প্রিয় কন্যা আমার-
আজ আমি অফিসে যাইনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে গিয়েছি। গত তিন দিন ধরে ফ্রিজ খালি। আজ বড় একটা রুই মাছ কিনেছি। টেংরা মাছ আর পাবদা মাছ কিনেছি। আরো মাছ কেনার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু পছন্দ মতো মাছ পাইনি। দেশী বাচ্চা মূরগী চারটা ১৬শ' টাকা বললাম। দিলো না। বাজারে শীতের সবজি এসেছে। শিম, ফুলকপি আর টোমেটো কিনলাম। নতুন আলু এখনো আসেনি। দুপুরে তোমার মা রুই মাছ রান্না করেছে শিম আর ফুলকপি দিয়ে। খেতে ভালোই হয়েছে। সাথে ছিলো করলা ভাজি আর ডাল। খাওয়ার পর আমার ঘুম চলে এলো। অথচ আমার নবাবপুর যাওয়ার কথা ছিলো। ঘুম ভাঙ্গলো ভর সন্ধ্যায়। ভাতঘুম দিতে গিয়ে একটা স্বপ্ন দেখে ফেললাম। সমুদ্রের পাড়ে তুমি আমি হাঁটছি। তোমার হাতে অনেকগুলো লাল নীল সবুজ বেলুন। সুরভি দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম খান-
সকালেই বলে রেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে সন্ধ্যায় বাইরে যাবো। সন্ধ্যায় তোমার মা নুডুলস রান্না করলো। খেলাম। তুমিও খেলে। এক কাপ চা খেয়ে তোমাকে নিয়ে বাইরে বের হলাম। উদ্দ্যেশ রিকশায় করে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াবো। আজ সারাদিন বিএনপির ঢাকা অবরোধ ছিলো? সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেশ রিকশার ভিড়। জ্যামে বসে তুমি আর আমি পপকর্ন খেলাম। অনেকক্ষন রিকশায় ঘুরে বেড়িয়ে আমরা একটা মার্কেটে গেলাম। তোমার জন্য জুতো কিনলাম। অনেক গুলো জামা কিনলাম। ফল কিনলাম। বাসায় ফেরার পথে তুমি কোন আইসক্রিম খেলে। ভ্যানিলা ফ্লেবার। নতুন জুতো, জামা আর ফল কেনাতে তোমার মুখে হাসি দেখনি। কিন্তু আইসক্রিম হাতে পেয়ে তুমি ভীষন খুশি। তোমার মাও খুব আইসক্রিম পছন্দ করে।
প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার ডাকনাম 'ফাইহা'। ফাইহা নামটা তোমার মায়ের পছন্দ না। তোমার মায়ের পছন্দ 'হানিত্রা' নামটা। হানিত্রা নামটা রেখেছেন তোমার বড় মামা। তোমার বড় মামা আর মামী ফিন্ডল্যান্ড থাকেন। যাইহোক, এখনও তোমার জন্মনিবন্ধন করা হয়নি। দেখি শেষমেষ কোন নামটা থেকে যায়। নাম কোনো বিষয় না। আসল হচ্ছে কর্ম। যার কর্ম সুন্দর, তার সব সুন্দর। আমাদের নবীজির নাম যদি মোহাম্মদ না হয়ে আহাম্মদ হতো অথবা আলী হোসেন হতো- তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। নবীজিকে মানুষ ভালোবাসে তার কর্মের জন্য। নামের জন্য নয়। ফারাজা, তোমার মন দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। তারপর নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য কাজ করতে হবে। জীবনটা শুধু হেসেখেলে উড়িয়ে দেবার জন্য না। তোমার জীবন তুমি তোমার মনের মতোণ করে সাজিয়ে নেবে। যা করার তোকেই করতে হবে। ভালো সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়।
প্রিয় কন্যা আমার-
ডিসেম্বর মাসটা শেষ হয়ে গেলেই তোমার তিন বছর হয়ে যাবে। তুমি বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ শিখেছো। My God, wake up, good morning, oh no, Come. সুন্দর উচ্চারণ তোমার। এই ইংরেজি শব্দ গুলো আমি তোমাকে শেখাইনি। তোমার মা-ও শেখায়নি। তুমি ইউটিউবে কার্টুন দেখে নিজে নিজেই শিখেছো। তোমার মুখে ইংরেজি শব্দ গুলো শুনে আমার ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে, আমি রাতে বাসায় ফেরার পর তুমি আমাকে দেখেই বাবা বলে চিৎকার করে ডেকে ওঠো। দৌড়ে আসো আমার কাছে। এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে ধরো আমাকে। তোমার জন্মের আগে তোমার মা-ও ঠিক এমনটা করতো। ইদানিং তোমার এক ঢং হয়েছে রাতে ঘুমানোর সময় বলো- বাবা আঙ্গুল ফুটিয়ে দাও। পা টিপে দাও। ঘুম বাদ দিয়ে আমি তোমার হাত ও পায়ের আঙ্গুল ফুটিয়ে দেই। তোমার পা টিপে দেই। আমার বিরক্ত লাগে। বরং আনন্দ লাগে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
আজকাল তোমার মোবাইলের খুব নেশা হয়েছে। তুমি নিজে নিজেই ইউটিউব ছেড়ে নিজের পছন্দ মতো কার্টুন দেখো। এখনও তুমি আমার পাশে বসে মোবাইলে কার্টুন দেখছো। ফারাজা, আমি যখন ছোট ছিলাম- তখন মোবাইল ছিলো না, ইন্টারনেট ছিলো না। আমাদের ঘরে একটা রঙ্গীন টিভি ছিলো। চ্যানেল ছিলো মাত্র একটা। বিটিভি। তাও দুপুর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলতো। ভিসিআর ছিলো কিন্তু সেটা আমি চালাতে জানতাম না। আমি বিকেলে মাঠে যেতাম। খুব ফুটবল খেলতাম। ফুটবল আমি ভালো খেলতাম। গোলকিপার এবং মাঝমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে আমার বেশ নামডাক ছিলো। সেন্টাল স্কুলের মাঠে প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলতাম। সন্ধ্যায় পড়তে বসতাম। রাত নয়টায় খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। কি সুন্দর সহজ সরল সুন্দর দিন ছিলো।