আমি মাঝে মাঝে খিলগাও, একটা চায়ের দোকানে যাই।
এই চায়ের দোকানটা অন্য দশটা চায়ের দোকানের মতোন নয়। এই দোকানে ওয়াইফাই আছে। এই ওয়াইফাই যারা এই দোকানের রেগুলার কাস্টমার শুধু তারাই ব্যবহার করতে পারে। ওয়াইফাই ছাড়াও এই দোকানে একটা বিশ ইঞ্চি টেলিভিশন আছে। সারাক্ষন এই টিভিতে হিন্দি সিনেমা চলতেই থাকে। কেউ টিভির দিকে ফিরেও তাকায় না। সবাই মোবাইল টিপাটিপিতে ব্যস্ত। তবে আমি লক্ষ্য করেছি, কাবিল ভাই চা বানানোর ফাঁকে ফাঁকে টিভি দেখেন।
এই চায়ের দোকানটি রাস্তার পাশের চায়ের দোকান নয়।
এই দোকানের মাসিক ভাড়া তের হাজার টাকা। বহু লোক এই দোকানে চা খেতে আসে। এই দোকানের চা মোটেও ভালো না। একবার খেলে আর খেতে ইচ্ছা করে না। দুই রকমের চা পাওয়া যায়। দুধ চা এবং রং চা। দু’টাই অতি অখাদ্য। কাঁচের বোতলে দুই তিন রকমের বিস্কুট আছে। সেটাও অতি অখাদ্য। একটা ফ্রজ আছে। ফ্রিজে কিছুই নাই। তবে এক আধদিন কোক ফানটা পাওয়া যায়। এলাকার পোলাপানরা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে।
নেট বিল চায়ের দোকানের মালিক দেয় না।
এখানে চা খেতে আসে অনেক গুলো গ্রুপ। সেই গ্রুপের লোকজন মিলে নেট বিল দেয়। মাসে এগারো শ’ টাকা। আমি এখানে যাই বিনামূল্যে নেট ব্যবহার করি। হে হে...! এই চায়ের দোকানের মালিকের নাম কাবিল। চায়ের দোকানে এবং দোকানের আশে পাশে কমপক্ষে বসার জন্য সাতটা টুল আছে। লোকজন ঘণ্টার পর ঘন্টা এখানে বসে থাকে। কত রকমের লোকজন যে আসে এখানে! আমি সবাইকে মন দিয়ে খেয়াল করি।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত-
পনের বিশটা গ্রুপ এই চায়ের দোকানে আসে। সবাই সবার দল নিয়ে ব্যস্ত। সবাই বক বক করতেই থাকে। মানুষের কথা মৃত্যু পর্যন্ত চলতেই থাকে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের দিকে তাকায় না। তবে হায় হ্যালো করে। হাত মিলায়। গ্রুপের মধ্যে ছাত্র আছে, বেকার আছে, চাকরীজীবি আছে, ব্যবসায়ী আছে, এলাকার বড় ভাই আছে, ছোট ভাই আছে, বাড়িওয়ালার ছেলে আছে, বুড়োদেরও একটা গ্রুপ আছে, আছে আরো নানান পেশার মানুষ। সবাই এসে যে যার টুলে বসে। প্রতিটা গ্রুপে পাঁচ সাত জন করে।
কুকুরের নাম টাইগার। টাইগার ল্যাংড়া।
টাইগার তিন পায়ে হাঁটে। দেখলে বেশ মায়া লাগে। বাংলাদেশের সব চায়ের দোকানে সামনে একটা বা দু’টা কুকুর থাকে। কাবিল ভাইয়ের চায়ের দোকানের সামনে থাকে টাইগার। টাইগার এখানে অন্য কোনো কুকুর আসতে দেয় না। ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দেয়। এখানে যারা চা খেতে আসে, আড্ডা দিতে আসে তারা সবাই টাইগারকে বিস্কুট খেতে দেয়। বিস্কুট ছুড়ে দিলে, টাইগার সেই বিস্কুট খাবে না। পরিস্কার কাগজ বিছিয়ে টাইগারকে খেতে দিতে হয়। আমি নিজেও টাইগারকে বিস্কুট কিনের দিয়েছি।
ডাল পুরি ও আলু পুরি।
কাবিল ভাইয়ের চায়ের দোকানের পাশেই আছে দুইটা পুরির দোকান। এই পুরির দোকানে সব’ই পাওয়া যায়। আলুর চপ, বেগুনি, পিয়াজু। এমন কি দুপুরবেলা ভাত মাছও পাওয়া যায়। আমি মাঝে মাঝে এখানে ডাল পুরি খাই। সাথে কি একটা ঝোল দেয়, খেতে ভালোই লাগে। এই সব চায়ের দোকানে আমি বেশিক্ষন থাকি না। প্রতিটা গ্রুপ উত্তেজিত। কখন ধূমধাম লেগে যায়! অবশ্য এ যুগের পোলাপানদের মানসিকতা আমি বুঝি না। ওদের সাথে আমার মিলে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৫৪