somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন বিদ্রোহী কবি- ১

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখনও দেশভাগ হয়নি।
সময়টা ১৮৯৯ সাল। তখন ব্রিটিশ আমল। ঊনবিংশ শতাব্দী। কলকাতায় গ্যাস বাতির অবসান হলো। কলকাতা শহরে বিজ্ঞানের আবিস্কার বিদ্যুতের আলো জ্বেলে উঠলো। প্রথম বিদ্যুতের আলো! অবশ্য ততদিনে বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের সৌজন্যে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো। কলকাতায় বিদ্যুৎ আসে নিউইয়র্কের ১৭ বছর পর এবং লন্ডনের ১১ বছর পর। কারণ ওই দুই শহরে বিদ্যুৎ এসেছিল যথাক্রমে ১৮৮২ এবং ১৮৮৮ সালে। মধ্য কলকাতার প্রিন্সেপ স্ট্রিটের কাছে ইমামবাগ লেনে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়। প্রথম বিদ্যুতের আলো জ্বলে হ্যারিসন রোডে। এখনকার মহাত্মা গান্ধি রোড। তখন কলকাতায় বিদ্যুতের দাম ছিল লন্ডনের মতোই। প্রতি ইউনিট এক টাকা। বিদ্যুত এসে কলকাতাকে অনেকটা বদলে দেয়। হাত পাখার জায়গা নেয় ইলেকট্রিক ফ্যান। ঘোড়ায় ট্রানা ট্রামের বদলে শুরু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রাম। এই বিদ্যুতের মধ্য দিয়ে কলকাতা শহরে নতুন যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে। কোলকাতা খুবই গুরুত্বপূর্ন শহর। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর। বলা যায়- লন্ডনের পরেই কলকাতা।

বিদ্যুতের সাথে চলে এলো প্লেগ রোগ।
১৮৯৯ সালে প্লেগ যখন মহামারির আকার নিল কলকাতায়, স্বামীজি বিবেকানন্দ বলেছিলেন বস্তি পরিষ্কারের কথা। এই কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল রামকৃষ্ণ মিশন। রবীন্দ্রনাথও তার সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক 'চতুরঙ্গ' উপন্যাসে প্লেগ রোগের কথা বলেছেন। উপন্যাসটি ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয়। অনেক দেশের তুলনায় প্লেগে ভারতে প্রাণহানি হয় বেশি। মূলত এক ধরনের ইঁদুর থেকে প্লেগ হয়। ১৮৯৯ সালে দুইজন শক্তিমান কবির জন্ম হয়েছিলো। একজন কাজী নজরুল ইসলাম। এবং আরেকজন জীবনানন্দ দাশ। অবশ্য আরেকজন জন্মেছিলেন কবি, কথাশিল্পী, নাট্যকার, প্রবন্ধকার- বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে লিখতেন।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। নজরুল কেবল জাতীয় কবিই নন, তিনি বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক কবি, প্রেমের কবি, মানবতার কবি, রাজনৈতিক কবি।

চুরুলিয়া গ্রামটা ছবির মতোন সুন্দর।
প্রাচীনকালে চুরুলিয়ায় একটি দুর্গ ছিল। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে আফগান সর্দার শের খানের হাতে পড়ে। গ্রামে একটি ঢিপি দেখা যায় যা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করা হয়। মুসলিম শাসন আমলে চুরুলিয়ায় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এখানে 'দামোদর' এবং 'অজয়' নামে দুটি নদী আছে। চুরুলিয়া ভারতের কয়লা খনির অন্যতম অঞ্চল।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা। এই জেলার সদর হল আসানসোল। পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রধান ভাষা হল বাংলা ভাষা। বাংলা এই জেলার সরকারি বা দাপ্তরিক ভাষা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কবির অনেক পান্ডুলিপি, পদক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গ্রামের নজরুল একাডেমিতে আজও সংরক্ষিত আছে। কাছাকাছি, এখানে কবির নামে একটি কলেজ রয়েছে। কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপনের সময় প্রতিবছর একটি সপ্তাহব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে চুরুলিয়ায় কাজী নজরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আসানসোল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে চুরুলিয়া।
চুরুলিয়া গ্রামে যাওয়ার পথে দূর থেকেই চোখে পড়ে বেশ কিছু টিলা। আর মাটির নীচে প্রায় সর্বত্রই কয়লা। আঠারো'শ নিরানব্বই সালে যখন চুরুলিয়া গ্রামেরই কাজী ফকির আহমেদের ঘরে জন্ম নেন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র, তার কয়েক বছর পরেই কাছের অজয় নদের ওপারে, ঘণ্টা কয়েকের রাস্তা পেরিয়ে শান্তিনিকেতনে আশ্রম গড়ায় মন দিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অনেকেই শান্তিনিকেতন বা কলকাতার জোড়াসাঁকোয় যান। কিন্তু একটু দুর্গম ও কলকাতা থেকে দূরের চুরুলিয়ায় যাওয়া লোকের সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম! বর্ধমান পার হয়ে রানীগঞ্জের ভেতর দিয়ে আসানসোল হয়ে চুরুলিয়ায় যাওয়া কম রোমাঞ্চকর নয়। সারি সারি কয়লা-পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ট্রেন ভ্রমণ কম মজার নয়! উঁচু উঁচু কয়লার পাহাড় বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় বলে শোনা যায় না। আবার বাসেও কলকাতা থেকে বর্ধমান হয়ে বাসযোগে আসানসোল যাওয়া যায়। আসানসোল রেলস্টেশন অত্যন্ত মনোরম ও ব্যস্ত স্টেশন। আসানসোল থেকে চুরুলিয়া যাওয়ার পথে বাসগুলো অজয় ঘাট পর্যন্ত যায়। চুরুলিয়া গ্রামে ঢুকতেই কবির ম্যুরাল দেখা যাবে। অজয় ঘাটের একটু আগেই চুরুলিয়ার ছোট্ট একটি বাজার। বেশ জমজমাট বাজার।

