॥আদিবংশাবতরণপর্বাধ্যায়॥
উপরিচর বসু - পরাশর - সত্যবতী - কৃষ্ণদ্বৈপায়ন
চেদি দেশে উপরিচর বসু নামে পুরুবংশজাত এক রাজা ছিলেন। ইন্দ্র তাঁকে বন্ধু হিসেবে বেশ কিছু উপহার দিয়েছিলেন। রাজার ছিলো পাঁচ ছেলে। তাঁরা বিভিন্ন দেশে রাজবংশ স্থাপন করেন।
উপরিচরের রাজধানীর কাছে শুক্তিমতী নদী ছিল। কোলাহল নামক পর্বত এই নদীরে গর্ভে এক পুত্র এবং এক কন্যা উৎপাদন করে। রাজা সেই পুত্রকে সেনাপতি এবং কন্যা গিরিকাকে মহিষী (প্রধান স্ত্রী) করলেন।
একদিন হরিণ শিকারে গিয়ে রাজা রূপবতী মহিষী গিরিকাকে কল্পনা করে বীর্যস্খলন করলে, সেই বীর্য শ্যেনপক্ষীকে দিয়ে গিরিকার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। শ্যেন পাখিটি গিরিকার কাছে যাবার সময় পথে অন্য এক শ্যেন পাখি তাকে আক্রমণ করে। তখন রাজার বীর্য যমুনার জলে পড়ে যায়।
অন্যদিকে অদ্রিকা নামের এক অপ্সরা ব্রহ্মাশাপে মাছ হয়ে যমুনাতে ছিলো। সে রাজার বীর্য গ্রহণ করে গর্ভবতী হলো এবং দশ মাস পরে জেলের জালে ধরা পরলো। জেলে সেই মাছের পেটে একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী সন্তান পেয়ে রাজার কাছে নিয়ে এলো। অপ্সরা তখন শাপমুক্ত হয়ে আকাশপথে চলে গেল। রাজা উপরিচর কন্যা সন্তানটিকে জেলেকে দিয়ে দিলেন। ছেলে সন্তানটি পরে মৎস্য নামে এক ধার্মিক রাজা হয়েছিলো।
জেলের কাছে থাকা সেই রূপবতী গুণবতী মেয়েটির নাম সত্যবতী, কিন্তু সে মৎস্যজীবীদের কাছে থাকতো বলে তার আরেক নাম মৎস্যগন্ধা। একদিন সে যমুনায় নৌকা চালাচ্ছিল এমন সময় পরাশর মুনি সেখানে এলেন। অতীব রূপবতী মৎস্যগন্ধকে দেখে পরাশর কামাতুর হয়ে তার সাথে মিলিতো হয়ে বংশধর জন্ম দিতে চাইলেন। পরপারের ঋষিরা তাদের এই অপকর্ম দেখতে পাবেন বলে সত্যবতী তাতে রাজি হলো না। পরাশর মুনি তখন কুয়াশার ঘনো আবরণ সৃষ্টি করলেন। ঘন কুয়াশার কারণে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। তখন সত্যবতী বললেন সে কুমারী এবং বাবার বাড়িতে থাকে, তার কুমারীত্ব নষ্ট হলে বাড়িতে যায়গা হবে না। তখন পরাশর বললেন তাঁর চাহিদা পূরণের জন্য সহবাস করার পরেও সত্যবতী কুমারীই থাকবে।
পরাশরের সাথে মিলনের ফলে মৎস্যগন্ধার দেহ সুগন্ধময় হলো এবং সে গন্ধবতী নামে খ্যাত হলো। এক যােজন দূর থেকে তার শরীরের গন্ধ পাওয়া যেত বলে লােকে তাকে যােজনগদ্ধাও বলত।
পরাশর মুনির সাথে সহবাসের ফলে সত্যবতী গর্ভবতী হলো এবং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন নামে একটি কালো পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। ইনি পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারত, অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ, বেদান্তদর্শন, ভাগবত প্রভৃতির রচয়িতা এবং বেদের বিভাগকর্তা ঋষি।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯
====================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৪০