somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনি ড্রামা সিনেমা - জয় ভীম (Jai Bhim)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জয় ভীম (Jai Bhim) ২০২১ সালে ২ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পাওয়া ভারতীয় তামিল ভাষার (আমি হিন্দি ডব্ড দেখেছি) একটি আইনি ড্রামা সিনেমা (Legal drama film)। ১৯৯৩ সালের একটি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটি তৈরি হয়েছে। একটি উপজাতি দম্পতি সেঙ্গিনী এবং রাজাকান্নুর জীবনে ঘটে যাওয়া করুন কাহিনী এই সিনেমার পটভূমি।

সিনেমাটিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছেন-
অ্যাডভোকেট চন্দ্রুর ভূমিকায় সুরিয়া
সঙ্গিনী চরিত্রে লিজোমল জোস
রাজাকান্নুর ভূমিকায় মণিকন্দন

সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট

কাহিনী সংক্ষেপ :
ভারতের ইরুলা উপজাতির এক দম্পতি রাজাকান্নু এবং তার স্ত্রী সঙ্গিনী ফসলের ক্ষেত থেকে ইঁদুর ধরে, বাড়ি থেকে বিষধর সাপ ধরে, সাপের কামরের চিকিৎসা করে। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন কল-কারখানায় দিনমজুরের কাজ করে। নিম্ন জাতী বলে তাদের কোনো আধারকার্ড নেই, পরিচয় পত্র নেই, কোনো জমি নেই।

একদিন গ্রামের মুখিয়ার বাড়িতে বিষধর সাপ ধরার জন্য রাজাকান্নুর ডাক পরে। রাজাকান্নু মুখিয়ার বাড়িতে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটি ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাপটি ধরে ফেলে। রাজাকান্নু তার প্রেগনেন্ট স্ত্রী ও মেয়েকে রেখে পরদিন ভোরে শহরে চলে যায় কাজের খোঁজে। কয়েকদিন কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে তবেই গ্রামে ফিরবে।

রাজাকান্নু সাপ ধরে ফেলার পরে সেদিনই মুখিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে অন্য যায়গায় বেড়াতে যায়। পরের দিন তারা ফিরে এসে দেখে যে ঘরে সাপ লুকিয়ে ছিলো সেই ঘরের সিন্দুকের ভিতরে থাকা সমস্ত হগনা চুরি হয়ে গেছে। মুখিয়া মনে করে রাজাকান্নু এই চুরি করেছে। পুলিশ আসলে সেই ঘরে রাজাকান্নুর ফিঙ্গার প্রিন্ট পায়। পুলিশ রাজাকান্নুর বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু রাজাকান্নু কাজের জন্য আগেই শহরে চলে গেছে। ফলে রাজাকান্নুকে পুলিশ পায় না। রাজাকান্নু কোথায় আছে তা জানার জন্য পুলিশ ইরুলা উপজাতির গ্রামের লোকদের নির্মমভাবে মারধর করে এবং গর্ভবতী সঙ্গীনিকে বেআইনিভাবে আটক করে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ রাজাকান্নুর ভাই ইরুতুপন, তার বোন পচাইয়াম্মাল এবং তার শালা মোসাকুট্টিকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। চুরির কথা স্বীকার করতে এবং রাজাকান্নু কোথায় আছে তা বলার জন্য পুলিশ তাদের উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। কিন্তা তারা কেউই জানতো না রাজাকান্নু শহরের কোথায় গেছে কাজ করতে। তাই তারা পুলিশের কাছে কিছুই বলতে পারে না।

