somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুঙ্গিলিকস

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত লুঙ্গি

সবাই লুঙ্গি নিয়ে অতিমাত্রায় মাতামাতি করছে দেখে আমারও ইচ্ছা হইল লুঙ্গি নিয়া নিজের সত্য ঘটনা 'লুঙ্গিলিকস' প্রকাশ করার। জাতীয় জীবনের অপরিসীম নিত্য প্রয়োজন, পরিবেশ বান্ধব লুঙ্গি নিয়ে আছে আমার ছোট ছোট অনেক স্মৃতি। প্রথমেই আসি মুসলমানির গল্পে।

আমার জীবনের প্রথম লুঙ্গিখানা পাইয়াছিলাম আমার মুসলমানির দিনে। লুঙ্গি পাইয়াছিলাম বটে, তবে কতখানি কি হারাইয়াছিলাম তাহা পাঠক অমুমান করিতে পারিতেছেন নিশ্চই। যাইহোক, মুসলমানির পরে প্যান্ট, পায়জামা পড়ার মত বিরম্বনা দ্বিতীয়টা আর নাই। লুঙ্গিই একমাত্র ভরসা। একে গরমের দিনে মুসলমানি করাইয়াছে, তাহার উপরে কাটা স্থানে যন্ত্রনা। আমি ছোটমানুষ, বাতাস যেদিক থেকে আসে, সেদিকেই লুঙ্গি উত্তলন করিয়া দাড়াইয়া থাকতাম, আমার ডোরাকাটা ছাপের সেই ঐতিহাসিক লুঙ্গি, আমার মুসলমানির সুখ।

গ্রামের বাড়িতে গ্রীষ্মকালীন অবকাশে আম-কাঠাল খাইবার সিজনে বেড়াইতে যাইতাম সব কাজিনরা মিলিয়া। সেই সময়ে খালে-পুকুরে নতুন জোয়ার আসিত। যেহেতু আমার কোন স্বীয় লুঙ্গি ছিল না, আমি দাদার একখানা লুঙ্গি কোমরে গিঁট মারিয়া খালের নব যৌবন জোয়ারের জলে ঝাপাইয়া পড়িতাম। একদিন দেখা গেলো সকলের সহিত লাফ ঝাপ চলিতেছে। আমরা সকলেই আধাবেলা পানি ঘোলা করিয়া, চক্ষু রক্ত বর্ণ করিয়া ডাঙ্গায় উঠিয়া গেলাম। দুপুরে মাছের মাথা, গরুর দুধে হেব্বি লাঞ্চ করিয়া খালপারে যাইয়া দেখি আমার এক কাজিন তখনো পানিতে গলা ডুবাইয়া দাঁড়াইয়া আছে। ভাবিলাম তাহাকে জ্বিন-ভুতে ধরিয়াছে। ডাকিয়া চিক্কুইর পাইরা বাড়িসমেত লোক জড় করাইলাম তাহাকে জ্বিন ভূত হইতে উদ্ধার করাইতে। সবশেষে জানিতে পারিলাম, আমার কাজিন পানির নিচে তাহার লুঙ্গি হারাইয়াছে, লজ্জাস্থান ঢাকিবার উপযুক্ত কিছু না পাওয়াতে ডাঙ্গায় উঠিতে পারিতেছে না।

স্কুল কলেজে পড়ি। প্রায় রাতেই বই পড়তে পড়তে ফুলপ্যান্ট পড়িয়াই ঘুমাইয়া যাইতাম। সকাল বেলায় ঘুম হইতে উঠিয়া দেখিতাম কোনদিন আমার পড়নে লুঙ্গি, আবার কখনো নিজেকে বস্ত্রশূন্য আবিস্কার করিতাম। এখানে গায়েবী কোন ব্যাপার নাই, রাত্রে আব্বা আসিয়া লুঙ্গি পড়ায় দিয়া যাইতেন, আর লুঙ্গির গিঁট খুলিয়া সকালে আবিস্কার করিতাম তাহা আমার গলায়, নয়ত আমার আশেপাশেই নাই।

আমার এক বন্ধু ছিল। স্কুল এবং কলেজ লাইফের জিগ্রি বন্ধু। একদিন সে আসিয়া আমার কানে কানে বলিল, "দোস্ত তোকে একখানি গোপন কথা কহিব, কথা দে কাউকে জানাইবি না।" আমাকে সমস্ত বস্তুর কসম কাটাইয়া সে বলিল, "দোস্ত আমাদের বাড়িতে যে ফজলি আমের রাছ রহিয়াছে, প্রাতঃবেলায় আমি ঘুম থেকে উঠিয়া সেই গাছের ডালে ঝুলিয়া শরীরচর্চা করিতেছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার লুঙ্গির গিঁট লুজ হইয়া খুলিয়া গিয়াছে, দোস্ত ব্রেকিং নিউজ আমার লুঙ্গির নিচে কিছুই ছিল না।" আমি দেখিলাম এহেন কান্ডে আমার বন্ধুটি ব্যাপক খুশি। আবার জিজ্ঞেস করিলাম, এতে এত খুশি হওয়ার কি আছেরে বেক্কেল? সে একচোট হাসিয়া লইল, অতঃপর কহিল, "আমাদের পাশের বাসায় সুন্দরী এক ভাবি থাকে দেখছিস? সেই ভাবি ওই সময়ে জানালা দিয়া আমার তালব্য-শ অবলোকন করিতেছিল।"

লুঙ্গির গিঁট দুর্বল, পুরুষের জন্যে লজ্জা। এমন সময় আছে দুষ্টামি করিয়া বন্ধুর লুঙ্গিতে টান মারিয়াছি, খোলা রাজপথে উহা খুলিয়া পথচারীদের কুতুব মিনার দেখাইয়া দিয়াছে। কখনো কাল বৈশাখীর আবার বাতাসে দেখিয়াছি কাহারো লুঙ্গি উঠিয়া মাথায় বাঁধিয়াছে, পশ্চাতে নিতম্বের দুইভাগ। কিছুদিন আগেই তো বলিয়াছি নামাজ পড়তে গিয়া সিজদাহ হইতে উঠিতে যাইয়া কতকাল সাম্নের ব্যাক্তির লুঙ্গির ভিততে মাথা ঢুকিয়া গিয়াছে ইয়াত্তা নাই। কতকাল গাছে উঠিয়া খুলিয়া গেছে লুঙ্গির গিঁট।

বারিধারায় লুঙ্গি নিষিদ্ধের জোর প্রতিবাদ জানাই। এই লুঙ্গিতে জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশব, কৈশোর। লুঙ্গিতে লুকিয়ে আছে কত সুখের স্মৃতি। কত রাতের সঙ্গী এই লুঙ্গি। আজ কালের বিবর্তনে লুঙ্গির অভাবে আমিও হাফপ্যান্ট পড়ি, তাই বলে লুঙ্গি নিষিদ্ধ হওয়ার কথা শুনে ব্যাথিত না হওয়ার মত পাষাণ নই আমি। সবশেষে সবাই চলুন একটা ভাবসম্প্রসারন করি,

"ফিরায়ে দাও আমার লুঙ্গি
লও এই ইংলিশ প্যান্ট।"



ছবিতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিলা। তিনি ইদানিং গুলশান নতুনবাজার এলাকায় ভাড়ায় রিক্সা চালায়ে দুপয়সা বেশি ইনকাম করেন বলে জানা গেছে। ভেন্টিলেশন সিস্টেমের লুঙ্গি পড়ে বারিধারায় প্রবেশ করতে না পেরে তিনিও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×