somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০০৫

২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জরৎকারু মুনি
আস্তীকের পিতার নাম জরৎকারু, তিনি ছিলেন ব্রহ্মচারী পরিব্রাজক ঋষি। ভ্রমণকালে একদিন তিনি দেখলেন কতগুলি মানুষ উশীর(বেনা / নল ঘাস) ঘাস ধরে উপরের দিকে পা ও নিচের নিকে মাথা দিয়ে একটি গর্তের উপরে ঝুলে আছে। জরৎকারু জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা এইভাবে ঝুলে আছো কেন?



তাঁরা বললেন- "আমরা যাযাবর নামক ঋষি ছিলাম। জরৎকারু নামে আমাদের একটি পুত্র আছে, সেই বোকা শুধু তপস্যা করে, বিয়ে করে সন্তান উৎপাদনের চেষ্টা তাঁর নেই। ওর করণে আমাদের বংশলোপের আশঙ্কায় পাপী মতো গর্তে এইভাবে ঝুলে আছি।

জরৎকারু বুঝলেন তারই কারণে তার পূর্বপুরুষরা এই শাস্তি পাচ্ছেন। তাই তিনি বললেন- "আমিই আপনাদের সেই পুত্র জরৎকারু। আমি নিজের জন্য বিয়ে করতাম না। শুধু আপনাদের মুক্তির জন্য বিয়ে করবো। যে কন্যাকে তাঁর আত্মীয়রা স্বেচ্ছায় দান করবে; তাকেই আমি ভিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করবো।

জরৎকারু বনে গিয়ে ধীর ও উচ্চ কন্ঠে তিনবার কন্যা ভিক্ষা করলেন। তখন বাসুকি তাঁর বোন মনসাকে নিয়ে এসে জরৎকারুর সঙ্গে বিয়ে দিলেন। আস্তীক নামে তাঁদের এক পুত্র হল। তিনিই জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞ থেকে সপদের বাঁচিয়ে ছিলেন।



কদ্রু ও বিনতা


ব্রহ্মার পুত্র প্রজাপতি দক্ষকদ্রুবিনতা নামে দুইজন রূপবতী কন্যা ছিল, তাঁরা কাশ্যপ ঋষির স্ত্রী। একদিন কশ্যপ তাঁদের বর দিতে চাইলে কদ্রু সমানশক্তিশালী এক হাজার নাগ পুত্র চাইলেন। বিনতা কদ্রুর ছেলেদের চেয়েও বেশি শক্তিশালী দুইটি পুত্র চাইলেন।

যথাসময়ে কদ্রু এক হাজার এবং বিনতা দুইটি ডিম প্রসব করলেন
পাঁচশ বছর পরে কদ্রুের ডিম গুলি থেকে এক হাজার নাগ পুত্র জন্ম নিলো।
অন্যদিকে বিনতা দেখলেন তার ডিম দুটি থেকে কিছুই বের হলো না। তাই তিনি একটি ডিম ভাঙ্গলেন। ডিমটি ভেঙ্গে দেখলেন ডিমের মধ্যে সন্তানের দেহের উপরের ভাগ তৈরি হলেও নিম্নভাগ অপরিণত অবস্থায় আছে। সেই অপুষ্ট ছেলে ক্রুদ্ধ হয়ে মা বিতনাকে শাপ দিয়ে বললেন - "তোমার লোভের ফলে আমার দেহ অসম্পূর্ণ হয়েছে; তুমি পাঁচশ বছর কদ্রুর দাসী হয়ে থাকবে। অন্য ডিমটিকে অসময়ে ভেঙ্গো না, যথাসময়ে তা থেকে ছেলে জন্ম নিয়ে তোমায় দাসীত্ব থেকে মুক্ত করবে। এই কথা বলে তিনি আকাশে উড়লেন এবং অরুণ রুপে সূর্যের সারথি হলেন।"

দ্বিতীয় ডিম থেকে যথাসময়ে একটি সন্তান জন্ম নেয় যার নাম গরুড়। গরুড় জন্ম নিয়েই জননী বিনতাকে ত্যাগ করে ক্ষুধার্ত হয়ে আকাশে উড়ে গেলেন।


একদিন কদ্রু ও বিনতা দেখলেন, তাঁদের সামনে দিয়ে সমুদ্র মন্থনের ফলে উৎপন্ন উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব চলে যাচ্ছে।





সমুদ্রমন্থন
একদা দেবতারা সুমেরু পর্বতের চূড়ায় বসে অমৃত পাওয়ার জন্য আলোচনা করছিলেন। তখন নারায়ণ ব্রহ্মাকে বললেন, দেবতা ও অসুরেরা একত্র হয়ে সমুদ্র মন্থন করলে অমৃত পাওয়া যাবে। ব্রহ্মা ও নারায়ণের আদেশে নাগরাজ অনন্ত মন্দর পর্বত উঠিয়ে নিয়ে এলেন। তখন দেবতারা সমুদ্র তীরে গিয়ে সমুদ্রকে বললেন অমৃতের জন্য সমুদ্রকে মন্থন করতে চায়। অমৃতের ভাগ পাওয়ার আশায় সমুদ্র রাজি হলেন।



