somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

*কালজয়ী*
গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

করোনা মহামারী ও লকডাউনের সময়ে নাগরিকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন কিন্তু হতাশা-উদ্বেগ-ভয়-অভিমান-উৎকণ্ঠার (আত্মহত্যার উপকরন) হার কমে নাই-----(১৩)

৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটে-The Lancet প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মহামারির প্রথম বছরে বিশ্বব্যাপী হতাশা ও উদ্বেগের ঘটনা এক-চতুর্থাংশের বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে নারী ও তরুণদের মধ্যে তা বেশি প্রভাব ফেলেছে।



তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ

আমাদের তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এই বিবেচনাতে যে, তাদের ছোটাছুটি করার সময় কিন্তু তারা গৃহবন্দি হয়েছে। বিশেষ করে যারা শিক্ষার শেষ পর্যায়ে তাদের এখন চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে পারছে না এতে তারা মানসিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। আর নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি হল তারা তো পরিবারকে ধরে রাখে। তাদের তো ম্যানেজ করতে হয় সবকিছু। ফলে তাদের উপর চাপটা পড়ে বেশি।



মানসিক স্বাস্থ্যের কেস স্ট্যাডি গবেষণা অনুযায়ী, কোন পরিবারে কেউ যদি মানসিকভাবে স্বাভাবিক না থাকেন তখন তার প্রভাব অবশ্যই অন্যদের উপর পড়ে। যেমন ধরে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি অসুস্থ থাকেন তাহলে পরিবারের উপর আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসে। অন্যদিকে পরিবারের কর্ত্রী বা মা যদি অসুস্থ থাকেন তাহলে পরিবারটি ছন্নছাড়া হয়ে যায়। আর যদি সন্তানরা অসুস্থ থাকে তাহলে বাবা-মা সবার উপরই এর প্রভাব পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক গবেষণা রিপোর্টঃ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি সংক্রান্ত গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশঃ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর গবেষণা টিমের 'এশিয়ান জার্নাল অব ইউনিভার্সিটি এডুকেশন'-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে (নোবিপ্রবি) দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।

নোবিপ্রবি রিসার্চ সেলের অর্থায়নে পরিচালিত হয় গবেষণাটি। এতে ১৮টি বিভাগের ১৫৭ জন শিক্ষার্থী মতামত দেন। এদের মধ্যে ১০.২ শতাংশ (১৬ জন) প্রথম বর্ষের, ২২.৯ শতাংশ (৩৬ জন) দ্বিতীয় বর্ষের, ৩৯.৫ শতাংশ (৬২ জন) তৃতীয় বর্ষের এবং ২৭.৪ শতাংশ (৪৩ জন) ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

অংশগ্রহণকারীদের ৩৮.২ শতাংশ (৬০ জন) ছেলে এবং বাকি ৬১.৮ শতাংশ (৯৭ জন) মেয়ে। এদের মধ্যে ফিমস, ফার্মেসি, অণুজীববিজ্ঞান, বিজিই, ওশেনোগ্রাফি, ইংরেজি, ইইই, সোশিয়লজি, আইন, সিএসটিই, এমআইএস, বিএলডব্লিওএস, ইএসডিএম, এগ্রিকালচার, টিএইচএম, এপ্লাইড ম্যাথম্যাটিকস, এডুকেশন, ইকোনমিকস বিভাগের শিক্ষার্থীরা মতামত দেন।


গবেষণায় করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের অতিমাত্রায় মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার বিষয়ে তুলে ধরেন গবেষকরা। এছাড়াও পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার সাথে মানসিক অবস্থার পরিবর্তনেরও সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।



শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন নির্ণয়ের জন্য ৬টি নির্দেশক (দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হতাশা, উদ্বেগ, বিরক্তি, ভয়) ব্যবহার করা হয় গবেষণায়। এতে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হতাশা, উদ্বেগ, বিরক্তি, ভয়ের পক্ষে মতামত দেন এবং বাকি এক- তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অল্পমাত্রায় দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হতাশা, উদ্বেগ, বিরক্তি, ভয়ের পক্ষে মতামত দেন।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের ৮৭.৯ শতাংশ (১৩৮ জন) বেশিমাত্রায় অমনোযোগী এবং বাকি ১২.১ শতাংশ (১৯ জন) কম অমনোযোগী এর পক্ষে মতামত দেন।


