রাত আনুমানিক তিনটা হবে।
কোনো কারন ছাড়াই ডান থেকে বাম পাশ ফিরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গে গেলেও আমি চোখ খুললাম না। আমার সমস্যা হলো- চোখে একবার আলো লাগলে আর ঘুম আসবেই না। যদিও চোখে আলো লাগার কোনো কারন নেই। আমি ঘর পুরোপুরি অন্ধকার করে ঘুমাই। যাই হোক, চোখ বন্ধ করে রেখেছি কিন্তু ঘুম পুরোপুরি কেটে গেছে। ঠিক তখন ঝনঝন শব্দ শুনলাম। মনে হলো নূপুরের শব্দ। যেন কেউ পায়ে নূপুর পড়ে হাঁটছে। স্পষ্ট শব্দ। কোনো ভুল নেই। এত রাতে নূপুর পায়ে দিয়ে কে হাটবে? আমি থাকি ছয় তলা বাড়ির ছয় তলায়। আমার জানামতে, আশে পাশে কোনো নাচের শিল্পী নেই। অথচ নূপুরের শব্দ বেড়েই চলেছে। আমার বেশ ভয় লাগছে। কিছুতেই ভয়টা দূর করতে পারছি না।
আমার পাশে আমার স্ত্রী নীলা গভীর ঘুমে।
বুঝতে পারছি না আমি নীলাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করবো কিনা সে-ও নূপুরের শব্দ শুনছে কিনা। আচমকা গভীর ঘুম থেকে ডাক দিলে হয়তো নীলা ভয় পেয়ে যাবে। এদিকে আমি নিজেই ভয়ে কাহিল। আমি নিজেকে চোখ বন্ধ রেখেই বুঝাতে চেষ্টা করছি- নূপুরের শব্দের সাথে ভয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ভয় পেও না শাহেদ। ভয়ের কিচ্ছু নেই শাহেদ জামাল। তুমি চোখ মেলে তাকাও। দেখো আশে পাশে কেউ নেই। কিচ্ছু নেই। কোনো নূপুরের শব্দও নেই। তুমি তো কুসংস্কার মুক্ত মানুষ, তবে তুমি কেন ভয় পাচ্ছো, আবার চোখ বন্ধ করে রেখেছো? মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন আসছে একের পর এক। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এর আগেও আমি বেশ কয়েকবার ঠিক এমন সময় নূপুরের শব্দ পেয়ছি। কোথা থেকে আএ এই নূপুরের শব্দ।
কমপক্ষে দশ মিনিট ধরে নূপুরের শব্দ পাচ্ছি।
এখন আমি উঠে কি দেখবো কোথা থেকে আসছে নূপুরের শব্দ? কে এই মধ্য রাত্রে নূপুর পায়ে হাঁটছে? খুব পানির পিপাসা পেয়েছে আবার প্রসাব বেগ আসছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। যা আছে কপালে। খুব জোরে জোরে তিন শ্বাস নিলাম। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এক মগ পানি খেলাম। মোবাইলে সময় দেখলাম- রাত তিনটা বিশ মিনিট। নূপুরের শব্দ এখনও পাচ্ছি। আস্তে ধীরে রান্না ঘরে গেলাম, পাশের রুমে গেলাম এবং বেলকনিতে গেলাম কিন্তু নূপুরের শব্দ কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারলাম না। মনে হচ্ছে ছাদ থেকে আসছে নূপুরের ঝনঝন শব্দ! আমি নীলার কপালে ছোট একটা চুমু দিয়ে ছাদে গেলাম। আজ আমি ভয়কে জয় করবোই।
কোথা থেকে আসছে নূপুরের শব্দ?
আমাকে বের করতেই হবে। ছাদ বেশ অন্ধকার। তবে ঠান্ডা বাতাস আছে। ছাদের চারিপাশে নানান রকম গাছটাছ দিয়ে ভরা। নীলা গাছপালা ভালোবাসে। বাতাসে গাছের পাতা গুলো নড়ছে। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ এখনও থেমে থেমে নূপুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। ছাদের কোনায় এসে নিচের দিকে তাকালাম। বেশ কয়েকটা কুকুর আলসেমি ভঙ্গিতে কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। হঠাত মনে হলো ছাদে আমি ছাড়া অন্য কেউ একজন আছে। অবশ্যই আছে। সে আমার সাথে কোনো একটা রহস্য খেলা খেলছে। প্রশ্ন হলো কার ইশারায় এই রহস্যময় খেলা হচ্ছে? আমি কি কোনো পাপ করেছি? নূপুর পায়ে আমাকে মারতে এসেছে? আমি ঘামতে শুরু করেছি। আমার আবার পানির পিপাসা পেল।
কেউ একজন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
চারিদিকে বেশ মিষ্টি একটা গন্ধ পেলাম! গন্ধটা বেশ পরিচিত। তার নিঃশ্বাস আমার গায়ে লাগছে। আমি কি চিৎকার দিবো? না পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখবো কে আমার পাশে? ঠিক এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন আমাকে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। স্পর্শেই বুঝতে পারলাম আমার স্ত্রী নীলা। নীলা বলল, হঠাত ছাদে এলে কেন? সিগারেট খেতে? আমি ঘরে সিগারেট খেতে মানা করেছি, তাই ছাদে এসেছো সিগারেট খেতে? আমি বললাম, চলো নীলা ঘরে যাই। নীলা বলল, আর কিছুক্ষন পর আকাশ ফর্সা হতে শুরু করবে। চলো আজ ভোর হওয়া দেখি। ভোরের আকাশ দেখা দারুন আনন্দয় একটা ব্যাপার!
(গল্পটা গতকাল রাতে লিখেছি। কিন্তু রাতে পোষ্ট করতে পারি নি। কারন তখন প্রথম পাতায় আমার একটা পোষ্ট ছিল। তাই সকালে পোষ্ট করলাম। যদিও ভূতের গল্প রাতের বেলাই পোষ্ট করার নিয়ম। যে ভূতের গল্প রাতে পড়লে ভয় লাগে। সেই গল্প দিনের বেলা পড়লে হাসি পায়। সব লেখা সব রকম পরিবেশে পড়া যায় না। যেমন কবিতা পড়তে হয় ভোরে অথবা মধ্যরাত্রে। গোয়েন্দা গল্প পড়তে হয় ভ্রমনের সময়। প্রবন্ধ পড়তে হয় দুপুরবেলা। প্রেম ভালোবাসার গল্প উপন্যাস পড়তে হয় চেংড়া বয়সে।)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৯