অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো-
বহু লোক কোরআন পড়তে পারলেও বাংলা অর্থ জানে না। অথচ তার পুরো কোরআন মূখস্ত। পুরো কোরআন মূখস্ত করে বসে আছে অথচ জানে না- সূরার তাফসীর, আর শানে নুযুল। জানে না সূরার ব্যাখ্যা। কাজেই যারা কোরআন পড়েন তাদের উচিত বাংলা অর্থ বুঝে পড়া। প্রতিটা সূরার তাফসীর আর শানে নুযূল জানা। কোন সূরা কেন নাযিল হয়েছে। কখন নাযিল হয়েছে। উদ্দেশ্য কি। এখন ভালো ভালো প্রিন্টের কোরআন পাওয়া যায়। তাতে বাংলা অনুবাদ, অর্থ, উচ্চারন, তাফসীর, শানে নুযুল সবই থাকে। আমি মাদ্রাসার বহু ছেলেপেলে কে দেখেছি অল্প বয়সেই কোরআন মূখস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু তারা বাংলা অর্থ জানে না।
সূরা 'আত-তাওবাহ' কোরআনের নবম সূরা।
এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৯ টি। তওবা অর্থ ক্ষমা। মুসলমানদের তওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে এই সূরায়। এই সূরার বৈশিষ্ট্য হলো এর শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা হয় না। কারণ কোরআন শরীফের বিভিন্ন অংশ ২৩ বছরের দীর্ঘ পরিসরে অবতীর্ণ হয়েছিল। কখনও একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও ভেঙে ভেঙে অবতীর্ণ হতো। জিব্রাইল (আ তা কোথায় বসাতে হবে, তা বলে দিতেন। অনেকে এ সূরাকে আনফালের অংশ মনে করেন। সূরা তাওবা পড়তে চাইলে।
সূরা তাওবার বিষয়বস্তুঃ এই সুরায় মূলত ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধবিগ্রহ, জিহাদের আহকাম, স্বরূপ ও প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত কাফিরদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, মক্কা বিজয়, তাবুক ও হুনাইনের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে এখানে। মুনাফিকদের চরিত্র ও পাপাচারের আলোচনা রয়েছে। মুহাজির ও আনসারদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইসলাম গ্রহণ ও মহানবী (সা.)-এর হাতে 'বাইআত' গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত এই সুরায়। সূরার সর্বত্র কিছু যুদ্ধ (মক্কা বিজয়, হোনাইন যুদ্ধ, তাবুক যুদ্ধ) যুদ্ধ সংক্রান্ত ঘটনাবলী এবং এ সংক্রান্ত হুকুম, মাসায়েল ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। এসকল যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আরবের সকল গোত্রের সাথে সকল চুক্তি বাতিলের নির্দেশ আসে।
সূরা আত-তাওবার ১০০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- "মুহাজের ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রসর হয়েছে এবং যারা নিষ্ঠা ও সততার সাথে তাদেরকে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, জান্নাত বা বেহেশতী কুঞ্জ কানন, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে এটাই মহা সাফল্য। এই সূরার ১০১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- “তোমাদের চর্তুদিকে থাকা মরু বাসীদের মধ্যকার একটি দল হচ্ছে মুনাফিক এবং মদীনা বাসীদের মধ্যেও অনেকে কপটতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে চেন না। আমি তাদেরকে চিনি। অচিরেই আমি তাদেরকে দুইবার শাস্তি দেব। পরে তাদেরকে আরও বড় শাস্তির জন্য ফিরিয়ে আনা হবে।
মনে রাখবেনঃ
ইসলাম শুধু এবাদত সর্বস্ব ধর্ম নয় যে, মানুষ শুধু উপাসনা ও বিশেষ এবাদত বন্দেগীর মধ্যেই নিমজ্জিত থাকবে। বরং দারিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত অসহায় মানুষের জন্য কাজ করা, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের ধর্মীয় কর্তব্য হচ্ছে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়া। এর মধ্যে যাকাত হচ্ছে বাধ্যতামূলক, আর সদকা বাধ্যতামূলক না হলেও এর ওপর অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং সদকা অত্যন্ত সওয়াব বা পূণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
অষ্টম হিজরিতে মুসলমানরা মক্কা জয় করেছিলেন।
এ বিজয়ের পর বিশ্বনবী (সা.) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ফলে মক্কার মুশরিকরা আগের মতই এ শহরে জীবন-যাত্রা অব্যাহত রাখে। অর্থাৎ তারা তখনও কুসংস্কার, কুফর ও শিরকে পরিপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানগুলো অব্যাহত রাখে। তাদের কেউ কেউ তখনও কাবা ঘরের চারদিকে উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতো। এইসব অনুষ্ঠান ছিল মুসলমানদের জন্য অসহ্য বিষয়। তারা এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ অবস্থায় সুরা তওবার প্রথম আয়াত নাজিল হয়।
মানুষের কল্যাণে কুরআ নাজিল করা হয়েছে।
যা মুমিনের পথ প্রদর্শক এবং সকল সমস্যার সমাধানকারী। যার মধ্যে নিহিত রয়েছে সকল সমস্যার সমাধান। মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণে রয়েছে বিশেষ কিছু আয়াত। সূরা তাওবা প্রত্যেকদিন যে একশত বার পাঠ করবে, সে পার্থিব ও পরকালীন সকল বিপদ-আপদ হতে মুক্তি পাবে। যে দুই বা তিনবার পড়বে সে বিচারকের সামনে যাবে বিচারক তার প্রতি সহৃদয়তা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। যে এই সূরা দিনে কমপক্ষে একবার পড়বে সে দিন তার মৃত্যু হবে না।
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
৭। সূরা আল আরাফ
৮। সূরা আনফাল
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১৭