করোনাকালীন সময়ে অধিক শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ও পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে নোবিপ্রবিসহ দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন গবেষকরা।

মানসিক স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টা কখনই আমাদের মনোযোগে ছিল না। করোনা আমাদের দেখিয়েছে এদিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। আমাদের সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতিতে মনোযোগ দিতে হবে। আমি যদি একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারি, খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারি তাহলে তাকে তো আমি শুধু বুঝিয়ে বা ওষুধ দিয়ে তো তার মন ভালো করতে পারব না। তার এই চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। মূল কথা হল আমাদের আর্থসামাজিক স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য একটা নাজুক বিষয়। আপনার শরীর যদি ঠিক না থাকে তো আপনার মন খারাপ হবে। আবার আপনার যদি আর্থসামাজিক অবস্থা ভালো না থাকে তাহলেও আপনার মন খারাপ হবে। মূল কথা হল, আপনার মন ভালো রাখতে হবে। মনের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর যারা আক্রান্ত হয়ে গেছে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে শুধু একটা রোগ হিসেবে বিবেচনা করলে এর সমাধান হবে না।

দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংকট

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, বাংলাদেশের এখনকার জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৮লাখ৷বিপরীতে দেশে মনোচিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা ৯০০ জনের মত।

২০১৮-১৯ সালের সমীক্ষাকে উদ্ধৃত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্তদের মাত্র ৭.৭ শতাংশ চিকিৎসা পায়৷ বাকী ৯২.৩ শতাংশ মানুষ থেকে যায় চিকিৎসা সেবার বাইরে৷

বাংলাদেশে মনোচিকিৎসক রয়েছে ২৬০ জন৷ সে হিসাবে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য দশমিক এক ছয় জন মনোচিকিৎসক রয়েছেন৷

আর দেশে মনোবিজ্ঞানী রয়েছে ৫৬৫ জন৷ সে হিসাবে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য দশমিক তিন চার জন মনোবিজ্ঞানী আছেন৷ এরা সবাই মোটামুটি শহর এলাকাতেই সেবা দিয়ে থাকেন৷ আর সাইকিয়াট্রিক নার্স আছে ৭০০ জন৷

দেশে মানসিক হাসপাতাল রয়েছে ২টি, যেখানে মোট বেড ৭০০টি৷ এছাড়া ৫৬টি হাসপাতালে সাইকিয়াট্রিক ইউনিটে আরো ৫০৪টি বেড রয়েছে৷

করোনাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়, আত্মহত্যা, কেস স্ট্যাডিঃ প্রসঙ্গ ভারত কিন্তু বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় দিকগুলো লক্ষ্য করা

করোনাকালে ভারতে মানসিক রোগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। মনোবিদ ও চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ভারতীয় চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের বলছেন, সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ হঠাৎ করে হাইপার টেনশনের রোগীতে পরিণত হয়েছেন। এর সংখ্যা গত একবছরে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। তার কারণ যে করোনা মহামারী এ বিষয়টি ডাক্তার সাত্যকির পর্যবেক্ষণে উঠে এসছে।

