আমি ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাই না।
ধর্ম নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না। কেয়ামত, হাশর, বিচার, শাস্তি এসব নিয়ে আমার মধ্যে কোনো চিন্তা নেই। মৃত্যুর পর যা হবে দেখা যাবে- এই হচ্ছে আমার চিরকালের মনোভাব। ঈশ্বর থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না, আবার না থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমাই আছি আমার মতোন করে। একজন মানুষ হিসেবে আমার যা দায়িত্ব আমি তা পালন করতে চেষ্টা করি। ধর্মগ্রন্থ গুলো কি বলেছে, সে সব আমার জানার দরকার নাই। তাই মানার চেষ্টাও করি না। একজন মানুষ হিসেবে যা করার দরকার তা আমি করতে চেষ্টা করি। একজন অন্ধকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দেই। একজন দরিদ্র মানুষকে যতটুকু পারি সাহায্য করতে চেষ্টা করি। আমি মানুষ, আমার মনুষ্যত্ব আছে, বিবেক আছে। বিবেকটাকে সব সময় জাগ্রত রাখতে চেষ্টা করি। বিবেক জাগ্রত রাখতে পারলে মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকা যায়। অবশ্য অন্যায় করতে সাহস লাগে। আমার সাহস কম। ধার্মিকদের মধ্যে সমস্যা আছে। ধার্মিকেরাই পাপ বেশী করে। এজন্য তাদের ভয় বেশী। ভয়ের চোটে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে স্থায়ী কালো দাগ বসিয়ে ফেলে।
আমার কাছে সবার আগে 'মানুষ'।
ধর্ম অনেক পরের ব্যাপার। ধর্ম দিয়ে আমি মানুষ বিচার করি না। মানুষকে 'মানুষ' হিসেবেই দেখি। হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান বড় কথা নয়। যারা ধর্ম দিয়ে মানুষদের বিচার করে তাদেরকে নির্বোধ বলেই মনে করি। আমি বাপ মার কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম পেয়েছি। অর্থ্যাত আমি মুসলমান। কিন্তু আগে আমি মানুষ। পরে আমার ধর্ম। আগে ঘোড়া, পরে গাড়ি। সত্য কথা বলি- ধর্ম আমাকে কিছুই দেয়নি জীবনে। দিয়েছে শুধু নানান রকম নিয়ম কানুন। নানান রকম হুকুম, আর নানান রকম ভয় ভীতি। এসব বিষয় গুলো আমার কাছে হাস্যকর লাগে। আমার ধর্ম যদি বলে অন্য ধর্মের লোকদের খুন করো বা ঘৃণা করো- আমি তা পারবো না। আবার ধর্ম যদি বলে, দালালি বা চাটুকারিতা করতে সেটাও আমি পারবো না। যদি বলে স্ত্রীকে প্রহার করো, আমি সেটা পারবো না। স্ত্রীকে শস্যক্ষেতও ভাবতে পারবো না। যখন খুশি তখন ইচ্ছা মতো লাঙ্গল চালাতে পারবো না। যদি বলে তিন চারটা বিয়ে করো, সেটাও আমি পারবো না। আমার মন যা করতে বলে আমি সেটাই করি। আমার মনই আমার ঈশ্বর।
আমি পাপী মানুষ নই।
কোনো দিন চুরী করিনি, দূর্নীতি করিনি, খারাপ কাজ করিনি- করবোও না। মন্দ কাজ করা আমার ইথিক্সের বাইরে। এখন রোজ হাশরের ময়দানে বিচারের পর যদি আল্লাহ আমাকে বেহেশত দান করেন, আমি কিন্তু বেহেশতে যাবো না। আমি স্বেচ্ছায় দোজকে যাবো। কারন দোজক সম্পর্কে বহু কথা জেনেছি, পড়েছি। ব্যাপারটা আমার কাছে দারুন ইন্টারেস্টিং লেগেছে। মাথার এক হাত উপরে সূর্য থাকবে, আমার শরীর গলে গলে পড়বে, রক্ত পূজ ইত্যাদি খেতে দেওয়া হবে, আগুনে পোড়ানো হবে। ইত্যাদি নানান রকম শাস্তি দেওয়া হবে। আমি সেসব উপভোগ করতে চাই। দোজকের ট্যুর বা লম্বা জার্নি শেষ করে আমি বেহেশতে যেতে চাই। ভয়াবহ সব শাস্তি ভোগ করে বেহেশতে যাবো কোনো একদিন। তাছাড়া শুনেছি, সব পাপীরাই দোজক বাস শেষ করে একদিন বেহেশতে যাবেই। পৃথিবীতে শান্তি পাই নাই আমি। মরনের পরও আমি শান্তি চাই না। কাজেই স্বেচ্ছায় দোজক আমি বেছে নিলাম। 'সত্তর টা হুর পরী দিয়া আমার তো কাম নাই। আমি দোজকে যাবো'।
ধার্মিক হওয়া সবচেয়ে সহজ সহজ।
