somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরিত্র শুধুই কাল্পনিক

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবহমান জীবনধারায় আমাদের অভিনয়ের মাত্রা ক্রমবৃদ্ধির ফলে আমাদের চরিত্রও কাল্পনিক হয়ে গেছে। নিমেষেই ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ঘটেনি বলে মিথ্যার বুলি ছড়িয়ে দিতে পারি। সেটি মানুষের মধ্যেকার অতিরিক্ত লোভ কিংবা অর্থলিপ্সাই হোক না কেনো? পুঁজিবাদী সমাজে এর চেয়ে বেশি আমরা কী-ইবা আশা করতে পারি? আমাদের মধ্যে যাঁরা উঁচূ তলায় বসবাস করেন তারা নিচের ঘটনাগুলো উপলব্ধি করতে পারেন না, চোখে পাওয়ার জনিত সমস্যার কারণে। অন্যদিকে সমাজের নিচূতলার জনসাধারণ নিয়মিত দারিদ্রতার শৃংখলে আবদ্ধ থাকার ফলে উপরে কি ঘটছে তা দেখার সাহস করতে পারে না। কিন্তু স্মৃতি ঘাটলেই দেখা যায় উপরোক্ত দু'টি শ্রেণীই সমাজ, দেশ, জাতি নিয়ে চিন্তার সুযোগ করতে পারেন না। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এই দু’টি শ্রেণীর মধ্যেখানে যারা অবস্থান করছেন তাদের ঘাড়েই মূলত সমাজের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক সকল কর্মের বোঝা এসে সমর্পিত হয় এবং এই শ্রেণী কিছুতেই তাদের দায় এড়াতে পারেন না।

আজ চারিদিকে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তার মূলেই রয়েছে উঁচূ শ্রেণী। আমরা অভাগা কি-না তা আমাদের ভেতরের আত্মার সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে অবতীর্ণ হলেই বুঝতে পারবো। ক’জনই বা সেই পর্বে অবতীর্ণ হই। অবস্থা এরকম যে, সাধারণরা মনে করেন যা পাচ্ছি তাই খাচ্ছি, ভালোইতো আছি। এতোসব ফালতু চিন্তার মধ্যে আমরা থাকবো কেনো? সমাজ তথা দেশের যে সর্বনাশ হচ্ছে কিংবা হয়েছে তার মূলেই রয়েছে উচূ শ্রেণী। বাংলাদেশে উচূ শ্রেণী বলতেই আমরা বুঝি ব্যবসা-বাণিজ্যে যারা এগিয়ে রয়েছেন তাদের। এই শ্রেণী সমাজের এমন কোনো স্তর নেই যেখানে তাদের পদ স্পর্শ করেন না। অর্থনৈতিক সেক্টরে তো বটেই, এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, মিডিয়া, সংস্কৃতি সবকিছুই এই শ্রেণীর দখলে।

এখানে একটি গল্পের পুন: উপস্থাপন করতেই চাই যা হলো- এক গ্রামের পাশে জঙ্গলে ঝাঁকে ঝাঁকে বানর বাস করতো। বানরের দল মাঝে মধ্যে গ্রামে এসে হানা দিত। গ্রামের লোকজন বানরের উপদ্রবে অতিষ্ট। সে সময় সেখানে হঠাৎ এক লোকের আবির্ভাব ঘটলো। এসেই সেই লোক গ্রামবাসীকে ঘোষণা করলো যে, এক একটা বানর সে ১০ টাকায় কিনে নিবে। গ্রামবাসী মহাখুশী হয়ে জঙ্গলে গিয়ে বানর ধরা শুরু করলো। অল্প সময়ের মধ্যেই লোকটি ১০০০ বানর গ্রামবাসী থেকে কিনে নিলো। এবার লোকটি ঘোষণা করলো সে ২০ টাকায় প্রতিটি বানর কিনে নিবে। গ্রামের মানুষ নতুন উদ্যমে আবার জঙ্গলে বানর ধরার কাজে নামলো। দ্বিগুন দামে এবার বানর বিক্রি করে সবাই খুশী মনে ঘরে ফিরলো। আবার লোকটি প্রস্তাব দিলো, এবার সে ২৫ টাকায় বানর কিনবে, এভাবে আস্তে আস্তে জঙ্গলে বানরের সংখা একবারে কমে গেল। এবং গ্রামবাসী যে কয়েকটা বানর চারিদিকে খুঁজে পেল সেগুলো ধরে বিক্রি করলো। বানর কেনা লোকটি তখন ঘোষণা করলো তার আরো বানর দরকার এবং সে প্রতিটার জন্য দিবে ৫০ টাকা। সাথে সে এও জানিয়ে দিলো জরুরী ব্যবসার কাজে সে শহরে যাচ্ছে, তার সহকারী বানর কেনার কাজ দেখা-শোনা করবে । আগন্তুক লোকটি শহরে চলে যাবার পর তার সহকারী গ্রামবাসীকে বললো: দেখো, এত বড় খাঁচায় কতগুলি বানর শহুরে লোকটি কিনেছে। সে জেনে ফেলার আগেই, “তোমরা আমার কাছ থেকে ৩৫ টাকা করে বানরগুলো কিনে নাও”। লোকটি শহর থেকে ফিরে আসলে তোমরা এক একটা বানর ৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারবে। প্রস্তাবটা গ্রামবাসী লুফে নিলো, এবং সঞ্চিত টাকা পয়সা যা ছিল তা দিয়ে বানর কিনলো। এরপর রাতের অন্ধকারে সহকারী পালিয়ে গেলো। আর সেই আগন্তুক লোকটি শহর থেকে ফিরে এলো না, গ্রামের লোকজন সহকারীকেও আর খুঁজে পেলনা। চারিদিকে শুধু বানর আর বানর ছড়িয়ে রইলো।

এই শ্রেণী পুঁজিবাদী শ্রেণী নামেই সমধিক পরিচিত। আর পুঁজিবাদ এর বিজয় তো এখানেই যে মানুষ এই আগ্রাসন নিয়ে ভাববে না। মানুষ শুধু ভোগ করবে আর পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলবে।

রাজনীতির মাঠে, সংস্কৃতির আড়ালে আবডালে, মিডিয়ার মোটরযানে এই পুঁজিপতিদের যে প্রভাব, আর তারা যে বলয় গড়ে তুলেছেন তা সমাজকে নিচের দিকেই ধাবিত করবে বৈ আর কিছু নয়। তাদের এই চটুল ব্যবসায় তারাই লাভবান হবেন। কারণ রাজনীতি কিংবা মিডিয়ায় প্রবেশ করতে তাদের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। যেটিকে তারা মনে করেন বিনিয়োগ হিসেবে। আর এখানে লাভের আশা তো তারা করতেই পারেন। দেশ নিয়ে তাদের না ভাবলেও চলে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×