গতকালের ঘটনা। তখন সকাল সাড়ে দশটা।
ব্যাক্তিগত কাজে এক সরকারী অফিসে গিয়েছি। গিয়ে দেখি পিয়ন ছাড়া অফিসে কেউ আসে নি। পিয়ন পত্রিকা পড়েছে। ১১টা বাজলো তবু কেউ অফিসে আসে নাই। সাড়ে এগারোটায় এক মেয়ে আসলো তড়িঘড়ি করে। দেড় ঘন্টা বসে থেকে আমার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। আমার এক মিনিটের কাজ। যাই হোক, যে মেয়েটা মাত্র অফিসে এলো। তার কাছে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম মাত্র এলেম?
এই কথা বলা মাত্র মেয়েটা রেগে আগুন! মেয়েটা চোখ মুখ গরম করে বলল, দেরী করে এসেছি তাতে আপনার কোনো সমস্যা?
আমি বললাম, ম্যাডাম আমি তা বলতে চাই নি। আসলে আমি বলতে চেয়েছি- আপনি মাত্র এলেন। অথচ এখনই আপনাকে কোনো সময় না দিয়ে আমাকে কাজের কথাটা বলতে হবে। আর না বলেও আমার উপায় নেই। আজ আমার খুব তাড়া। অথচ বাইরে থেকে জ্যাম ট্যাম পার হয়ে আপনি মাত্র এলেন। একটু পানি খাবেন, এসি ছেড়ে একটু ঠান্ডা হবেন, এক কাপ চা খাবেন, ওয়াশ রুমে গিয়ে একটু আয়নায় নিজেকে দেখবেন। তা-না আমি কাজ নিয়ে সামনে এসে দাড়ালাম। আপনাকে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আমি সময় দিলাম না। নিজে অপরাধ বোধে ভূগছি।
ইদানিং আমি আড্ডা দেই।
কাল রাতে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে গেছে। খুব বেশি দেরী না- রাত দশটা। সুরভি গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সে খুব রেগেছে। বাসায় ফিরে আমি সামু খুলে বসলাম। সুরভি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। টানা আধা ঘন্টা সমানে বকবক করে চললো। আমি চুপ করে আছি। বরাবর আমি চুপ করেই থাকি। হই চই, চিল্লাচিল্লি করা আমার স্বভাব নয়। আমি শান্ত। আমি ভদ্র। সুরভি আসার সময় ওষুধ নিয়ে আসতে বলেছিলো, আমি ভুলে গেছি। এর আগের দিনও এই ওষুধটা আনতে ভুলে গেছিলাম। যাই হোক, সুরভি অনেকক্ষন বকবক করে ঘুমিয়ে পড়লো। তেজ দেখিয়ে রাতে খেলো না। তবে ভাত তরকারী আমার সামনে রেখে দিলো- আমি যেন খেয়ে নিই। আমিও খেলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত তিনটায় সুরভির ঘুম ভাঙ্গলো। সে আমাকে ডেকে তুললো। বলল, আমি না খেয়ে ঘুমিয়েছি কেন? সে এত কষ্ট করে রান্না করেছে। তার কষ্টের দাম নেই? আবার নতুন করে ভাত তরকারী গরম করে আনলো। তারপর আমরা খেলাম। বিয়েসাদি-ঘরসংসার বিরাট দিকদারি। অসহ্য। যারা বিয়ে করেন নি, তারা দয়া করে এই ঝামেলায় যাবেন না। একা থাকুন আনন্দে থাকুন। ঝামেলা বিহীণ থাকুন। অনুরোধ।
বাসার সামনে আজ এক মাস ধরে রাস্তা ভেঙ্গে রাখছে।
ড্রেনে পাইপ বসাচ্ছে। ঠিক করার কোনো নাম গন্ধ নেই। একদিন কাজ করে তো তিন দিন বন্ধ রাখে। এমনিতেই চিপা গলি। এখন গজব অবস্থা। অসংখ্য মানুষের সীমাহীণ কষ্ট। বাজে গন্ধ দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা। আমি না হয় লাফিয়ে টাফিয়ে চলে গেলাম। ছোট ছোট বাচ্চারা কিভাবে যায়? বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিভাবে যাবেন? অথচ এই কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। ওদের মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে তিন থেকে ছয় মাস লাগবে কাজ শেষ করতে। সরকার এরকম লোককে কেন কাজ দেয়? দেশে কি আর ভালো ঠিকাদার নেই? একা একজনের এখন এই গলির মধ্যে দিয়ে যাওয়া ভীষন কষ্টকর। স্কুলের বাচ্চা কাচ্চা অথবা বাজার নিয়ে মানুষ কিভাবে এই গলি দিয়ে যাতায়াত করবে? দেখার কেউ নাই।
আমি শুক্রবার হোটেলে নাস্তা খাই।
পরীকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। আরিশ বলল, সে-ও যাবে আমাদের সাথে। হোটেলে নাস্তা খাবে। বদ আরিশকেও নিয়ে গেলাম। ওকে নেওয়ার আমার কোনো ইছা ছিল না। তিনজন মিলে নাস্তা খাচ্ছি। আমি নিয়েছি রুটি আর নেহারি। আরিশ নিয়েছে স্যুপ আর পরোটা। পরী নিয়েছে মূরগীর গিলা কলিজা ও পরোটা। নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় দেখি আরিশ নাই। আমি ভাবলাম হাত ধুতে গেছে হয়তো। বেসিনের সামনে গিয়ে দেখি আরিশ নাই। নাস্তা খাওয়া বাদ দিয়ে দেখি আরিশ হোটেলের ভেতর কোথাও নেই। নেই। পরীকে হোটেলে বসিয়ে রেখে আমি আরিশকে খুজতে বের হলাম। হোটেলের চার পাশে চারটা গলি। আমি আরিশকে কোন গলিতে খুজতে যাবো? হঠাত মনে পড়লো আমার, ছোটবেলায় আমি একবার হারিয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক, অনেক খোঁজাখুঁজি করে আরিশকে পেলাম। ইচ্ছা করছিল আরিশকে কঠিন এক থাপ্পড় দেই। দিলাম না। আরিশকে নিয়ে আমি আর কোনো দিন বের হবো না। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫১