১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হবার পরও দেশ ভালোই চলছিল।
যদিও বহু মানুষের এপার ওপারের সম্পর্ক গুলো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই সুযোগে বাড়ি ঘর দখল করে নিলো চতুর লোকেরা। ১৯৫২ ‘তে ভাষার জন্য জীবন দিতে হলো বাঙ্গালীদের। কত মিটিং মিছিল, মারামারি কাটাকাটি হলো। রক্ত ঝরলো। অবশ্য ১৯৬০ থেকে ৬৮ পর্যন্ত দুই বাংলার মানুষ বেশ ভালো ছিলো। সেসময় কত ধনী পরিবারের সন্তানেরা কোলকাতা যেত লেখাপড়া করতে। মানূষের জীবন যাপন খুব সহজ সরল সুন্দর ছিল। ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ করতে হলো আমাদের। সমস্ত দেশের মানুষের সীমাহীন কষ্ট হলো। লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেল। কত মা বোন তাদের ইজ্জত হারালো। সাধারন মানুষের সম্পদ লুট হলো। বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। যাই হোক, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ সবই শেষ হলো। কিন্তু এই দেশে আজও শান্তি এলো না। একের পর এক সমস্যা লেগেই আছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ তবু সহ্য করা যায়।
মানবসৃষ্ট সমস্যা গুলো আজও আমাদের পিছু ছাড়লো না। সেই ৭১ থেকে এখন ২০১৯, ৪৮ বছর পার হয়ে গেল দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৮ বছর আমাদের মোটেও আনন্দে কাটেনি। না, এই ৪৮ বছরে পাকিস্তান বা ভারতের লোকজন আমাদের কোনো সমস্যা করেনি। নিজের দেশের লোকজন দেশটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তিলে তিলে এক শ্রেনীর লোক এই দেশটাকে খামচে ধরে রেখেছে। একদল যায়, আরেকদল এসে খামচে ধরে। এই যে ছাত্রলীগের ছেলে-পেলে আবরারকে মারলো। বুয়েটের ছেলেরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হলো। যদি আবরারকে না মারতো তাহলে মিছিল বের হতো না। এই দেশে শুধু একটাই মিছিল হওয়ার কথা ছিল। সেটা হলো- আনন্দ মিছিল। আমাদের কপালে আনন্দ নেই। কিন্তু তবু মাঝে মাঝে আনন্দ মিছিল হয়। যখন কোনো বদলোক নির্বাচনে জয়ী হয়।
কত রকম ধনী যে এই সমাজে আছে।
অসৎ ব্যাক্তিরা অবৈধ উপায়ে টাকা করে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। তাদের বাহাদুরিতে টেকা মুশকিল। গত দশ বছরে এই নব্য ধনীর সংখ্যা অনেক হবে। তারা হয়তো বিদেশে গাড়ি বাড়ি সবই করেছে। কেউ কেউ শুধু জুয়া খেলার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যায়। একরাতে কোটি টাকার উপরে জুয়া খেলে। দেশের টাকার এইভাবে বিপুল অপচয়। দেশের টাকা দেশে থাকলে দেশ উন্নত হতো। দূর্নীতি না হলে দেশে বেকারের সংখ্যা কমে যেত। সরকার দুই চারজন দূর্নীতিবাজকে ধরেছে। শুধু দুই চারজনকে ধরলে হবে না। কমপক্ষে এক লাখ দূর্নীতিবাজ ধরতে হবে। এবং এই সমস্ত দূর্নীতিবাজদের দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের সমস্ত টাকা পয়সা দেশের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। আজ যে দেশে মানুষ এত নিষ্ঠুর আর অমানবিক তার পেছনে দায়ী এই সমস্ত দূর্নীতিবাজেরা। আমাদের গ্রামে একটা কথা আছে, ছোট লোকের পোলায় যদি জমিদারি পায়, কানের আগায় কলম গুঁজে বাইজি নাচায়।
