ঘটনাটা মেড স্কুলে থাকার সময়ে, ছয় তলা হোস্টেলের ছাদের উপরের পানির ট্যাংকে বসে আড্ডা দিচ্ছি, এমন সময় একটা কাক দেখলাম। কাক বসে আছে কার্নিশে। এক মনে যেন তাকিয়ে আছে সামনে সুবিস্তৃত খেলার মাঠ ও সবুজে জড়ানো দৃশ্যপটকে। বন্ধুদের কথামালা থেকে হুট করেই আমার মন যেন কার্নিশটায় চলে গেল। উত্তুরে ঝড়ো হাওয়া, বিশাল আকাশ ও আত্মভোলা কাকের গল্প মনে বসাতেই গুন গুন করে উঠলাম,
এরপরের ঝড়ো হাওয়াটায়
একটা বোহেমিয়ান দুঃখ ধুলোর সাথে উড়ে যাক
এরপরের ঝুম বৃষ্টিতে
একটা আত্মভোলা কাক ওই কার্নিশে বসে থাক
বিশ থেকে পঁচিশ বয়সটা বেশী খ্যাপাটে। কোন নতুন আইডিয়া মাথায় এলেই কাজ সেরেছে, সারাদিন সেটা একটু একটু করে বড় হতে থাকবে। তো কি হল, ভাবলাম এই কথাগুলোকে লিখে ফেলি না কেন ? ফোনের অ্যাপে লিখতে গিয়ে দেখলাম আঙ্গুল টাইপ করে যাচ্ছে-
এরপর
না হয় ভেজা শরীর জুড়ে আবার সন্ধ্যা নামুক
কিংবা
ছুঁড়ে ফেলুক কেউ যাবতীয় আঁধার এক-বুক
অভিযোগ থাকবে না কোন
অভিযোগ নেই
আমি ততদিনে ছোট গল্পের ছোট মানুষ । সুবোধ সন্দীপনকে দুই বাংলায় আমার না দেখা আইডল ধরে গল্প লেখা শুরু করে দিয়েছি। সুবোধের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এই ব্লগেরই আরেকজন ব্লগার, মাহমুদ ভাই। সে গল্প আরেকদিনের জন্য তোলা থাক।
তাহলে এই যে লিখে ফেললাম, এই কথামালাগুলো দিয়ে আমি কি করবো ? লিরিক ? উহু বড্ড কঠিন কাজ। ব্লগার রানা ভাইয়া ( নস্টালজিক) এর লিরিকের পেছনের কিছু গল্প যখন ব্লগে পড়েছি, তখন মনে হয়েছে গানের কথা লেখা পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি । আমি তখন ব্ল্যাকের জন্য ইমন জুবায়ের ভাইয়ার লেখা লিরিকগুলোর গল্পও ব্লগে পড়তাম। মাথায় ঘুরত ভাইয়ার লেখা-
তাকিয়ে আছে
মৃত্যুর এপারে
জীবনের সুতীব্র উল্লাসে দেখি আমি
সাদা রোদে ভাসছে সবই! ( আমার পৃথিবী)
কিংবা অভিমান গানটিতে জন কবিরের গলায় ফুটে উঠা ভাইয়ার সেই কথাগুলো-
কেবলই অভিমানের রাত
তবে কেন প্রতীক্ষা?
ক্ষয়া চোখে ভুলের বিন্যাস
নিভু স্বপ্নবাতিটা
কি ভেবে যেন কলেজ জীবনের বন্ধু অনিকের কাছে মেসেঞ্জারে পাঠালাম কথাগুলো একসাথে লিখে। একদিন পর সে রিপ্লাই দিলো, ভালো লিখেছিস। দেখি কিছু করা যায় কিনা। বহুব্রীহি ব্যান্ডটি তখন মাত্র শুরু হয়েছে। মান্না দে র কফি হাউস কাভার করে তখন প্রায় মিলিয়ন ভিউ পেয়ে গেছে ( এখন প্রায় ১২ মিলিয়ন ভিউ), এরপর নিজেদের গান নিয়ে কাজ করছে।
অনিক, ইয়াসিন , তুষার, মেজবাহ ততদিনে একটা টিম হিসেবে বহুব্রীহি ব্যান্ডকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ওরাই বলল বরং আস্তে আস্তে নিজেদের শক্ত করে উঠে আসতে চায়।
এর মধ্যেই গান হিসেবে আমার কথাগুলো বসানো গেছে, আরও কিছু কথাও জুড়ে দিয়েছি এরপর। ডেমো ট্র্যাক প্রথম শুনলাম পিজির হোস্টেলের এক বড় ভাইয়ের রুমে। এর মধ্যেই লিড গিটারিস্ট মেজবাহ ব্রেকে গেলে নতুন গিটারিস্ট হিসেবে রাব্বি আসলো। গানটায় রাব্বির বাজানো সলো শুনে আমি যেন নির্বাণে চলে গেলাম ! একটা অস্থিরতা অনুভব করতে লাগলাম, এটা আমাদের গান! নাম দিয়েছি - অনভিযোগ।
যদিও বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে অনভি্যোগ নামের কোন শব্দ নেই। বানিয়ে নিয়েছি।
এরপর কয়েক বছর কেটে গেলো। খুবই মেধাবী দুইজন- শাকিল ও অনুপমরা ডিরেকশন দিতে দিতে তখন বেশ নামডাক করে ফেলেছে। আমি এই সময়ে ব্লাড-প্রেশার পালস হাতড়াতে হাতড়াতে গল্প লেখা বাদ দিয়ে দিয়েছি, গানটান আফটার গ্রাজুয়েশন ফেজে আগের চেয়ে কম শোনা হয়।
এর মধ্যেই বহুব্রীহি আজ অফিসিয়ালি ইউটিউবে রিলিজ দিলো অনভিযোগ[/sb
ব্লগের সবার জন্য আমাদের নিবেদন।
লিরিক উৎসর্গ করছি - প্রয়াত ব্লগার ইমন জুবায়ের ভাইকে।
হ্যাপি ব্লগিং।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৩ দুপুর ১:৪৯