আশির দশকের একটি সাড়া জাগানো হলিউডি মুভি “জজ” (Jaws)। সিনেমাটি নিশ্চয়ই দেখেছেন! হাঙ্গরের ভয়ঙ্কর হিংস্রতা নিয়ে তৈরি এই ছবিটি এতটাই আলোড়ন ফেলেছিল যে শুধুমাত্র সিনেমাটি দেখে আতঙ্কিত হয়ে ঐ সময়টাতে বিশ্বব্যপি সমুদ্রে স্নানকারীর সংখ্যা গড়ে অর্ধেকেরও বেশী কমে এসেছিল।
আমিও ভাবছি এমন একটি মুভি বানাবো। ব্যবসা পাতির যা অবস্থা? সিনেমা তৈরী করে দেখি কি করা যায়!
কি? সিনেমাটির নাম কি হবে জানতে চাইছেন? ও, হ্যা, তাহলে বলে দিচ্ছি, সিনেমাটির নাম হবে “ভেন্ডিং মেশিন (Vending Machine)”, ভালো করে মনে রাখবেন – “ভেন্ডিং মেশিন”। ভেন্ডিং মেশিন হচ্ছে এমন একটি মেশিন যাতে নির্দিস্ট কয়েন ঢুকালে সফট্ ড্রিঙ্কসের ক্যান, কফি বা স্ন্যাক্স বের হয়ে আসে। আরে বাবা হলিউডি মুভিগুলোতে তো হর হামেশাই এই মেশিনগুলো দেখাচ্ছে!
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমার এই সিনেমাটি হিট করার সম্ভাবনা “জজ” সিনেমাটির চাইতে চার গুণ বেশী। জানেন, কেন? কারণ- প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ হাঙ্গরের আক্রমণে মারা যায় তার চাইতে চার গুণ বেশী মানুষ মারা যায় ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহারে। হোল এবার? সহজ হিসাব। জলবৎ তরলং।
ফ্রেডরিক বাউর (Fredric Baur)
“ফ্রেডরিক বাউর” এর নাম শুনেছেন? শুনেন নি, তাইনা? আমিও জানি শুনেন নি। শুনলে কি আর এই সিরিজ পড়তে আসেন?
তাহলে বলি, “ফ্রেডরিক বাউর” সাহেব প্রিঙ্গলস (Pringles) ক্যানের আবিস্কারক। প্রিঙ্গলস্ ক্যান চিনেন নি? ঐ যে প্রিঙ্গলস্ চিপস্ যে পেট চাপানো ক্যান গুলোতে থাকে, সেগুলো। এবার চিনেছেন?
তো এই চিপস্ এর ক্যান এর আবিস্কারককে নিয়ে প্যান প্যানানোর কারণ হচ্ছে বেচারা যখন ২০০৮ইং সনে মারা যান তখন তার দেহভস্ম এরকমই একটি ক্যানে ভর্তি করে মাটি চাপা দেয়া হয়। কি পরিহাস? একে নিদারুন বলবেন নাকি দারুন বলবেন, তা আপনাদের ব্যপার। আমি কি বলব জানেন?- যে ব্যাটা গান পাউডার আবিস্কার করেছিলেন তার অন্তিম সমাপ্তি কি হয়েছিল, জানেন নাকি? নাকি তার দেহ ভস্ম গান পাউডারের সাথে মিশিয়ে.........