এদিকে কয়েকদিন পরে রাজাকান্নু তার স্ত্রীকেদেখার জন্য শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসে। মুখিয়ার লোকজন তাকে ধরে বেদম মারধর করে পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়। চুরির কথা স্বীকার করার জন্য পুলিশ তাকে প্রচন্ড নির্যাতন করে। কিন্তু রাজাকান্নু চুরি করে নাই বলে বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে। পুলিশ সঙ্গিনীকে ছেড়ে দিলেও ইরুতুপন, মোসাকুট্টিকে রাজাকান্নুর সাথে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করতে থাকে। মুখিয়া উপর থেকে পুলিশকে চাপ দিতে থাকে তার চুরি যাওয়া গহনা বের করে দেয়ার জন্য। ফলে পুলিশ রাজাকান্নুকে চুরির কথা স্বীকার করানোর জন্য অমানবিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। পরে একদিন সঙ্গিনীকে পুলিশ জানায় আসামী তিনজনই থানা থেকে পালিয়ে গেছে।

ইরুলা উপজাতির লোকদের পড়াশোনা শিখান মিথরা নামের একজন শিক্ষিকা। তিনি সঙ্গিনীকে এ্যাভোকেট চন্দ্রুর কাছে নিয়ে যান। এ্যাডভোকেট চন্দ্রু দরিদ্র নির্যিতিতো লোকের জন্য মামলা লড়েন। চন্দ্রু সঙ্গিনীর কাছ থেকে সমস্ত সত্য ঘটনা জেনে নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় নানান যুক্তি তর্কের মাধ্যমে বুঝা যায় যে পুলিশ হেফাজত থেকে আসামী পালিয়েছে সেটি মিথ্যে বলা হচ্ছে। আদালত সাব-ইন্সপেক্টর গুরুমূর্তি, হেড কনস্টেবল বীরসামি এবং কনস্টেবল কিরুবাকরণের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলে।

চন্দ্রুর অনুরোধে আদালত আইজি পেরুমলসামিকে এই মামলার প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করে। পেরুমালসামি
চন্দ্রু ও মিথরাকে সাথে নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালায়। তারা জানতে পারে যেদিন রাজাকান্নুদের পালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেইদিনই পন্ডিচেরির সীমানার কাছাকাছি একটি রাস্তায় রাজাকান্নুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিলো। বেওয়ারীশ লাশ হিসেবে ছবি তুলে রেখে তাকে দাহ করা হয়। তারা বুঝে যায় যে রাজাকান্নু গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, বরং লক-আপে তার মৃত্যু হয়েছিলো।

শেষ পর্যন্ত ইরুতাপন এবং মোসাকুট্টিকে কেরেলার অন্য একটি জেলে খুঁজে পায় যায়। তারা আদালতে সাক্ষ্য দেয় থানায় তাদের তিন জনের উপরে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং পুলিশ রাজাকান্নুকে হত্যা করেছিল। আর মামলার প্রধান কর্মকর্তা পেরুমালসামি তদন্ত করে জানতে পারেন পুলিশ সদস্যরা প্রকৃত চোরের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছিলেন। তাই তারা প্রকৃত চোরকে না ধরে রাজাকান্নুদের চোর সাজাতে চেয়ে ছিলো।

যে রাস্তায় রাজাকান্নুর লাশ পাওয়া গেছে, সেখানে পুলিশ ভেনের টায়ারের দাগ ছিল। গুরুমূর্তি এবং কনস্টেবল কিরুবার জুতার ছাপও সেখানে পাওয়া গেছে। এই সব প্রমাণাদি দেখে আদালত পুলিশদের অবরাধী সাবস্ত করে রায় ঘোষণা করে।






=================================================================
সিনেমা নিয়ে আমার আরো কিছু পোস্ট -
The Invisible Guest
আমার দেখা অসাধারন একটি সিনেমা : ফরেস্ট গাম্প ১
আমার দেখা অসাধারন একটি সিনেমা : ফরেস্ট গাম্প ২
আমার দেখা অসাধারন একটি সিনেমা : ফরেস্ট গাম্প ৩
জনি ডেপের সিনেমা "Nick of Time"
টাইম-লুপ নিয়ে হিন্দি সিনেমা Looop Lapeta
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×