somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমার অনুরোধ

২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাসে করে মিরপুর যাচ্ছি। মেঘলা আকাশ।
দুই দিন পর ঈদ। রাস্তা বেশ ফাঁকা। খামারবাড়ি থেকে একলোক বাসে উঠলেন। কাজীপাড়া নেমে যাবেন। বয়স্ক লোক। শক্ত সমর্থ চেহারা। পাঞ্জাবী পায়জামা পরা। পাঞ্জাবীতে বেচ লাগানো। বেচে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখা যাচ্ছে। মুখে খোঁচা খোচা দাঁড়ি। আমার ধারনা তার বয়স হবে ৬০ বছর। কন্টাকটর তার কাছে ভাড়া চাইলো। তিনি বললেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমি ভাড়া দেই না। কন্টাকর বলল- আমি জানি, মুক্তিযোদ্ধাদের বাসের কোনো পাস নেই। ট্রেনের আছে। আপনাকে ভাড়া দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা বললেন, পাস আছে। সে অনেক গুলো আইডি কার্ড বের করলেন। বাসের পাস খুঁজছেন হয়তো। শেষমেষ খুঁজে পেলেন না। তিনি কাজীপাড়া নেমে গেলেন। তখন কন্টাকটর বলল, এসব ভন্ডামি এবার বাদ দিয়ে ভালো হয়ে যান। আমার কথা হচ্ছে- একজন মুক্তিযোদ্ধা দশটা টাকা ভাড়া বাঁচানোর জন্য কেন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিবেন? মুক্তিযোদ্ধা কি এতই সস্তা? এজন্য কি তিনি যুদ্ধ করেছেন?

গুলিস্তান এলাকায় একটা টিসিবির গোডাউন আছে।
সেখানে কমমূল্যে তেল, ডাল চিনি ইত্যাদি দেওয়া হতো। সকাল থেকে লম্বা লাইন দেখা যেতো। মুক্তিযোদ্ধারা এসে লাইন ধরতো না। বলতো দেশ স্বাধীন করেছি কি লাইনে দাঁড়ানোর জন্য? তাঁরা লাইনে না দাঁড়িয়েও পরে এসে, আগে জিনিসপত্র নিয়ে যেতো। সত্যি কথা বলতে কি- অনেক মুক্তিযোদ্ধাই অনেক জাগাতে এরকম করে থাকেন। যারা মুক্তিযোদ্ধ করেছেন তাদের বয়স এখন ৬৫ এর উপরে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা বাসে ভাড়া দেয় না, বা কোথাও কাজে গেলে তাদের পাঞ্জাবীতে একটা ছোট বেচ লাগানো থাকে। ব্যাচে বাংলাদেশের মানচিত্র অথবা শেখ মুজিবের ছবি থাকে। হাতে থাকে একটা অফিস ফাইল। এটা দেখিয়ে তাঁরা বুঝাতে চান- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের সাথে ধানাই পানাই করো না। সম্মান করো। সমীহ করো। আমার ধারনা যারা বেচ লাগিয়ে ঘুরে এবং কথায় কথায় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবী করেন এবং মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেখান তাদের মধ্যে ঘাপলা আছে। একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার এররকম হওয়ার কথা না। কারন সূর্য সন্তানেরা এরকম স্বভাবের হয় না। তাদের তেজ থাকে অন্য রকম।

বাসে এরকম প্রায়'ই দেখা যায়-
মুক্তিযোদ্ধা বলে ভাড়া দিবেন না। কন্টাকটরের সাথে ঝগড়াঝাটি চিল্লাচিল্লি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর হয়ে গেলো। যুদ্ধ করেছেন কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ। এই দেড় লাখের মধ্যে কৃষক আছেন, শ্রমিক আছেন, ছাত্র-শিক্ষক আছেন, দিনমজুর আছেন, চাকরিজীবি আছেন। শেখ মুজিব যুদ্ধ করেননি। তিনি যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের কারাগারে বন্ধী। তাজউদ্দিন আহমেদ যুদ্ধ করেন নি। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করায় ব্যস্ত। অনেক নেতা, কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক যুদ্ধ করেননি। তাঁরা কোনো মতে জান নিয়ে বর্ডার পার হয়েছেন। এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অনেক কবি সাহিত্যিক যুদ্ধ করেননি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস আর কবিতা লিখেছেন। পাক বাহিনী দেশে গজব অবস্থা সৃষ্টি করেছিলো। খুন, ধর্ষন, লুটপাট, আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া। কিছুই বাদ রাখেনি। তাদের সহযোগিতা করেছিলো এদেশেরই কিছু কু-সন্তান। তাদের আমরা রাজাকার বলি। দেশে বিদেশে এখনও কিছু রাজাকার আছে। বিচিত্র কারনে তাঁরা বহালতবিয়তে আছে।

মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
পুরো জাতির তাদের সম্মান করতে হবে। শ্রদ্ধা করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। এখন কতজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন আমি জানি না। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আছে। আরো কি কি যেন তাঁরা সরকার থেকে পাচ্ছেন। আগামী দশ পনের বছর পর দেশে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন না। পত্রিকায় অনেক সময় নিউজ হয়- অমুক মুক্তিযোদ্ধা রিকশা চালাচ্ছেন। ওমুক মুক্তিযোদ্ধা না খেয়ে আছেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এরকম নিউজ সত্যিই দঃখজনক। এখন পর্যন্ত কোনো সরকার সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করতে পারে নাই। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন কেন করেছিলেন? তাদের স্বপ্ন কি পূরন হয়েছে? যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা বন্দুক জমা দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। এরপর তাদের আর কেউ খোজ খবর নেয় নাই। এই সুযোগে অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নিয়েছে।

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনতাম।
তার চরিত্র ভালো ছিলো না। তবু আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম, মুক্তিযোদ্ধা বলে। তার কাছে আমি প্রায়ই যেতাম। যুদ্ধের গল্প শোনার জন্য। অথচ উনি যুদ্ধের কথা সঠিক ভাবে বলতে পারতেন না। থতমত খেয়ে যেতেন। শেষে আমি বুঝলাম উনি আসলে মুক্তিযোদ্ধা নন। কিভাবে যেন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন। সরকার থেকে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। দুই বছর আগে তিনি মারা গেলেন। আমার ধারনা যারা নকল মুক্তিযোদ্ধা তারাই দশ টাকা ভাড়া বাঁচানোর জন্য বাসে ঝগড়া করে। পাঞ্জাবীতে বেচ লাগিয়ে রাখেন। গায়ক ফকির আলমগীর মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। উনি সেই খাতিরে অনেকের কাছ থেকে নানান তাল বাহানা করে টাকা নিতেন। একজন আসল মুক্তিযোদ্ধা যতই গরীব হোক, উনি বাসে উঠে দশ টাকা ভাড়া দিয়ে দিবেন। দশ টাকা বাঁচানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা বলে নিজের পরিচয় দিবেন না। বাসের ভাড়া না দেওয়ার জন্যই কি তাঁরা যুদ্ধ করেছেন? এটা কেমন কথা?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×