প্রশ্নের বাহার
একটি অদ্ভুৎ মানসিক রোগ - প্রশ্নভীতি। সাধারণত বিবাহিত এবং সন্তানের বাবা-মা দের মধ্যে এই রোগটি হতে দেখা যায়।
রোগটি বেশীদিন স্থায়ী হয় না, বিশেষ করে সন্তান যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, মানে সন্তান চার বছর পার করতে থাকে আর বাবা-মায়ের রোগটি কমতে থাকে। এই রোগীকে কোন প্রকার প্রশ্ন করা হলে অস্বস্তি বোধ করেন, আর করবেনই না কেন? জানেন? চার বছর বয়সের একটা বাচ্চা দিনে গড়পড়তা কয়টা প্রশ্ন করে? বেশী না, মাত্র “চারশ” টা। এবার বোঝেন ঠ্যালা, সন্তানের এত্ত প্রশ্নের জ্বালায় বেচারা রীতিমত প্রশ্নভীতি রোগেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
এ তো গেল বিশেষজ্ঞদের কথা। এবার আমার কথা বলি, আমারও এমন রোগ হয়েছিল, তবে ছোটবেলায়। এই যাহ্, আপনারা যেন আবার ভেবে বসবেন না যে ছোটবেলায়ই আমি বাচ্চার বাবা হয়ে গিয়েছিলাম, আমার রোগটি বাচ্চাদের জ্বালায় হয়নি, হয়েছিল বড়দের জ্বালায়, মানে ঐ স্কুলের টিচারদের জ্বালায় আরকি। টিচাররা যে কি অদ্ভুৎ অদ্ভুৎ প্রশ্ন করে বসত? আরে বাবা আমি পড়া পড়ে আসিনি ঠিক আছে, পিঠে দু চারটি ঘা দিয়ে দাও, ল্যাঠা চুকে গেল। তা না, “বল্ কেন পড়া পড়ে আসিসনি, বল্?” আপনারাই বলেন, এটা কোন প্রশ্ন হোল? কেন? উনারা বুঝেন না, কেন পড়া পড়ে আসিনি? উনারা কি আমাদের বয়স পার করে আসেন নি? উনারা কি পড়া ফাঁকি দেন নি? আরে বাবা, উনারা যদি ফাঁকি নাই দিতেন তাহলে কি আর স্কুলের টিচার হন? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যেতেন না? সত্যি বলতে কি? মারের চেয়ে প্রশ্ন গুলোই অস্বস্তিকর লাগত বেশী।
মশা
স্কুলের প্রসংগ যখন আসল তখন কিছু কথা বলেই ফেলি। স্কুলে পড়ার সময় কেন জানি ক্লাসের বইগুলোর চেয়ে বাইরের বইগুলোর প্রতিই বেশী আকর্ষণ ছিল। আমার এই দূর্বলতাটা আমার স্কুলের কোন টিচারেরই অজানা ছিল না। মনে পড়ে, তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি, বিজ্ঞান ক্লাসের টিচার হঠাৎ করে আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন,”এই মশার জেন্ডার গুলোর নাম বল”, হঠাৎ এমন প্রশ্নে ভিরমি খেয়ে যাই আমি। মনে মনে উপযুক্ত তথ্যের লিঙ্ক ব্রাউজ করতে থাকি। স্ক্রিনে আলেকজান্ডার দ্যুমার উপন্যাসের একটা চরিত্রের নাম ভেসে উঠে – রাজা চতূর্থ ফিলিপস্। ফিলিপস্এর নামের সাথে মশার জেন্ডারের উত্তেরর একটা মিল আছে, এটা পড়ার সময়ই আমার মেমোরিতে সেইভ করে রেখেছিলাম, ডাটা টা খুব কাজে লাগে আমার। একটা উত্তর বের হয়ে আসে মুখ দিয়ে – “অ্যানোফিলিস্”। “সাবাস্”, স্যার বলে উঠেন, “এবার আরেকটা বল”। আবার মেমোরি হাতড়াতে থাকি – ফিলিস্, ফিলিস্, ফিলিস্, ধুম্ করে আরেকটা উত্তর বের হয়ে আসে মুখ দিয়ে – “স্যার, সিফিলিস্”।
স্যারের চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে যায়। শীতল গলায় শুধু বলেন-“বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে থাক”। আমি বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে আলেকজান্ডার দ্যুমার গল্পটা মনে মনে জাবর কাটতে থাকি। এই ছিল আমার ছোটবেলা।
তো যা বলতে চাচ্ছিলাম, মশার ব্যপারে অনেকেই অনেক কিছু জানেন, হয়ত আমার চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু এটা জানেন কি, মশার কয়টা দাঁত থাকে? জানেন না? তাহলে বলে দেই – সাতচল্লিশটা, ফরটি সেভেন।
সহেনা যাতনা
আচ্ছা বলেন তো, পৃথিবীতে কত ভাগ মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কস্ট পায়?
