েকজন ছাত্র আশাতিরিক্ত নম্বর বৃদ্ধিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। তবে বেশিরভাগই পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরে অত্যধিক উৎফুল্ল হওয়ায় বাকিদের সন্দেহের চিন্তা ঢাকা পড়ে যায়। মাত্র কদিনেই ছাত্রদের এরূপ মানোন্নয়নে সভাপতি অত্যন্ত খুশি হলেন। সভার উদ্বোধনী ভাষণে উনি উল্লেখ করলেন সে কথা। ইচ্ছা থাকলেও অত্যন্ত পরিশীলতার মধ্যে যাওয়ার কারণে শিক্ষকদের আশানুরূপ বেতন দিতে না পারায় যারপরনাই দুঃখিত কিছুটা ব্যথিত অনুভূতির কথাও প্রকাশ করলেন । সামান্য বেতনেও শিক্ষকরা যে নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদেরকে উজাড় করে দেশ ও জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এজন্য বারেবারে ধন্যবাদ দিতেও কুন্ঠিত হলেন না। উনি আরো উল্লেখ করলেন ভুখাপেটে কখনোই লেখাপড়া হয় না, তেমনি হয় না পাঠদানের মত পবিত্র কর্মও। শিক্ষকদের পেটে যথেষ্ট খিদে আছে। একটি সম্মানীয় বেতন কাঠামো দিয়ে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান না দেওয়া পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত বিচলিত। বিদ্যালয়ের ফান্ডের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধিতে উপস্থিত অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি সহযোগিতার আহ্বান জানালেন। কয়েকজন অভিভাবক অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে ওনার আবেদনে সাড়া দিলেন। সভাস্থল থেকেই বেশ কিছু ডোনেশন আদায়ের প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন। বেশ কিছু কমিটি গঠিত হলো। যে কমিটিগুলোর মাথায় বিভিন্ন অভিভাবকদের বসিয়ে দিলেন। গঠিত হলো ছাত্রকল্যাণ তহবিল। দুঃস্থ অথচ মেধাবী ছাত্রদের বিনামূল্যে পাঠদানের ব্যবস্থার কথা ফলাও করে ঘোষণা করলেন। সেদিনে এরকম একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন ম্যানেজমেন্টের চিত্রটি আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল।
সভাস্থলের কয়েকজন অভিভাবককে দেখলাম বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করতে। আর হবে নাই বা কেন। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে নিজেদের সন্তানদের এমন চোখ ধাঁধানো উন্নতিতে শুধু ওনাদের বলে নয় যে কোন মানুষের চোখ যে কপালে উঠতে বাধ্য।কিন্তু আমি যে মানসিকভাবে বেশ সমস্যার মধ্যে পড়েগেলাম। এমন মিথ্যা বিজ্ঞাপনে শামিল হওয়াতে নিজের অপরাধবোধের মাত্রাটি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। প্রচন্ড অসহায় লাগছিলো সভাস্থলে মিথ্যার বেসাতির মধ্যে নিজের ঠিক করণীয় কি- সেটি ভেবে। তবে একজন অভিভাবকও আমার বিষয়ের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ না করাতে কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছিলাম। পরে বুঝেছিলাম যে প্রত্যেক বছর দ্বিতীয় পার্বিক পরীক্ষার পর অনুষ্ঠিত অভিভাবক সমাবেশে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন তুলে ধরতে সভাপতি এমনই ব্যবস্থা করে থাকেন। পরে বার্ষিক পরীক্ষার আগে বিদ্যালয়ে পুজোর ছুটি পড়লে, ছাত্ররা যে যার বাড়িতে চলে যায়। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার কারণে বা পড়াশোনার ঘাটতি হওয়ার কারণে বার্ষিক পরীক্ষায় নিজেদের যথাযথভাবে তুলে ধরতে অপারগ হলে, অভিভাবকদের আর কিছু বলার থাকে না।
