আনুমনিক বিকেল ৩টা , কাজল অফিস থেকে বেরিয়েছে সামনের ব্র্যাক ব্যাংক থেকে কিছু টাকা তুলবে বলে । হুট করে একটা সাদা মাইক্রোবাস সামনে এলো, দু'জন লোক জোর করে তুলে নিল কাজলে কে, কিছু বুঝবার আগেই নাকে,মুখে কি এক ঝাঝালো গন্ধ পেল তারপর সব কিছু অন্ধকার।
চোখ মেলে দেখে একটা টিন শেড ঘরে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে তাকে । ঘরটা বেশ বড় দেখে গুদাম ঘর মনে হয়, দেয়াল ইটের কোথাও কোথাও পলেস্তারা খোসে পড়েছে। দুরে একটা চেয়ারে বসে আছে একজন কানে মোবাইল, অনবরত কথা বলছে ঐটা মনে হয় দলনেতা আর ওর সামনে এদিক ও দিক দাড়িয়ে বসে আছে আরো ৩ জনা । ওরা এগিয়ে এলো কাজলের দিকে, উহু্ প্রচন্ড বেগে লাথি আর গুসির বৃস্টি, চুলের মুঠি ধরে ঝাকিয়ে বার বার একটাই প্রশ্ন " বল পাসওয়ার্ড বল, এই হারামি বদিউজ্জামান বাচতে চাইলে কৈয়া ফেলা ।কাজলের অফিসিয়াল নাম বদিউজ্জামান, থাকে মিরপুর কালসী, বিধবা মায়ের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে, মা আর অবিবাহিত ছোট দুই বোন কে নিয়ে সংসার। ছা পোষা ডাটা ম্যানেজমেন্ট এসিসটেন্ট বদিউজ্জামান কাজল কাজ করে জামান আইটি ফার্মে যার মালিকের নামও বদিউজ্জামান মিলন । গত সারে ৩ বছর ধরে এখানেই মনোযোগ দিয়ে কাজ করে কাজল বিশাল সার্ভারে সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশ
সরকারের জাতীয় পরিচয়পত্রের অমূল্য সব তথ্যাবলী । নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন এই প্রজেক্টের কাজ পেয়েছিল জামান আইটি কথা ছিল কাজ শেষ হলে তথ্যভান্ডার বুঝে নিবে নির্বাচন কমিশন । কিনত্ত নির্বাচন কমিশন প্রেস কনফারেন্সে এতই ব্যস্ত যে জাতীয় তথ্য সংরক্ষনের উদ্যোগ নেই । ফলে কতিপয় মহল এই তথ্যভান্ডার কুক্ষিগত করে কিছু ফায়দা লোটার চেস্টা করছে ।
তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল জামান আইটির কর্নধার বদিউজ্জামানের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড জেনে নেয়া। নাম বিভ্রাটের কারনে বদিউজ্জামান ঠিকই ধরা পড়েছে কিনত্ত কাজল মিলন নয় ।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ভাড়াটে গুনডা গুলোর মন মর্জি পুরাই নিমতিতা সব রাগ কাজলকে বেদম মেরে পোষাতে চেয়েছে, বেটা আর কোন নাম পেলি না ! যত্তসব ! কাজলকে ওরা মেরেই ফেলতো
এমন সাদা মাটা সাধারন নিম্নমধ্যবিত্ত ছেলের জীবনের কোনো দাম নেই, এদের না আছে পয়সার জোর, না আছে ক্ষমতার জোর, না এরা সাংবাদিক ভাইদের পরিবার পরিজন,এরা হারিয়ে গেলে বিধবা মা বড়জোড় থানায় একটা অভিযোগ করতে পারেন যা কেবল ফাইলে পরে থাকবে। কিনত্ত বোবা কিশোরটা যে কিনা বন্দী কাজল কে খাবার দিয়ে গেছে গত ৩ দিন কি এক অদ্ভূতমানবতায় কাজলকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করল ।
কাজলের চোখে পানি ছলছল করছে কি জানি তার বিধবা অসহায় মা গত তিন দিনে কতটা চোখের জল ফেলেছেন, কত জনের দুয়ারে দুয়ারে ছেলেকে ভিক্ষা চেয়েছেন, স্হানীয় থানার দারোগা, ওয়ার্ড কমিশনার, সংসদের দেখা পেতে হয়তো ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে বৃষ্টিতে একাকার হয়েছেন । এ কেমন দেশ যেখানে অতি সাধারনদের কোনো কিছুরই নিরাপত্তা নেই ! বেঁচে থাকাটাই এখানে বিরাট সাফল্য। এতদিন পর আজ এই চলন্ত বাসে খুব মনে পরছে সেই চিঠির কথা কাজল কে লেখা মিতুর শেষ চিঠি।
মেহেদি পাতা দেখেছ
++++++++++++++++++++++++
নিরাপত্তাহীন আমি, তুমি কিংবা আমরা-১ম পর্ব