যদি বলেন যে, শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশী মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কস্ট পায়, তাহলে জেনে রাখুন আপনি ভুল তথ্য জানেন। আসল তথ্য হচ্ছে যতভাগ মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কস্ট পায় তার চেয়ে বেশী ভাগ মানুষ কস্ট পায় মোটা হওয়ার জ্বালায়, আর তা ঘটে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে। আর মানুষের মানসিক বিষয়ে একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, শতকরা ৯৬ ভাগ মোটা মানুষ স্বীকার করতে চান না যে, তারা অন্যান্যদের চেয়ে বেশী খাওয়া খান।
ওয়াল পেইন্ট
ওয়াল পেইন্ট এর ব্যপারে কি কিছু বলার আছে? তবে এটা জানেন? এ যাবৎ কালের আবিষ্কৃত সবচাইতে পুরনো ওয়াল পেইন্ট লেখা কোনটি? – প্রথম শতাব্দীতে ধ্বংস প্রাপ্ত পম্পেই নগরীতে একটি দেয়াল লিখন। লিখাটি কি ছিল জানেন? – “আমি আমার স্বামীকে বিক্রী করতে চাই না”। বলি, এটা কোন লেখার নমুনা হোল? স্বামী কি আবার বিক্রী করার জিনিস হোল? আসল বিষয়টা কি ছিল কেউ কি বলতে পারেন?
নাচুনে মহামারী?
প্লেগ বা মহামারী বিষয়ে বোধ হয় নতুন করে কিছু বলার নাই। আগেকার দিনে যখন এই মহামারি দেখে দিত, তখন গ্রামকে গ্রাম উজার হয়ে যেত। এই মহামারি আবার আবার বিভিন্ন ধরণের হোত, যেমন- কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি।
১৫১৮ইং সালে জার্মানীতে এমন এক মহামারী হয়েছিল। প্রায় মাসখানেক দীর্ঘস্থায়ী এই মহামারীতে অগুনতি মানুষ মারা গিয়েছিল। মহামারীটির নাম কি ছিল জানেন? – নাচুনে মহামারী (Dancing Plague)। এই মহামারীতে আক্রান্ত মানুষেরা মৃত্যু পর্যন্ত শুধু নেচেই গিয়েছিল আর নেচেই গিয়েছিল।
হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো
প্রেইরী ডগ গুলি একজন আরেকজনের সাথে হ্যালো বলে বা প্রকাশ করে কিভাবে জানেন? – চুম্বনের মাধ্যমে।
জানি, অনেকেই এখন ভাববেন “আরে, মানুষ হয়ে না জন্মিয়ে প্রেইরী ডগ হয়ে জন্মালেই বোধ হয় ভালো করতাম, সারাক্ষণ শুধু হ্যালো, হ্যালো করে বেড়াতাম”। ভাবুন না, ভাবতে কি সমস্যা? ভাবলেই তো আর প্রেইরী ডগ হয়ে যাচ্ছেন না, ঠিক না?
হায়রে বাঁহাতি
পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার এর মত বাঁহাতি মানুষ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে মারা যায়। কারণ, ঐ যন্ত্রপাতি গুলো ডানহাতে ব্যবহারের উপযোগী করে বানানো হয়। আচ্ছা তোমাদের ডানহাতি মানুষদের জন্য বানানো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার দরকারটা কি শুনি?
আয়ারল্যান্ড
পৃথিবীর প্রতিটা দেশের জনসংখ্যা গত এক-দেড়শ বছর আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী, ব্যতিক্রম শুধু একটা দেশ – আয়ারল্যান্ড। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা গত ১৬০ বছর আগের চেয়ে প্রায় ২০ লক্ষ কম। বলি, আমাদের দিয়ে দাওনা ২০ লক্ষ ভিসা! জনসংখ্যা টা অন্ততঃ সমান করে দেই। আচ্ছা বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ড্ এর দূতাবাস আছে? থাকলে ঠিকানাটা একটু দেবেন?
চেঙ্গিশ খান
চেঙ্গিশ খান এর নাম শুনেন নি, এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়া দুস্কর। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই মোঙ্গল (পরবর্তীতে মুঘল) সম্রাট এর নাম না জেনে থাকলে আজই জেনে নিন। কারণ, সারা বিশ্বে প্রতি দুইশ জনে একজনের রক্তে মিশে আছে এই চেঙ্গিশ খানের রক্ত।
আমার রাক্তে কিন্তু উনার রক্ত নাই, কিভাবে জানলাম? আমি অতটা নিষ্ঠুর নই, আর হতে চাইলেও পারি না। আপনিও কি আমার মতন? নাকি উনার মতন?
চলবে-
এই সিরিজের অন্যান্য পোষ্টগুলিঃ
১। কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১
২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-২
৩।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৩
৪।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৪
৫।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৫
৬।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৬
৭।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৭
৮।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৮
৯।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৯
১০।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১০
১১।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১১
১২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১২
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৫