মন-সমাজবিদ মোহিত রণদীপ একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তার বক্তব্য, শুধু বয়স্ক মানুষ নয়, তরুণ এবং যুবকদের মধ্যেও গত একবছরে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি চোখে পড়ার মতো। বয়স্করা যখন মৃত্যুর আশঙ্কায় হতাশায় ভুগছেন। স্বাভাবিক জীবন পাল্টে ফেলে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন, তেমনই তরুণ এবং যুবকরা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে হাতাশায় ভুগছে। ভারতে গত দেড় বছরে প্রায় ১২ কোটি মানুষের চাকরি গেছে। এর মধ্যে আট কোটি মানুষ বাড়ির একমাত্র রোজগেরে। লকডাউন ওঠার পরেও এদের অধিকাংশ কাজ পাননি। এখনো চাকরি যাচ্ছে অনেকের। তারমধ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া। সংসার চলবে কী করে, এই আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়।'' সম্প্রতি এমনই এত হতাশায় ডুবে যাওয়া যুবকের চিকিৎসা শুরু করেছেন মোহিত। কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি তার ক্লিনিক্যাল চিকিৎসাও চলছে। অর্থাৎ, ওষুধ খেতে হচ্ছে। মোহিতের বক্তব্য, ওই যুবক এক বন্ধুর মারফত চিকিৎসকের কাছে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। না এলে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও তিনি ঘটিয়ে ফেলতে পারতেন। মোহিতের বক্তব্য, খুব কম মানুষই মনোবিদ বা মনচিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন। কারণ, সমাজে এখনো ট্যাবু আছে। মনোবিদ বা মনের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অর্থ তিনি পাগল।

২০২০ সালের শেষের দিকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনাকালে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভারতীয় কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। লকডাউনের সময় এর পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। লকডাউনের পর শতাংশের হার কমলেও জটিল মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

কলকাতার একটি নামি স্কুলের সঙ্গে জড়িত মনোবিদ ও চিকিতসক বলছিলেন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশাহারা বহু ছাত্রছাত্রী। বিশেষ করে যারা পড়াশোনায় একটু ভালো, উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রী, বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা ভেবেছে, এদের মধ্যে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারীর বক্তব্য, উদ্বেগ এখন ডিপ্রেশনের জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। তার কথায়, ''তবু তো শহরের স্কুলের ছেলেমেয়েরা অনলাইন পড়াশোনা করতে পেরেছে। গ্রামের দিকে গত দেড় বছরে কার্যত কোনো পড়াশোনা হয়নি। ওদের উদ্বেগ অন্যরকম।’’

মোহিত এবং সাত্যকি দুইজনেরই মত, অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয়দের মধ্যে মানসিক রোগের পরিমাণ আরো বাড়বে। তার মূল কারণ, এই পরিস্থিতিতে সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়ানো দরকার ছিল, তা তারা করছে না। বরং উল্টোটাই ঘটছে। মূল্যবৃদ্ধির হার ভয়াবহ। পেট্রোলের দাম একশ পেরিয়ে গেছে। ডিজেলও একশ ছুঁইছুঁই। রান্নার গ্যাসের দাম প্রায় প্রতিমাসে বাড়ছে। ভোজ্য তেলের দাম তিন মাসে দ্বিগুণ হয়েছে। সাধারণ খাবারের দাম আকাশছোঁয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হতাশা ও সমাধান/করনীয় নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা তথ্য প্রকাশ করেছে।

ডিপ্রেশন/হতাশা: আপনার যা জানা উচিত
বিষন্নতা কী?


ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা যেকারো হতে পারে এবং এটি কোনো দুর্বলতার লক্ষণ নয়৷ এটা একধরনের অসুস্থতা যার লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘ সময় মন খারাপ থাকা, নিত্যদিনের কাজ যা আপনি উপভোগ করতেন তা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা সেসব কাজ করা কঠিন মনে হওয়া৷

বিষন্নতার আর কী কী লক্ষণ আছে?

বিষন্নতায় আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে আরো অনেক লক্ষণ থাকতে পারে৷ যেমন তারা সারাক্ষণ দুর্বল অনুভব করতে পারে, তাদের খাদ্যের রুচি চলে যেতে পারে, ঘুম আগের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে, সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দিতে পারে, এমনকি নিজেকে মূল্যহীন মনে হতে পারে৷ মারাত্মক বিষন্নতা কাউকে নিজের ক্ষতি করা বা আত্মহত্যায়ও উৎসাহিত করতে পারে৷

বিষন্নতা রোধের উপায় কী?