অজয় নদী দিয়ে ঘেরা নিভৃত প্রত্যন্ত গ্রাম চুরুলিয়া গ্রাম।
চুরুলিয়া প্রাচীন একটি গ্রাম। কলকাতা থেকে আসানসোল রেলপথে ২৩০ কিলোমিটার। চুরুলিয়া গ্রামে এখন ১৭ হাজার মানুষের বাস। গ্রামের পাশ দিয়ে বইছে অজয় নদী। নদীর অপর পাড়ে বাঁকুরা জেলা আর ঝাড়খন্ড রাজ্য। একদা চুরুলিয়ায় ছিল রাজা নরোত্তম সিং-এর রাজপাট। নজরুল যে মোক্তবে পড়তেন ও পড়াতেন তার পাশেই ছিল নরোত্তম সিং-এর গড়। সেই গড় থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে ছিল রানির গড়। দুই গড়কে ঘিরে এই সেদিনও ছিল ঐতিহাসিক পরিখা। নিজের গড় থেকে রাজা পরিখায় নৌক বেয়ে যেতেন রানির গড়ে। তবে দু গড়ের একটিও এখন নেই। একটি কেটে তৈরি হয়েছে নজরুল মেলার মাঠ। অন্যটি প্রায় নিশ্চিহ্ন। পরিখার চিহ্ন ক্ষীন হলেও এখনও তার অস্তিত্ব রয়েছে।

চুরুলিয়া নাম নিয়ে একাধিক মত আছে।
গ্রামের চার প্রান্তে রয়েছেন মন্দির-দরগা মিলিয়ে চারটি প্রাচীন সৌধ। অর্থাৎ চার আওলিয়া। তাই থেকে নাম হয়েছে চুরুলিয়া। গ্রামের দক্ষিণে রয়েছে প্রাচীন একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। অন্যটি ছিল দিঘির পাড়ে। আর দক্ষিণে রয়েছে দুই পির সাহেবের আস্তানা। একজনের নাম জানা যায় না, অন্যজন পির হাজিপালোয়ান সাহেব। হাজিপালোয়ান সাহেবের আস্তানাতেই নজরুল খেদমত (পরিচর্চা) করতেন ছোট বয়েসে। এর পাশেই রয়েছে সেই প্রাচীন পির পুকুর। তার পাড়ে ছিল দুটি প্রাচীন বট আছ। যে গাছের ঝুরি ধরে জোর দোলা দিয়ে কবি ঝঁপ দিতেন পির পুকুরে। আর একদলের মতে চুড়ি ওয়ালারা বসবাস করতেন বলেই তার নাম হয়েছে চুরুলিয়া। তবে এই কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিলের নজির পাওয়া যায়নি।
আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত কালো কয়লার গ্রাম এ চুরুলিয়া। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে ২৪ মে এ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিছিয়ে থাকা এ অজপাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবি নজরুল। এ নির্জনতার ভেতরে কিভাবে বিদ্রোহী হলেন তিনি! প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক।

(চলবে...)

# বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশিবার যে সকল লেখক থেকে বাংলা সাহিত্যের প্রশ্ন হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কাজী নজরুল ইসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১০:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×