শেফালী ম্যাডামের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক দূর গড়িয়েছে। পূর্বেই উল্লিখিত দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর করার যুক্তি দেখিয়ে প্রায়ই বেরিয়ে যেতাম। দুজনে একসঙ্গে কখনোই বার হতাম না। সাধারণত দুজনের রওনা হওয়ার মধ্যে আধঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিটের মত গ্যাপ অনুসরণ করতাম। বিদ্যালয় চত্বরে আগের মত আর কথা বলতাম না। অকস্মাৎ সামনে পড়লে যে যার মত পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম। উল্লেখ্য বিদ্যালয়ে একে অপরকে এড়িয়ে চলার পরামর্শটি ম্যাডামই দিয়েছিলেন।সুতরাং সহজেই অনুমেয় যৌক্তিকতার কারণে প্রস্তাবটিতে সম্মত না হওয়ার কোন কারণ ছিল না।
বেশ কিছুদিন ডেটিংয়ের পর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম যে ম্যাডামের পছন্দের রং ছিল ব্লু। পেন্সিল আকারের ভুরুদুটি টেনে চোখের কর্নার পর্যন্ত আঁকা থাকত। যা চোখ দুটিকে করে তুলতো অত্যন্ত মায়াবী এবং আকর্ষণীয়। মাথায় একরাশ ঘন কালো চুল ,দুপাশের লক করে কাটা। অতীব ফর্সা মুখশ্রীতে কপালের শোভা পেত ঈষৎ সরু লম্বাটে কৃষ্ণ বর্ণের একটি টিপ যা সমগ্র মুখমন্ডলের শোভা বহুগুণ বাড়িয়ে দিত। ঠোট দুটি আচ্ছাদিত থাকতো হালকা গোলাপি রঙের লিপগার্ডে। নীলের উপরে সুদৃশ্য কারুকার্য করা কুর্তি বা চুরিদার পাঞ্জাবি ছিল ম্যাডামের অন্যতম পছন্দের পোশাক। পছন্দের রংয়ের দিক দিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে সাদৃশ্য ছিল। আমার জিন্সের প্যান্টগুলির বেশিরভাগই ছিল ডিপ ব্লু রংয়ের। একদিন কথা প্রসঙ্গে সে কথা উঠতে ম্যাডাম খুব খুশি হলেন। সেদিনেই আমি ম্যাডামের কাছে পরিচিত হলাম নতুন নাম নীল নামে। ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে এরকম নামকরণে প্রত্যেকেরই বোধহয় শিহরণ জাগে। যেমন খুশির জোয়ারে আমিও তখন গিয়েছিলাম ভেসে। উল্কি দিয়ে আমি শরীরে কোথাও লিখিনি ঠিকই কিন্তু ব্লু রঙ যে হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন পেতে নিয়েছিল তা অস্বীকার করি কি করে। যদিও হৃদয়ের সে রং কেবল একজনকে দেখানোর মধ্যেই পরিতোষ প্রাপ্তি ছিল।
আমরা তখন রীতিমত নাম কাটাকাটি খেলাতে মেতে উঠেছি। আর এর মধ্যে কখন যে 'আপনি' থেকে 'তুমিতে' চলে এসেছি সে বিষয়ে আমাদের কোন হুশ ছিল না। যদিও নামে কি আসে যায়! তবে তার মধ্যে যে প্রেম আছে, আছে নিবেদন যা আমাদেরকে রীতিমতো রোমাঞ্চিত করে তুলেছিল । সে সময় নামই যেন হয়ে উঠেছিল আমাদের প্রেমের সাগরে বিচরণের মাধ্যম। শেফালী নামটিও যে আমার খুব ভালো লাগতো তা নয়। মুখ ফুটে বলতে পারি নি সে কথা কোন দিন। নাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে খেলতেই মনের অজান্তেই আমিও ওনাকে আমার পছন্দের একটি নাম দেই শেলী। খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছিল সেদিন, যেদিন নিজের নামের মধ্যেই নিহিত এমন মিষ্টি নামটি প্রথম আমার মুখ থেকে শুনেছিল। এক বাঁধাহীন উচ্ছ্বাসে আমিও নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম রূপনারায়ণের চরে।
যদিও আমাদের মধ্যে বাঁধা ছিল পাহাড়প্রমাণ। একে অপরের পারিবারিক সমস্যাগুলি সম্ভাব্য মিলনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও এক ভালোলাগার আবেশে ডুবে থাকতাম। যেখানে সর্ব প্রকার যুক্তিতর্ক অসম্ভাব্যতা হার মানতো। নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবেও নিত্য নতুন আবিষ্কার করতাম নির্জন স্থানের। হাঁটতাম কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে।সব মানুষের গায়ে একটি নির্দিষ্ট গন্ধ থাকে। শেলীর গায়ের সুঘ্রাণ পার্শ্ববর্তী বাতাসকে সুরভিত করত। আমি প্রাণ ভরে গ্রহণ করতাম তার গায়ের সুবাস। মাদকতা মেশানো ঘ্রাণ যা আমাকে পাগল করে তুলতো। যে ঘ্রাণে ভর করে পৌঁছে যেতাম কোন এক নীল পাহাড়ের চূড়ায়। কোন বাঁধাকে তখন আর অসম্ভব বলে মনে হতো না।
আমরা সিমলা দেখিনি কিংবা দেখিনি ভূস্বর্গ কাশ্মীরও। কিন্তু পেয়েছিলাম সুনীল আকাশের নিচে রূপনারায়ণের দিগন্ত বিস্তৃত চর।যার মধ্যেই আমরা পেয়েছিলাম ভালোবাসার অপার মিলনক্ষেত্র। নদীর ধারে বসে ঢেউ গুনতাম। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতাম দূর থেকে আগত ছোট বড় মাঝারি বিভিন্ন ঢেউ ও তাদের আস্ফালনের দিকে। কখনোবা জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ মাতিয়ে তুলত আমাদেরকে। নদীর জলের মায়াবী শব্দ হিন্দোলিত করত আমাদের হৃদয়কে। নয়ন ভরে দেখতাম শেলীর আদরমাখা চাহনিতে। মায়াজালে পাড়ি দিতাম দূরে কোন নীল সাগরের দেশে। কখনো বা উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকতাম দূরে উড়ে যাওয়া এক পাল ধবল বকের দিকে।। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেদের সীমাবদ্ধতার কারণে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকতাম একে অপরের দিকে। কল্পনার জগত ছেড়ে তখন আমাদের যেন আগমন ঘটতো বাস্তবের জগতে। সময়গুলোকে কিছুতেই বশ মানতে পারতাম না। কারণ ততক্ষণে রক্তিমদেব একটু একটু করে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তে শুরু করেছে । আমরাও এক প্রকার বাধ্য হতাম অতৃপ্ত মন নিয়ে হাতে হাত ধরে ফেরার রাস্তা ধরতে। পৃথিবীর সুন্দরতম মুহূর্তটা আমাদের এভাবেই কেটে যেত। এদিকে পশ্চিম দিগন্তে রক্তিমদেব তখন ক্রমশ দিগন্ত রেখার দিকে' মিলিয়ে যেতে চলেছে। আমরাও দ্রুত পা বাড়াতাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে। ফিরতামও আগ পিছু করে। উদ্দেশ্য ছিল কোন ভাবেই যেন বিদ্যালয়ের কারো সামনে না পড়ি।
শেলীকে আমার কখনো ভাবুক বা কল্পনাপ্রবণ বলে মনে হয় নি। স্বাভাবিক কথাবার্তার মধ্যে চূড়ান্ত ব্যক্তিত্ব শালিনী বা প্রত্যুৎপন্নমতির পরিচয় পেয়েছি বারে বারে। অস্বীকার করবো না যে একবারে প্রথমদিকে ওর হৃদয়ে ভালোবাসা নামক শব্দটির অস্তিত্ব আছে কিনা আমার বেশ সন্দেহ জেগেছিল। আরো পরে স্বাভাবিক আলাপচারিতায় ওর প্রখর ব্যক্তিত্বের পরিচয় পেয়ে ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল।এমন একজন মানুষের কাছাকাছি আসার সুবাদে আবিষ্কার করি মানুষের হৃদয়ের মধ্যেই আছে আরেকটি হৃদয়। আরেকটি প্রকোষ্ঠ যেখানে প্রবেশাধিকার কেবল একজনেরই থাকে।
সেদিন শেলী কথা বলতে বলতে ব্যাগ থেকে রাংতা মোড়া একটি উপহার বার করাতে উৎসুক্য মনে থাকলেও নিজেকে ধরা না দিতে দৃষ্টি আটকে রেখেছিলাম দূরে নদী বক্ষে জেলেদের মাছ ধরার দিকে।
(চলবে....
মরীচিকা (পর্ব-২৪)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২০ সকাল ৯:২১