বিষন্নতার চিকিৎসা রয়েছে৷ একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটা দূর করা সম্ভব হতে পারে৷ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধও গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে৷

বিষন্নতা অনুভব করলে কী করবেন?

বিষন্নতা অনুভব করলে আপনি এমন কারো সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন যাকে আপনি বিশ্বাস করেন৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেক সময় শুধু কথা বলেও বিষন্নতা কাটানো যেতে পারে৷

বিষন্নতা থেকে দূরে থাকতে আর কী করা যেতে পারে?

আপনার ভালো লাগে এরকম কিছু কর্মকাণ্ড নিয়মিত করতে পারেন৷ পাশাপাশি বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে ভালো৷ খাওয়াদাওয়া এবং ঘুমের ক্ষেত্রেও একটি রুটিন অনুসরণ করতে পারেন৷

ব্যায়াম করলে কী বিষন্নতা কমে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো৷ বিষন্ন মনে হলে ইচ্ছা না থাকলেও অন্তত বাইরে গিয়ে হাঁটাহাটি করুন৷ আর বিষন্নতা কাটাতে মদ্যপান কোনো সমাধান নয়৷ এলকোহল বিষন্নতা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে৷

আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগলে করণীয় কী?

আপনার মধ্যে যদি আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে তাহলে আপনার বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করুন যাতে তিনি আপনাকে এই চিন্তা থেকে দূরে যেতে সহায়তা করতে পারে৷ অনেক দেশে এরকম পরিস্থিতিতে মানসিক সহায়তা পেতে জরুরি ফোন নম্বর রয়েছে৷ দরকার হলে সেখানেও ফোন করতে পারেন৷

জীবন ভালবাসুন ও জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করুনঃ

বিষয়টি পুরনো হলেও করোনা আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে। মনে করিয়ে দিয়েছে শুধু শরীর নয়. মনও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মন আর শরীর আলাদা করার উপায় নেই। একটির অসুখ হলে আরেকটিরও অসুখ হয়। আর একটি ভালো থাকলে আরেকটি ভালো থাকে।



পারিবারিক চাপে অভিমান থেকে আত্মহত্যাঃ কেস স্ট্যাডি (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। সে মারা গেছে আগুনে পুড়ে। সেই পরিবারের সদস্যদের দুই-একজনের সাথে গবেষকের পরিচয় আছে। আগুনে পোড়ার কারণ জানতে পেরে আমি হতবাক হয়ে পড়ি। পরিবারের লোকজন ফেসবুক ব্যবহারে বাধা দেয়ায় সে অভিমান করে নিজের শরীরে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার তিন দিন পরে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, করোনার সময় বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তখন সে মেবাইল ফোনে ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তাকে এই আসক্তি থেকে ফেরাতে কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে সরাসরি বাধা দেয়ায় এই পরিণতি।

স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্নঃ কেস স্ট্যাডি (কুমিল্লা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)

কুয়েটের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছে গত সপ্তাহেই। করোনার শুরুতে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়, সে তখন তার ঢাকার বাসায় চলে আসে। এখানে এসে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর এই বিচ্ছিন্নতা তাকে মোবাইল ফোনে আসক্ত করে তোলে। পরিবারের সদস্যদের আচরণও সে মেনে নিতে পারেনি। ফলে তার রাতে ঘুম হতো না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এমনকি বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুরও শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে তার পরিবার কিন্তু তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেনি। মনোচিকিৎসকের সহায়তা নিয়েছে। কাউন্সেলিং করিয়েছে। ফলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।


পারিবারিক দারিদ্র, হতাশা থেকে পেশা পরিবর্তনঃ কেস স্ট্যাডি (নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়)

নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী নিজেই নিজের মনকে সঠিক পথে রাখার ব্যবস্থা করে সফল হয়েছেন। তিনি শুরুতে অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হতে পারেননি। দুই বিষয়ে অনলাইন পরীক্ষায় খারাপ করেন। নতুন করে আবার পরীক্ষা দিতে গিয়ে তার পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ পড়ে। তা তাকে বিপর্যস্ত এবং হতাশাগ্রস্ত করে। অনলাইনে নানা গেমে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর নিজেই তিনি একটি অনলাইন পোশাকের দোকান খুলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এখন তার ব্যবসাও ভালো চলছে। লেখাপড়াও ভালো হচ্ছে।