১৯৭৬ সালেও এ দেশের মানুষ এত নিষ্ঠুর ছিল না।
এখন এদেশের মানুষ ভয়াবহ নিষ্ঠুর ও অমানবিক হয়ে গেছে। এর কারন অনুসন্ধান করা খুব জরুরী। আজকাল একজন মায়ের মতো বয়সী মহিলা বাসে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ সিট ছেড়ে দেয় না। ছেলে বুড়ো সবাই বসে বসে মোবাইল টিপে। অথচ তার সামনে তার মায়ের বয়সী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, সেদিকে ফিরেও তাকায় না। কেন এই অধপতন? এযুগের মানূষের মানসিকতা এরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে- মনে করে কাউকে ঠকাতে পারলেই বুঝি আমি জিতে গেলাম। কাউকে অপমান করতে পারলেই বুঝি আমি জিতে গেলাম। নিষ্ঠুরভাবে, অন্যায়ভাবে একজন আরেকজনকে মারে। দিনের বেলায় হাজার হাজার মানুষের সামনে কুপিয়ে মেরে ফেলে, অথচ সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে যায় না। এখন’ই যে অবস্থা বিরাজ করছে- তাহলে পাঁচ বা দশ বছর পরে কি হবে? এরকম ভাবলেই বুকের ভেতর ব্যথা শুরু হয়।
বর্তমান সময়ে কোনো মানবিক মানুষ নেই।
টক শোতে যতই তারা ভালো ভালো কথা বলুক তারাও ভালো না। পত্রিকা যত মহৎ কথাই লিখুক তারা মোটেও মহৎ না। সামাজিক যত সংগঠন যারা চালায় তারাই অসামাজিক কাজ করে বেড়ায়। ভালো ভালো কাজ করার জন্য যত রকমের ফাউন্ডেশন আছে, তারাই নানান রকম খারাপ কর্ম করে বেড়ায়। যারা ধর্মের কথা বলে তারাই সবচেয়ে বেশি অর্ধেমর কাজ করে। কবি জীবনানন্দ জানতেন বাঙ্গালী একদিন এরকম হবে, তাই তিনি ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ নামে একটি কবিতা লিখে গিয়েছিলেন। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়, সব কিছু নষ্টদের দখলে চলে গেছে। তাই এই দেশ শেষ হয়ে গেছে। পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে। এযুগের সাধু, বুদ্ধিজীবি, দালাল, ছাত্র ব্যবসায়ী, চাটুকার, ডাক্তার, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, উকিল, পুলিশ সব গুলো বদমাশ। তাদের অবস্থা হয়েছে আমের ভেতরের পোকার মতোন। এক পোকা আমের ভেতর থেকে বের হয়ে বলছে, ভাই ভাই আম কেমন? যে পোকার জন্ম আমের ভেতর সে পোকা জনে জনে জিজ্ঞেস করছে, ভাই ভাই আম কেমন? সবাই নষ্ট হয়ে গেছে। সবাই সব জানে, তবু চুপ করে থাকতে হয়।
সহজ সরল সত্য কথা হলো- এই দেশের মানুষ ভালো না।
তারা খারাপ হয়েছে তাদের নিজেদের দোষে। যে দেশের মানুষ ভালো না, সেই দেশে যতই মেট্রোরেল হোক, পদ্মা সেতু হোক, ফ্লাইওভার হোক, আরো অনেক কিছু হোক তাতে কোনো লাভ নেই। সবার আগে মানুষ হিসেবে ভালো হতে হবে। মানবিক হতে হবে। বিবেকবান ও হৃদয়বান হতে হবে। হাত পা থাকলেই মানুষ ‘মানুষ’ হয় না। মনুষ্যত্ববোধ থাকতে হয়। আজকালকার বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পাইলট বা ব্যবসায়ী বানাতে চান। কিন্তু কোনো বাবা মা’ই বলেন না সবার আগে আমার ছেলেমেয়ে একজন ভালো মানুষ হোক। আরে আগে তো একজন ভালো মানুষ হতে হবে। ছেলেমেয়ে যদি ভালো মানুষ না হয়- তাহলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা পাইলট হয়েও লাভ নেই। আসুন আমরা মানবিক হই, ভালো হই। আন্তরিক হই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:১৯