গ্রামের অল্প বয়সী ছেলেরা দুষ্টমি করেই থাকে।
দল বেঁধে চুরী করে ডাব, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি। যারা বেশী দুষ্ট তারা অন্যের পালা মূরগী চুরী করে রান্না করে খেয়ে ফেলে। এগুলো শৈশবে সমস্ত ছেলেমেয়েরাই করে থাকে। তবে গ্রামের ছেলেমেয়েরা অনেক পরিশ্রমী। তারা ঘর ও জমির কাজে বাবা মাকে সাহায্য করে। স্কুলে যায়, দল বেঁধে নদীতে সাঁতার কাটে, বিকেলে স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে এবং সন্ধ্যায় পড়তে বসে। শহরের ছেলে মেয়েরা এসব পারে না। তারা হয়তো বাঁশের সাঁকো দিয়ে খালের এপার থেকে ওপারেই যেতে পারবে না। অথচ একটা গ্রামের ছেলেমেয়ে দৌড়ে মুহুর্তের মধ্যে সাঁকো পার হয়ে যায়। শহরের পোলাপান ফার্মের মূরগীর মতোন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা শক্ত আর কর্মঠ। আমার জন্ম শহরে। তবে প্রত্যেক শীতে গ্রামে বেড়াতে যেতাম। খুব আনন্দ করতাম।
গ্রামের নাম ধুতরা।
খুব সুন্দর গ্রাম। এই গ্রামে একটা প্রাইমারী স্কুল আছে। গ্রামের সমস্ত রাস্তা কাঁচা। বৃষ্টির দিনে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। এই গ্রামে আমি বেড়াতে গেলাম। ডিসেম্বর মাস, ভয়াবহ ঠান্ডা, প্রায় সারাদিনই কুয়াশা থাকে। তখন আমার ১০/১২ বছর বয়স হবে। আমার'ই বয়সী একদল ছেলে এসে বলল, শহর থেকে আসছো? চলো আমাদের সাথে- মজার এক খেলা খেলবো। আমি মহা আনন্দে তাদের সাথে চলে গেলাম।
রাত তখন দশটা।
আশে পাশের সমস্ত বাড়ির লোকজন কুপি নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। নদীর কাছে গেলাম। ঘাটে একটা নৌকা বাঁধা। নৌকা ভরতি পাট। হয়তো সকাল হলে বিক্রি করতে নিবে হাঁটে। গ্রামের ছেলে গুলো আমার হাতে একটা মশাল দিয়ে বলল- যাও পাট গুলোতে আগুন লাগিয়ে আসো। আমি মনে মনে ভাবলাম এটা তো বড়ই মজার খেলা। ওরা আমাকে সম্মান করছে। আমি শহর থেকে এসেছি বলে। অবশ্যই আমার সাহসের নমুনা দেখাতে হবে। তারপরও আমি বললাম-
এটা আবার কেমন খেলা?
গ্রামের ছেলে গুলো বিশ্রী ভাবে হেসে উঠলো, আর বলল- শহরের ছেলে ভয় পাইছে। হে হে...
এই কথা শুনে আমার খুব রাগ হলো, সাথে সাথে নৌকা ভরতি পাটে আগুন লাগিয়ে দিলাম। মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত পাটে আগুন লেগে গেল। ঠিক তখন গ্রামের ছেলেগুলো পালিয়ে গেল। এদিকে দাউ দাউ করে পাটে আগুন ধরে গেছে। আমিও দৌড়ে বাড়ি চলে এলাম। পরের দিন জানতে পারি- শীত থেকে বাঁচার জন্য পাটের ভিতরে ঢুকে শুয়ে ছিল। তাদের গায়ে আগুন লেগে গেছে। তারা পানিতে লাফ দিল। এবং জানে বেচে গেল। কিন্তু পাট গুলো সব পুড়ে গেল। সকালে এই নৌকা বোঝাই পাট গুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল।
না বুঝে খুব খারাপ একটি কাজ করলাম আমি।
সেই অপরাধ আজও আমার পিছু ছাড়েনি। আজও আমার বড্ড আত্মগ্লানি হয়। এই অপরাধবোধ আজও আমাকে কষ্ট দেয়। অবশ্য আব্বা তাদের ক্ষতিপূরন দেয় এবং আমার পক্ষে থেকে হাতজোর করে ক্ষমা চায়। পরে আব্বা আমাকে বুঝিয়ে বলেছেন- এই রকম যেন আর কখনও না করি। এরপর আজ পর্যন্ত প্রকাশে অপ্রকাশ্যে মানুষের কোনো ক্ষতি করিনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১২