দেবাতা ও অসুরদের অনুরোধে সাগরের কচ্ছপদের রাজা কূর্মরাজ সাগরের নিচে মন্দর পর্বতকে তার পিঠে ধারণ করলেন। ইন্দ্র বজ্র দিয়ে পর্বতের নিচের অংশ সমান করে দিলেন। তারপর মন্দর পর্বতকে মন্থনদন্ড ও নাগরাজ বাসুকী (অনন্ত)কে দড়ি করে, অসুরেরা নাগরাজের মুখের দিক এবং দেবতারা বাসুকীর লেজের দিক ধরে সমুদ্রমন্থন শুরু করলেন।

বাসুকীর মুখ থেকে ধুয়া ও অগ্নিশিখা বেরিয়ে মেঘে পরিণত হয়ে পরিশ্রান্ত দেবাসুরের উপর বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরলো। পাহাড়ে আগুন লেগে হাতী-সিংহ সহ বহু পশু পুড়ে মরলো। অনেক গাছ ও পশুপাখী সাগরে গিয়ে পরলো। মন্দরের ঘর্ষণে সেগুলি সহ বহু জলজপ্রাণী নিষ্পেষিত হল। নানা প্রকার বৃক্ষের নির্যাস ও ঔষধি রস এবং কাঞ্চনদ্রব্য সমুদ্রের জলে মিশ্রিত হয়ে দুধ ও ঘী উৎপন্ন হল।

তারপর সাগর থেকে চন্দ্র উঠলেন এবং ঘী থেকে লক্ষ্মী, সুরাদেবী, শ্বেতবর্ণের উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব ও নারায়ণের বুকের ভূষণ কৌস্তুর মনির উদ্ভব হল। ইচ্ছা পূরণকারী বৃক্ষ পারিজাত (শিউলি ফুল গাছ) ও সুরভি ধেনু / কাম ধেনু (সুগন্ধযুক্ত দুগ্ধবতী গাভী হিন্দু ধর্মমতে গো-মাতা ) উঠে এলো।



লক্ষ্মী, সুরাদেবী, চন্দ্র ও উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব দেবতারা পেলেন।
তারপর ধন্বন্তরি (আয়ুর্বেদের দেবতা ও দেবতাদের চিকিৎসক) দেব অমৃতপূর্ণ কমন্ডুল নিয়ে উঠলেন। অসুরেরা তা নিয়ে নিলো।



তারপর শ্বেতবর্ণের ঐরাবত (চার দাঁতের সাদা হাতি) উঠে এলে ইন্দ্র তাঁকে ধরলেন।



আরো মন্থনের ফলে কালকুট নামের বিষ উঠে এলো। সেই বিষ সমস্ত দুনিয়ায় ছড়িয়ে পরলো। ব্রহ্মার অনুরোধে ভগবান মহেশ্বর সেই কালকুট বিষ পান করে নিজের কন্ঠে ধারণ করলেন, সেই থেকে তার আরেক নাম নীলকণ্ঠ।

নারায়ণ বিষ্ণু মোহিনী মায়ায় স্ত্রীরূপ ধারণ করে অসুরদের কাছে গিয়ে নিজের রূপে অসুরদের ভুলিয়ে অমৃতের কমন্ডলু নিয়ে নিলেন। তিনি অসুরদের বসিয়ে রেখে কমন্ডলু থেকে শুধু দেবতাদেরকেই অমৃত পান করাচ্ছিলেন।



দেবতারা বিষ্ণুর কাছ থেকে অমৃত নিয়ে পান করছিলেন সেই সময় রাহু নামের এক অসুর দেবতার রূপ ধারণ করে অমৃত পান করার চেষ্টা করলো। তখন চন্দ্র ও সূর্য বিষ্ণুকে বিষয়টি জানিয়ে দিলো। বিষ্ণু তখনই তাঁর চক্র দিয়ে রাহুর মাথা কেটে ফেললেন।



রাহুর মাথা আকাশে উড়ে গর্জন করতে লাগল। তখন থেকে চন্দ্র ও সূর্যের সাথে রাহুর চিরস্থায়ী শত্রুতা হল। অসুরেরা অমৃত ও লক্ষ্মীর জন্য দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে করতে লাগল। বিষ্ণু স্ত্রীরূপ ত্যাগ করে দেবতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যুদ্ধে অংশ নিলেন। অসুরেরা সেই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেল।


====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। এই গ্রন্থে প্রচুর উদ্ভট কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।


====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
====================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×