বিবি-বাচ্চাদের নিয়ে শেষ ঢাকার বাইরে বেরাতে গেছি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজার-টেকনাফে। ডিসেম্বর মাসে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকে দীর্ঘ দিন। বেড়ানোর জন্যও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টাই বেস্ট। এবার ইচ্ছে ছিলো ডিসেম্বরেই উত্তরবঙ্গ বেরাতে যাওয়ার, যদিও এই সময়টায় ঐ দিকে প্রচন্ড শীত থাকে। নানান কারণে ডিসেম্বরে যাওয়া হয়ে উঠেনি, তবে শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ রাতে বেরিয়ে পরি উত্তরবঙ্গের পথে। আমাদের এবারের ভ্রমণটিকে বলা যেতে পারে হ্যারিটেজ ট্রিপ। ভ্রমণ পরিকল্পনাটা আগেই সামুতে প্রকাশ করেছিলাম। যদিও বাস্তবে পরিকল্পনাটা পুরাই উল্টে গিয়েছিল। প্রথম দিন পঞ্চগড় যাওয়া কথা থাকলেও আমরা নেমে গিয়েছিলাম বিরামপুর। জানুয়ারির ৩ তারিখ সকালে নাস্তা সেরে প্রথমেই চলে গিয়ে ছিলাম রতনপুর জমিদার বাড়ি বা রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি দেখতে।
জমিদার বাড়ি দেখা শেষে এবার আমরা যাবো স্বপ্নপুরীতে। দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীর কথা জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। আমার গিন্নি দীর্ঘদিন যাবত বলছেন স্বপ্নপুরীতে নিয়ে যেতে। যাবো যবো করেও নানান করণে যাওয়ে হয়ে উঠেনি। অনেক বছরের লালিত ইচ্ছা পূরণ হবে এবার।
জমিদার বাড়ি দেখে সেখানকার লোকদের কাছে জানতে চাইলাম মূল সড়ক বাদে ভিতরে দিয়ে কোন শটকাট আছে কিনা স্বপ্নপুরীতে যাওয়ার জন্য। সকলেই জানালো আছে গ্রামারে মাঝ দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে, সেটি ধরে যেতে হবে। জানতে চাইলাম রাস্তার অবস্থ কেমন? সকলেই বললেন ভালো, শুধু অল্প একটু পথ কাঁচা। তো শুরু হলো আমাদের শটকাট পথে চলা। প্রথম পথটুকু ভালই ছিল, পরের কাঁচা পথটুকু আর শেষ হতে চাইছিলো না। শুধু কাঁচা হলে কথা ছিলো না, সেটি এবরো খেবরো, চলাচলের অনুপযোগী বলা চলে। পথে বার বার জিজ্ঞাসা করে করে একসময় পৌছেছিমাল মূল সড়কে। শটকাট নিতে গিয়ে সময়তো বাচেইনি, ফাওয়ের উপরে শরীর আর কোমরের বারটা বেজেছে।
শটকাট পথের সন্ধানের তালে পরে জমিদার বাড়ির থেকে ২ কিলোটিমার দূরে Dhanjuri Catholic Church এর কথা গেছি ভুলে। এটি দেখা হয়নি, তবে যাবার পথে হঠাত করে সামনে পরে যায় একটি Christian Cemetery সেটি দক্ষিণ সাহাবাজপুর খ্রিষ্টান কবরস্থান। যাইহক সকাল ১১টা ২০ নাগাদ পৌছে যাই স্বপ্নপুরীতে।
আমি এর আগে আরো দুবার গিয়েছি স্বপ্নপুরীতে। প্রথমবার সম্ভবতো ২০০১ সালে, দ্বিতীয় বার ২০১৩ সালে, এবার ২০২২ সলে। অর্থাৎ প্রায় প্রতি দশকে ১বার করে যাওয়া হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারেও আমার বক্তব্য একই- "প্রকৃতির সাথে কৃত্তিমতার মিশেল স্বপ্নপুরীতে যত চমৎকার ভাবে করা হয়েছে, দেশের আর কোনো পার্কে বা পিকনিকস্পটে তেমনটা করতে পারেনি।" ওদের তৈরি করা প্রাণীর অববয়গুলি খুবই জীবন্ত মনে হয়।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে প্রায় ৫০০ একর ভূমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে। কুশদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: দেলওয়ার হোসেন ১৯৮৯ সালে স্বপ্নপুরীর কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো: শিবলি সাদিক এম. পি'র অধীনে এটি চালু আছে। সড়কপথে দিনাজপুর থেকে স্বপ্নপুরী দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। কৃত্রিম লেক, পাহাড়, উদ্যান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি এবং ফুলের বাগান, বিভিন্ন প্রতিকৃতি, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম পশুপাখি, ফুলবাগিচা, কৃত্রিম ঝর্ণা, বিভিন্ন ভাস্কর্য, ডাকবাংলো ইত্যাদি রয়েছে এখানে। দেখলাম নতুন নতুন আরো কয়েকটি জিনিস যোগ করা হচ্ছে। আছে কেবলকার, ঘোড়ারগাড়ী, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম মস্য জগত। দর্শনার্থিদের খাবার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি মোটামোটি মানের রেষ্টুরেন্ট। আর যারা পিকনিকের জন্য দল বেথে যাবেন তাদের জন্যও সমস্ত ব্যবস্থা সেখানে করা আছে।
সাধারন দর্শনার্থিদের প্রবেশের জন্য টিকেট লাগে, মূল্য ১০০ টাকা। তাছাড়া স্বপ্নপুরীর ভিতরে প্রায় প্রতিটি আলাদা আলাদা অংশে যেতে বিভিন্ন মূল্যের আলাদা আলাদা টিকেট কাটতে হয়।
(এগুলি খুবই নিম্নমানের রেপ্লিকা হয়েছে।)
আমাদের সিএনজি ড্রাইভার সাহেবকে আগেই বলা ছিল আমরা সর্বাধীক সময় কাটাবো এই স্বপ্নপুরীতেই। ভিতরে নানান জিনিস দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটা দুপুর একটার ঘর পার করে ফেললো। আমরাও তখন ক্ষুধার্ত, দেখাও মোটামুটি শেষ করে নিয়ে এসেছি। তাই এবার চলে গেলাম রেষ্টুরেন্ট কর্ণারে। খাবারের ব্যবস্থা তেমন কিছু না। আমরা মোরগ পোলাউ নিলাম। ক্ষুধার সময় খাওয়া চলে টাইপ স্বাদ, তার চেয়ে বেশী কিছু না। বাজারের সবচেয়ে ছোট মুরগ ছিলো মনে হয় ঐটি, আর রাইসটা ছিলো সাধারন ভাতের চালের। যাইহোক, খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার বেরিয়ে এলাম স্বাপ্নপুরী থেকে।
(ভূতের বাড়ির ভিতরে যাইনি আমরা)
(আদিম দুনিয়ার প্রবেশ পথ)
(প্রতিটি ওয়াক-ওয়েই খুব সুন্দর স্বপ্নপুরীর ভিতরে)
(আছে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা)
(মৎস জগতের প্রবেশ পথ)
(মৎস জগতের ভিতরে)
(মৎস জগতের ভিতরে)
(মৎস জগতের ভিতরের মাছেরা)
(কৃত্রিম পশু দুনিয়ার দুয়ার)
(কৃত্রিম ঝর্ণা)
(কৃত্রিম ঝর্ণা)
(টয় ট্রেনের টানেল)
(নাগর দোলা)
স্বপ্নপুরী দেখা শেষে আমরা আবার উঠে বসলাম সিএনজিতে, সময় তখন দুপুর ১টা বেজে ৪৫ মিনিট। ছুটে চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান এর দিকে। ঐখানে একটি কাঠের সেতু আছে সেটিই দ্রষ্টব্য সেখানকার। দেখা হবে সেখানে।
=================================================================
মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস
সিলেট ভ্রমণ : হযরত শাহজালাল ও শাহপরান দরগাহ, চাষনী পীরের মাজার, বিছনাকান্দি, লালাখাল, জাফলং, হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড
শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক,
খাগড়াছড়ি ভ্রমণ : আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, ঝুলন্ত সেতু, অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ : সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার
বান্দরবান ভ্রমণ : নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির
কক্সবাজার ভ্রমণ : রঙ্গীন মাছের দুনিয়া, আগ্গ মেধা ক্যাং, বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ, ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, ইনানী সৈকত, টেকনাফ সৈকত, মাথিনের কুপ, টেকনাফ জেটি, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ
নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণ: ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দির, টি হোসেন বাড়ি, কদম রসুল দরগাহ, সোনাকান্দা দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, বাবা সালেহ মসজিদ, বন্দর শাহী মসজিদ, সিরাজ শাহির আস্তানা, কুতুববাগ দরবার শরিফ, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী, পালপাড়া মঠ, বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি, মহজমপুর শাহী মসজিদ
দিনাজপুর ভ্রমণ: রতনপুর জমিদার বাড়ি বা রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৮