ধার্মিকদের বিজ্ঞান জানতে হয় না। আইনস্টানের সুত্র জানতে হয় না। ধার্মিক যে কেউ হতে পারে। একজন সিএনজি চালকের সন্তান বা একজন রিকসা চালকের সন্তান। স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার লেখাপড়ার খরচ কম। তাছাড়া দরিদ্র ও অসহায় পিতা মাতারা মনে করেন মাদ্রসার লেখাপড়া ইহকাল পরকাল দুই জাহানের জন্য। ধার্মিক হতে জ্ঞান লাগে না। তবে, ভালো মানুষ হতে জ্ঞান লাগে। এই সমাজে একজন ভালো মানুষ হওয়া কঠিন। তাছাড়া এই সমাজের লোকজন ভালো মানুষ হতে চায়ও না। তারা চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনিতিবিদ ইত্যাদি হতে। কিন্তু তারা বুঝে না প্রথমে একজন 'ভালো মানুষ' না হলে পারলে তার কিছুই হওয়া হবে না। আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা- আমি একজন ভালো মানুষ হবো। সহজ সরল ভালো মানুষ। 'ভালো মানুষ' হওয়ার চেষ্টা আমার অব্যহত আছে। থাকবে। নামাজ রোজা, হজ্ব আর কোরআন পড়লেই আমি ভালো মানুষ হয়ে যাবো একথা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি- মানুষকে ভালোবাসতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করতে হবে, দেশের জন্য ভালো কাজ করতে হবে।
ধার্মিকেরা অনেক হাস্যকর কাজ করেন।
অনেক ধার্মিককে দেখেছি- অযু করার জন্য বেসিনের উপর পা উঠিয়ে দেয়। যদিও লেখা থাকে বেসিনের উপর পা ধোঁয়া নিষেধ। কেউ কেউ প্রস্রাব করে সকলের সামনে পায়জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে নুনু ঘষাঘষি করে। গলা খাখারি দেয়, কুদে। অনেকে সারা সপ্তাহ নামাজ পড়ে না, অথচ জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজ নিয়ে দৌড় দেয়। এদিকে নামাজ শুরু হয়ে গেছে। ফলে তারা রাস্তায় নামাজ পড়ে। রাস্তা বন্ধ করে দেয়। জরুরী কাজে মানুষ রাস্তা পার হতে পারে না। নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমার কথা হলো- তুই নামাজ পড়বি তোর হুশ নাই। আগে কেন গোছল করে নামাজে গেলি না। শেষ মুহুর্তে কেন ছুটাছুটি? বছরের পর বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে জুম্মার নামাজের সময় একই দৃশ্য। আর সারা সপ্তাহ মসজিদ খালি থাকে। বিশ্বাস করুন, সমাজে লোক দেখানো ধার্মিকের অভাব নেই। ইয়া লম্বা লম্বা দাঁড়ি। আমার পরিচিত একজন নামাজ পড়ে না কিন্তু লম্বা দাঁড়ি রেখেছেন। আমি বললাম, ঘটনা কি? পরিচিতজন বলল, লম্বা দাঁড়ি আমার ব্যবসার সুবিধার জন্য। ব্যবসার জন্য ধার্মিকের লেবাস ধরেছি।
একবার আমার দাদীর খুব শরীর খারাপ করলো।
এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যাচ্ছি। জুম্মার নামাজের জন্য রাস্তা বন্ধ। এদিকে আমার দাদীর জীবন যায় যায় অবস্থা। অনেক অনুরোধ অরেছি কোনো লাভ হয়নি। আরেকবার দেখেছি, একজন প্রেগনেন্ট মহিলা বাচ্চা হবে, সিরিয়াস অবস্থা। অথচ এ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। যেতে পারছে না। লোকজন রাস্তায় নামাজ পড়ছে। তোমরা নামাজ পড়ো, রোজা রাখো, হজ্ব করো আমার কোনো সমস্যা নাই। মসজিদ চার তলা, পাঁচ তলা করছো আমার সমস্যা নাই। মসজিদে এসি লাগাচ্ছো। দামী মার্বেল টাইলস, আরও কত কি? অথচ মানুষ না খেয়ে আছে, তাদের দিকে একবার তাকাও। ভালো করে তাকাও। তাদের জন্য কিছু করো। মসজিদ করেছো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। অথচ লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। ছোট একটা অবুঝ শিশু ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকে। তার মুখে মাছি বসে। তাদের জন্য কিছু করো না। আমাদের দেশে মসজিদের অভাব নেই। মসজিদের চেয়ে বেশী দরকার এখন ছিন্নমূল মানুষদের থাকা, খাওয়ার জায়গা। তাদের জন্য কর্মের ব্যবস্থা করা। মসজিদের পেছনে আর টাকা না ঢেলে এদের জন্য কিছু করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ নারাজ হবেন না। খুব আফসোস হয়- প্রতিটা এলাকায় চারটা পাঁচটা করে মসজিদ অথচ একটা লাইব্রেরী নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৮