দুলাল মিয়া দুষ্টলোক।
তার করোনা হয়নি। অথচ দুলাল মিয়া চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে তার করোনা হয়েছে। এখন তার পাওনাদাররা চুপ হয়ে আছে। বরং দুলাল তাদের ফোন দিয়ে, কাদো কাদো গলায় বলে, যদি মরে যাই তাহলে টাকার দাবী ছেড়ে দিবেন ভাইসাহেব। তা না হলে মরেও শান্তি পাবো না। বিপদের সময় আপনি আমারে লোন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথার পর- দুলাল বলে, পাচ হাজার টাকা বিকাশ করে দিলে ভালো হয়। ঋণদাতা মরনপথ রোগীকে খুশি মনে টাকা বিকাশ করে দিচ্ছেন। মনে মনে ভাবছে টাকা ফেরত না পেলেও আল্লাহর কাছে তো এর পুরস্কার পাবো। এরকম বেশ কিছু লোকের কাছ থেকে পাঁচ, সাত, দশ করে নিয়েছে দুলাল। এমন কি বাড়িওয়ালা তার কাছে ভাড়া চায় না। একজন করোনা রোগীর কাছ থেকে ভাড়া চাওয়াটা অমানবিক। দেখা যাবে শেষে ফেসবুকে ছবি দিয়ে বদনাম করে দিয়েছে। দশ জনে জানলে বাড়িওয়ালার মুখে থু থু দিবে। এই ভয়ে বাড়িওয়ালা দুলালকে বলেছে, দূর মিয়া ভাড়া বাদ দেন। আগে সুস্থ হোন।
শফিক বহুত চালাক লোক।
শফিক কিশোরগঞ্জের স্থানীয় একটা পত্রিকার সাংবাদিক। আবার ঢাকার একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। বেশির ভাগ প্রতিনিধি সাংবাদিকেরা বেতন পায় না। আর পেলেও ২ বা ৫ হাজার টাকা পায়। পাঁচ হাজারে নিশ্চয়ই কারো সংসার চলে না। তাই প্রতিনিধি সাংবাদিকদের অনেক ধান্দাফিকির করতে হয়।
শফিক বহুত চালু মাল। সে সব রকম ধান্দাবাজি করে। এবার সে ধান্দা করছে করোনা নিয়ে। সে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে তার করোনা হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার করোনা হয়েছে। এমন কি বিষয়টা বিশ্বাস যোগ্য করার জন্য সে যে করোনা পরীক্ষা করেছে তার একটা ছবিও দিয়েছে। ছবিতে ডাক্তার তার করোনা পরীক্ষা করছে। পরের দিন স্ট্যাটাসে অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, তার করোনা পজেটিভ। মানূষ আহা উহা করতে লাগলো। কেউ কেউ বলল, মনোবল হারাবেন না ভাই। ঠিক হয়ে যাবে। ভয়ের কিছু নেই। নানান জনের নানান রকম কথা।
আমি এই শফিককে ভালো করেই চিনি।
সে কতটা বদ কতটা ধান্দাবাজ তাও জানি। বহু লোক শফিকের কাছে টাকা পায়। সে কোনো দিনই কারো টাকা ফেরত দেয় না। দিবেও না। ঈদের দিন শফিক ফেসবুকে একটা ছবি দেয়- সে একটা ঘরে বন্দী। জানালার কাছে তার ছোট ছেলেটা দাড়িয়ে আছে। সে জানালার কাছে গিয়ে ছেলের দিকে করুক চোখে দেখছে। এই ছবি দেখে অনেকের মায়া লেগেছে। তারা শফিকের মোবাইলে বিকাশ করে দিয়েছে। এবং অনেকে বিকাশ করতে পারেনি। কারন লিমিট নাই আর। শফিক তাড়াতাড়ি ক্যাশ আউট করে। জায়গা খালি করেছে। তারপর আরো অনেকে বিকাশ করতে লাগলো।
একজন ধান্দাবাজের কাছে করোনা, ঈদ বা রমজান সব কিছুই সমান। সমাজে এরকম ধান্দাবাজের অভাব নেই। যার হাত নেই, সে হাত দেখিয়ে ভিক্ষা করে, যার পা নেই সে পা দেখিয়ে ভিক্ষা করে, যার চোখ নেই, সে চোখে দেখি না বলে ভিক্ষা করে। মানে যার যা নেই সে তাই দেখিয়েই ভিক্ষা করে। আর একদল লোক ভাবে ভিক্ষা দিয়ে আল্লাহ খুশি হবেন। বেহেশত পাওয়া সহজ হবে।
মিরপুরের ঘটনা।
ভাড়াটিয়া করোনার আগে থেকেই ভাড়া দেয় না। সাত মাস হয়ে গেছে।
বাড়িওয়ালা খুব অনুনয় বিনয় করে ভাড়া যায় কিন্তু ভাড়াটিয়া কিছুইতেই ভাড়া দেয় না। নানান তালবাহানা করে। যদিও ভাড়াটিয়া ভাড়া দিতে সক্ষম। একদিন বাড়িওয়ালা রেগে যায়। তখন ভাড়াটিয়া চারিদিকে রটিয়ে দেয় তার করোনা হয়েছে। এত চিৎকার চেচামেচি করে যে পুলিশ এসে পরে। পুলিশ এসে পুরো বাড়ি লকডাউন করে দেয়। এবং বাড়িওয়ালা ভয়ে পালিয়ে যায়। যদি পুলিশ বাড়িওয়ালাকে গ্রেফতার করে। একমাস পর জানা গেল ভাড়াটিয়ার করোনা হয়নি। ভাড়া যেন দিতে না হয় তার জন্য সে এই বুদ্ধি করেছে। বাঙ্গালীরা ব্যবসা করতে পছন্দ করে। করোনা নিয়েও চারিদিকে ভালো ব্যবসা হচ্ছে।
শালার আমিই কোনো ব্যবসা করতে পারলাম না। অথচ আমার ব্যবসা করার কত শখ। দীর্ঘদিন ধরে ভেবে বসে আছি ব্যবসা করবো। এদিকে বুড়ো হতে চলেছি। পোড়া কপাল আমার! ভাঙ্গা কূলার ছাই হয়েই রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:২৪