somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাদা কাহিনী (তৃতীয় পর্ব)

২৫ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দাদা এবং তাঁর বাবা তরফ আলী ছিলেন ভোলার বাসিন্দা। আমার বাবা-চাচা-ফুফুদের জন্ম ভোলাতেই। ভোলা থেকে উচ্ছেদ হয়ে আমার দাদা তাঁর সন্তান-পরিবার নিয়ে হেঁটে চলে আসেন উত্তর বাড্ডার নাপিতখোলায়।
ভাবছেন ভোলা থেকে বাড্ডা হেঁটে আসা আম্ভব?
হে সম্ভব। দূরুত্ব মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার।


বর্তমানে যেটি গুলশান, ষাটের দশকে তার নাম ছিলো ভোলা গ্রাম। গুলশান ১ আর ২ এর মাঝামাঝি ছিলো আমার দাদার বাড়ি আর বিশাল কাঠাল বাগান। শীতের সময় নানান সবজী চাষ হতো বিশাল যায়গা জুড়ে। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার ভোলা গ্রামটি অধিগ্রহণ করে। ডিআইটির প্রথম চেয়ারম্যান মাদানির কারণেই বাস্তুহারা হয় আমার দাদা। মাদানি সাহেব যখন ভোলায় এসে জমি ছেড়ে দিতে বলেন তখন দাদা ও তার দলবল মাদানি সাহেবকে দৌড়ানি দিয়ে ভেবে ছিলো জিতে গেছেন। কিন্তু পরদিন কোনো নোটিশ ছাড়াই দাদাদের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বেচারা দাদা ঘটি-বাটিও নেয়ার সুযোগ পায়নি। পরবর্তীতে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়।

ভোলা থেকে আদিবাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ভোলার নাম রাখা হয় গুলশান। দাদা তার পরিবার নিয়ে এসে বাড়ি করেন প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে উত্তর-বাড্ডার নাপিতখোলায়, বর্তমান স্বাধীনতা স্বরণী এলাকা।

১৯৭১ সালে শুরু হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ। ঢাকার বাড্ডা এলাকায় যুদ্ধের ঘনঘটা খুব একটা ছিলো না। বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলো এই এলাকার মানুষ জন। এমনকি তারা তাদের চাষাবাদও চালিয়ে যাচ্ছিলো যুদ্ধের মাঝা মাঝি সময়ের পরেও। তেমনি এক সময়ে আমার দাদা আর বড় চাচা সাথে কয়েকজন দিনমজুর নিয়ে বাড়ির পাশেই ধান ক্ষেতে নিরানী করছিলো। ঠিক সেই সময়ে সকাল সকাল দুজন পাকিস্তানি সৈন্য এসে বিকট গলায় চেচি বললো- হোল্ড। ব্যটাদের চেচানো শুনেই পড়িমড়ি করে ধানক্ষেত মারিয়ে কাজ ফেলে সবাই ছুটে পালালো। দাদা আর বড় চাচা পালাতে পারলেন না। সৈন্যরা দাদা আর বড় চাচাকে বাড়ির পাশেই তালগাছের সাথে পিছমোরা করে কঁষে বেঁধে রাখলো। কিছুক্ষণ পরপর মারধোর করে জিজ্ঞাসা করতো যারা দৌঁড়ে পালিয়েছে তারা মুক্তি কিনা? তারা পালালো কেনো?

বাড়ি থেকে ভয়ে কেউ বের হয়নি। রাইফেলের বাটের আঘাতে বড় জেঠা কোমড়ে প্রচন্ড আঘাত পায়। তাল গাছের ধারালো শিরার সাথে ঘষা লাগতে লাগতে দাদা আর বড় জেঠার পিঠ কেঁটে ফালাফালা হয়ে গেলো। নিরিহ পিতা-পুত্রকে অত্যাচার করে তাঁরা পৌচাশিক আনন্দ নিলো সারা দিন। বাড়ি থেকে তাদের জন্য খাবার পাঠানো হলো বাচ্চাদের হাতে। বিকেলে তাঁরা দাদা আর জেঠাকে সেভাবেই তাল গাছের সাথে বঁধে রেখেই চলে গেলে। জানে বেঁচে গেলেন আমার দাদা আর বড় জ্যেঠা।

যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে যখন বাড্ডাতেও পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলো তখন দাদা তার পুরো পরিবার নিয়ে বাড্ডা ছেড়ে আরো পূর্বদিকে বেরাইদ পেরিয়ে নাওড়া ছেড়ে আরো পিছনে সরে যেতে শুরু করলেন। তবে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলো। দাদা তার পরিবার নিয়ে ফিরে এলেন নিজের বাড়িতে। দাদাকে অত্যাচার করা সেই দুইজন সৈনিককে দাদার লাউটালের ডেরা ঘরেই পাওয়া গিয়েছিলো যুদ্ধের পরে। বেচারাদের কপালে বেদম প্রহার জুটেছিলো সেটা সহযেই অনুমেয়।

১৯৬১ সালে গুলশান থেকে উচ্ছেদ হয়ে দাদা বাড্ডাতে এসেছিলেন খালি হাতে। ঘর নেই বাড়ি নেই। সেই কষ্টটা দাদার মনে ছিলো। তাই পরে যখন আবার বাড্ডাকেও অধিগ্রহণ করা হলো দাদা সাথে সাথে আরো পূর্বদিকে সাঁতারকুলে একটি বড় বাড়ি তৈরি করে রাখলেন। সেখানে এক হিন্দু দম্পতিদের থাকতে দিলেন। দাদার ভাবনা ছিলো এবার যদি আবার উচ্ছেদ হয় তাহলে যেনো নতুন যায়গায় গিয়ে মাথার উপরে অন্ততো চালটা থাকে।

দ্বিতীয় বার দাদাকে আর উচ্ছেদ হতে হয়নি। এরশাদ সাহেব বাড্ডাতে এসে ঘোষণা দিয়ে গেলেন একোয়ার মুক্ত হিসেবে। তবে তিনি গেজেট প্রকাশ করতে পারলেন না। তারপরে বিএনপি সরকার পরে আওমীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলেও মুখে বাড্ডাকে মুক্ত ঘোষণা করলেও গেজেট প্রকাশ করলেন না। ফলে আমরা ঝুলে রইলাম দোটানায়। এখন অবশ্য সেই দোটানা থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা। দাদার সেই সাঁতারকুলের বাড়ি আমাদের কখনো থাকতে হয়নি।

দাদা কাহিনী (প্রথম পর্ব)
দাদা কাহিনী (দ্বিতীয় পর্ব)

=================================================================
স্মৃতি কথা
এক কাপ চা
আরো এক কাপ চা
শেষ আর এক কাপ চা
পথের কথা - ০১
আমাদের জাম কাহিনী
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ২:৫৫
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×