(সূরা ইউসুফের প্রথমেই আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন- অসাধারণ এক কাহিনী পড়তে যাচ্ছো তুমি। শেক্সপিয়ার, রবীন্দ্রনাথ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়– সবার গল্প গুলোই এই কাহিনীর কাছে নগণ্য। কারন, আমি যে কাহিনী বলতে যাচ্ছি তা সর্বশ্রেষ্ঠ কাহিনী।)
সূরা ইউসুফ কুরআনের ১২তম সূরা।
যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। যদিও অন্যান্য নবীদের ঘটনা কোরআনের বিভিন্ন সূরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু শুধু ইউসুফ- এর ঘটনা কোরআনের সূরা ইউসুফে সম্পূর্ণ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা চিন্তাকর্ষক ও শিক্ষাপ্রদ। ইহুদীরা মুহাম্মাদ-কে প্রশ্ন করেছিলো, "যদি আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী হন, তবে বলুন ইয়াকুব-পরিবার সিরিয়া থেকে মিসরে কেন স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং ইউসুফ -এর ঘটনা কি ছিল? এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মাদ -এর জ্ঞাতার্থে ওহীর মাধ্যেমে পূর্ণ কাহিনী অবতারণ করা হয়।[/sb সূরা ইউসুফ বাংলা অর্থসহ পড়তে চাইলে উহুদীরা মার খেয়ে গেলো। আল্লাহ সাথে সাথেই ইউসুফ আলাইহি সালামের এ ঘটনা সম্পূর্ণ তাঁর মুখ দিয়ে শুনিয়েই ক্ষান্ত হলেন না বরং এ ঘটনাকে কুরইশরা ইউসুফের ভাইদের মতো নবীজির সাথে যে ব্যবহার করছিল ঠিক তার সদৃশ ঘটনা হিসেবে উপস্থাপিত করলেন।
ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনাকে মুহাম্মাদ ও কুরাইশদের দ্বন্দের ওপর প্রয়োগ করে কুরআন মজীদ যেন একটি স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। পরবর্তীকালের ঘটনাবলী তাকে অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণ করেছে। এ সূরাটি নাযিল হওয়ার দেড় দু’বছর পরই কুরাইশরা ইউসুফের ভাইদের মতো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। বাইবেলে ও তালমূদে ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনার যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে কুরআনের বর্ণনা তা থেকে অনেকটা ভিন্নতর। কিন্তু ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ অংশে তিনটি বর্ণনাই একাত্ম।
সূরা ইউসুফে বুদ্ধি ও বিবেচনা সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
কুরআনে যা কিছু বর্ণনা করা হয়েছে এগুলো বানোয়াট কথা নয় বরং এগুলো ইতিপূর্বে এসে যাওয়া কিতাব গুলোতে বর্ণিত সত্যের সমর্থন এবং সবকিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান এসেছে তাদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। সূরা ইউসুফ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মোটিভেশনাল স্পীচ – যার বক্তা স্বয়ং সর্বশক্তিমান আল্লাহ। এই সূরাটি এমন একটা সময়ে নাজিল হয়েছিল যখন রাসূলুল্লাহ (সা) মানসিক ভাবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিলেন। প্রায় দশ বছর মক্কায় ইসলাম প্রচারের পরেও হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন কুরাইশী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
ইউসুফ (আ)-এর বাল্যকালেই আল্লাহ তাঁকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেখিয়ে দিলেন তাঁর ভবিষ্যত। জানিয়ে দিলেন, তাঁর অবস্থান হবে তাঁর বাবা নবী ইয়াকুব (আ), তাঁর মা এবং তাঁর বাকী ১১ ভাইয়ের চেয়ে উপরে। এই স্বপ্ন নি:সন্দেহে সারা জীবন ইউসুফ (আ)-কে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা প্রত্যেকটা মানুষই আমাদের নিজেদের জন্য একটা সীমাবদ্ধতার দেয়াল তৈরী করে রাখি, তারপর আমরা শুধু ওই দেয়াল ঘেরা জগতের ভেতরেই ঘুরাফেরা করতে পছন্দ করি। মানুষের নিজের তৈরী সীমাবদ্ধতার এই জগতকে বলে ‘কমফোর্ট জোন’। মহান আল্লাহ অনেক সময় আমাদেরকে আমাদের কমফোর্ট জোনের বাইরে ঠেলে দেন, যেন আমরা সীমাবদ্ধতার দেয়াল ভেঙ্গে নিজের উন্নতি করতে পারি। ইয়াকুব(আ)-এর জীবনে সবচেয়ে প্রিয়পাত্র ছিলেন তাঁর পুত্র ইউসুফ (আ)।
সুরা ইউসুফের শেষাংশে পুরুষদের থেকে নবি পাঠানো এবং কুরআনের নসিহত বা ঘটনো গুলো শিক্ষামূলক এবং বুদ্ধিমানের জন্য উপযোগী বলে ঘোষণা দেন। আল্লাহ বলেন- - 'আপনার আগে আমি যত জনকে রাসুল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষই ছিল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে। আমি তাঁদের কাছে ওহি পাঠাতাম। তারা কি দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে না, যাতে দেখে নিত কিরূপ পরিণতি হয়েছে তাদের যারা আগে ছিল? সংযমকারীদের জন্যে পরকালের আবাসই উত্তম। তারা কি এখনও বোঝে না?' (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১০৯) ঐশী ধর্মে মিথ্যাচারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাই বলে সব সত্যই যে ব্যক্ত করা জরুরি এমনটিও নয়। ইউসুফ (আ.) এর এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই তিনি ভাইদের কাছে নিজের পরিচয় গোপন রাখলেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন।
তথ্যসুত্রঃ
১। তাফসীর ইবনে কাছির
২। আহসানুল বায়ান
৩। আল কোরআন (বাংলা অর্থসহ)
৪। সহি হাদীস
৫। মোকছেদুল মোমেনীন
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
৭। সূরা আল আরাফ
৮। সূরা আনফাল
৯। সূরা আত-তাওবা
১০। সূরা ইউনুস
১১। সূরা হুদ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৫২