মনের তিন শত্রুঃ

হীনমন্যতা, অবসাদ আর আত্মবিশ্বাসের অভাব মনের তিন শত্রু। এই শত্রুদের মনে জায়গা দেয়া যাবে না। তারা যাতে কোনোভাবেই মনে বসবাসের সুযোগ না পায়, তার ব্যবস্থা চাই। জীবনের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নাই। আসুন জীবনকে ভালোবাসি। জীবনের জয় গান গাই।

কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মনোবিজ্ঞানী মাসিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট ডাঃ লিসা ডামুর বলেছেন, বাবা-মা প্রথম যে কাজটি করতে পারে তা হলো তারা [কিশোর-কিশোরীরা] যে উদ্বিগ্ন বোধ করছে সে বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে তোলা। অনেক কিশোর-কিশোরীর মধ্যে এক ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে যে, উদ্বেগ সব সময় মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। তবে, মনোবিজ্ঞানীরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, উদ্বেগ একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর বিষয় যা বিভিন্ন ধরনের হুমকির বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে এবং নিজের সুরক্ষা নিতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনি যদি বলেন, “তুমি যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছো সেটা সঠিক। কিছুটা উদ্বেগের কারন তো এখন অবশ্যই আছে। বিষয়টি এইভাবেই ভাবা উচিত। এখনই যে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত, উদ্বেগ তা নিতে সহায়তা করবে।” আর এধরনের ভাবনা কিশোর-কিশোরীদের জন্য খুবই সহায়ক। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অনুশীলন করা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং নিজের মুখ স্পর্শ না করা –সুতরাং এই কাজটি আমরা করতে পারি।

মানসিক স্বাস্থ্যকে শুধুমাত্র মাইক্রো লেভেল থেকে দেখলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। মানসিক স্বাস্থ্যকে ম্যাক্রো লেভেল থেকে দেখতে হবে। আমার সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও বিনোদনের দায় রাষ্ট্রকে, সমাজকে, ও কমিউনিটিকে নিতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা থেকে আমরা দীর্ঘমেয়াদে বের হয়ে আসতে পারব। সকল মানুষ সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন- এই কামনা করি।

This writing adapted & researched from several sources:
Writing & Data Courtesy:

১। Bulletin of World Health Organization
২। Professor & Psychiatrist, National Mental Health Institute; Bangladesh
৩। German public state-owned international broadcaster Deutsche Welle
৪। Psychiatrist, National Neurosciences Centre, West Bengal, India
৫। Journalist & Researcher, BBC World Service

৬। Lisa Damour, The New York Times

এই সিরিজের পুরোনো লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুন

করোনা মহামারী নিয়ে দরকারি আলাপ---পর্ব (১)
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট---পর্ব (২)
করোনা সংক্রমণ প্রশমন ও উপায়---(৩)
করোনা ভাইরাস মহামারী ও এর প্রধান প্রধান ভ্যারিয়েন্ট---(৪)
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ও এশিয়া মহাদেশ---(৫)
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ মিথ ও বাস্তবতা----(৬)
সহজাত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার উপর SARS-CoV-2 এর প্রভাব---(৭)
অভিযোজিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর SARS-CoV-2 এর প্রভাব---(৮)
দেশের মানুষ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পেরে উঠছে কি??---(৯)
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিনঃ বাঙ্গালীর টিকা দর্শন ও অভিজ্ঞতা---(১০)
বর্তমান কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন/প্রতিষেধক কেন আজীবন ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম নয়??----পর্ব (১১)

করোনা মহামারী ও লকডাউনের সময়ে নাগরিকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন কিন্তু আত্মহত্যার হার কমে নাই------পর্ব (১২)



চলবে--------------------


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×