ছোটবেলার কথা আমার খুব মনে পড়ে।
মা আমাকে মাঝে মাঝে এক শ' টাকা দিতেন দেশী মূরগী আনার জন্য। তখন অবশ্য ফার্মের মূরগী পাওয়া যেত না। ৭৫ বা ৮০ টাকা দিয়ে একটা দেশী মূরগী কিনতাম। আর এখন একটা দেশী মূরগীর দাম কমপক্ষে পাঁচ শ' টাকা। তখন পাইজাম চালের খুব চাহিদা ছিল। আমরা তখন পাইজাম চাল খেতাম। কেজি ছিলো মাত্র দশ বা বারো টাকা। এখন চালের কেজি ষাট টাকার উপরে। গরুর মাংস কিনতাম ষাট টাকা কেজিতে। এখন সাড়ে পাঁচ শ' টাকা কেজি। কাঁচা মরিচ কিনতাম এক টাকার। অনেকদিন চলে যেত। এখন কিনতে হয় দশ টাকার। দুই দিনও হয় না। আলু ছিল তিন/চার টাকা কেজি। এখন পঁচিশ টাকা কেজি। শাক ছিল দুই টাকা আঁটি। এখন পনের টাকা। যখন দেশী মূরগী, বা গরুর মাংস বা চাল যথাক্রমে ৮০, ৬০, এবং ১২ টাকা ছিল তখনও মানুষ খুব বলতো জিনিসপত্রের যা দাম! আমি হয়তো মরার আগে দেখে যাবো গরুর মাংস বারো শ' টাকা কেজি।
একটা গোল্ডলিফ সিগারেট ছিল দেড় টাকা।
এখন দশ টাকা। তখন বেনসন ছিল না। ছিল বাংলা ফাইফ। ধনী লোকেরা খেত। দাম আড়াই টাকা। এখন একটা বেনসন তের টাকা। পনের টাকা দিলো, দুই টাকা ফেরত দেয় না। একটা চকলেট ধরিয়ে দেয়। স্কুলে আমাকে টিফিন বাবদ দেওয়া হতো তিন টাকা, কখনও পাঁচ টাকা। সেই তিন টাকা দিয়ে অনেক কিছু খাওয়া যেত। কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের বেতন ছিল এক শ' টাকা। তখন রিকশা ভাড়াও অনেক কম ছিল। এখন রিকশা ভাড়া যেখানে ৩০ টাকা দেই। তখন দিতাম পাঁচ টাকা। এখন একটা বাটারবন/ক্রীম রোল পনের বা বিশ টাকা, তখন দাম ছিল দুই টাকা। তখন পাঁচ টাকা দিয়ে হোটেলে সকালের নাস্তা হয়ে যেত। এখন লাগে কম পক্ষে চল্লিশ টাকা। কোনো ভিক্ষুক বাসায় এলে তাকে এক মুঠ চাল দেওয়া হতো। ভিক্ষুক খুশি মনে চলে যেত। এখন এক মুঠ চাল নিতে কোনো ভিক্ষুক আসে না। এখন ভিক্ষুককে কমপক্ষে পাঁচ টাকা দিতে হয়।
ছোটবেলার দিন গুলো আনন্দময় ছিল।
ঈদের দিন সারা দিনে দেড় শ' টাকা সালামি পেতাম। অনেক টাকা। এই টাকা যতই খরচ করতাম, শেষ হতো না। খেলনা গুলোরও দাম কম ছিল। চিপস, বিস্কুট আচার এক টাকা-দুই টাকা দিয়েই পাওয়া যেত। আব্বা মাঝে মাঝে পাঁচ টাকা দিত। অনেক টাকা। কত কিছু খাওয়া যেত। ছোটবেলা আমি আব্বার সাথে বাজারে যেতাম। অনেক বাজার করতো আব্বা। বাজার থেকে পাঁচ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বাসায় আসতাম। এখন সেই দূরত্বের ভাড়া দিতে হয় ত্রিশ টাকা। ত্রিশ-চল্লিশ টাকা দিয়ে বড় তরমুজ পাওয়া যেত। এখন একটা বড় তরমুজ তিন শ' টাকার ওপরে। ছোটবেলা আমি খুব সাইকেল চালাতাম। আমার বাইসাইকেল ছিলো না। বাইসাইকেল ভাড়া নিতাম এক ঘন্টা আট টাকা করে। তখন একটা নতুন বাইসাইকেলের দাম ছিল পঁচিশ শ' থেকে তিন হাজার। আর এখন একটা সাইকেলের মূল্য কমপক্ষে ত্রিশ হাজার টাকা। আগের আমলে মানুষের কাছে টাকা কম ছিলো? এখন বেশী?
এখন একটা পুরীর দাম পাঁচ টাকা।
ছোটবেলা আলু বা ডাল পুরী খেতাম আটটানা (পঞ্চাশ পয়সা) করে। এক কাপ চা খেতাম এক টাকা করে। এখন কাপ চা ছয় টাকা। কোথাও কোথাও দশ টাকা করে। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতাম। ভিজিট ছিল পঞ্চাশ টাকা। এখন কমপক্ষে পাঁচ শ' টাকা। খিলগা থেকে গুলিস্তান টেম্পু ভাড়া ছিল দুই টাকা। এখন বারো টাকা। কোচিং এর বেতন ছিল এক শ' বা দেড় শ' টাকা। এখন তিন হাজার টাকা। মিষ্টির কেজি ছিল পঞ্চাশ-ষাট টাকা। এখন পাঁচ শ' টাকা। কমলা ডজন ছিল পঞ্চাশ টাকা। এখন তিন শ' টাকা। সেলুনে চুল কাটাতাম দশ টাকা দিয়ে। এখন লাগে কমপক্ষে এক শ' টাকা। গরুর মাংস কালো ভূনা ছিল চল্লিশ টাকা করে। এখন এক শ' পঞ্চাশ টাকা। একটা সিমেন্টের বস্তা ছিল এক শ' টাকা। এখন সাড়ে চার শ' টাকা। একজন রাজমিস্ত্রীর রোজ ছিল দেড় শ' টাকা। এখন সাত শ' টাকা। হোটেলে রুই মাছ দিয়ে ভাত খেলে এক পিছ রুই মাছের দাম নিতো ত্রিশ টাকা। এখন নেয় দেড় শ' টাকা।