চৌদ্দটি দেশ করোনা-কালীন সময়ে টানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে, যাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পড়াশুনার বাইরে থাকতে থাকতে ছেলেমেয়েরা যেমন বিপথে যাচ্ছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও অবস্থা ভালো নয়, বেতন নেই, কারো কাছে চাওয়ার উপায়ও নেই। এছাড়া ছোট চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ী বা শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের কষ্টের কথা তো বলে শেষ করা যাবে না।
ভ্যাক্সিন নিয়ে কাণ্ডকারখানা সবাই কমবেশি জানেন, সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করবো না৷ মাত্র ৩/৪% লোককে ভ্যাক্সিন দেওয়ার পর এই ভ্যাক্সিন সংকটে ভোগা দেশটি ভাইরাসকে সবদিক দিয়েই মোকাবিলায় ব্যর্থ ( এখনও বারো লাখের বেশী মানুষ কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ পায় নি)। এছাড়া, এদিকে লক-ডাউনের নামে মানুষ নাজেহাল হতে হতে শেষে মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানাকে খুবই হালকা-ভাবে নিয়ে ফেলেছে। মনে হয়, এখনও করোনার প্রভাব আমাদের উপরের মহল বুঝতে পারছে না, বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য করোনা শুধু একটি মহামারীই নয়, সমাজ ব্যবস্থার নানা জায়গার ভিত্তি দুর্বল করার একটি কাড়নও বটে। এছাড়া, করোনার পরের অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিজ্ঞানসম্মত কোন পরিকল্পনাও নীতিগতভাবে নেই। আমি অন্তত কারও কাছ থেকে জানতে পারিনি, খবর পত্রিকায় পড়িনি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার আশেপাশের অযোগ্য লোকদের সরিয়ে দিলে দেশের চেহারাটা পুরোপুরি বুঝতে পারতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশের যারা বলেছে, উন্নত বিশ্বের চেয়েও আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল, সবাই আমাদের সাফল্যে অবাক বা এই করোনার সময়ই ইন্টারনেট ও টিভির মাধ্যমে শিক্ষাদানে বাংলাদেশ বিশ্বে সাফল্য পেয়েছে, তারাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে জাতিকে বারবার মিসলিড করেছে, নানা অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাবনাকে বাদ দিয়েছে, ট্রায়াল এন্ড এরর গেম খেলেছে।
এখন সাধারণ জনগণ ভাবে, সরকারের মধ্যে স্পষ্টত দুটো অংশ। তোফায়েল আহমেদের সেদিনের বক্তব্য মূলত তার ছোট একটা আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। সামনের দিনগুলোতে এটা প্রকট হতে পারে। করোনা মোকাবিলায় সরকারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্রিম লিডারদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না কিন্তু প্রশাসনিক দিকটা যাদের দিকে সামলানো হচ্ছে তারা ঠিকমতো সামলাতে পারে নাই।
বাংলাদেশের ৫% এর মানুষ ভ্যাক্সিন পেয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে আকাঙ্ক্ষিত ভ্যাক্সিন ডোজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ কোভিড এখন আর শহরকেন্দ্রিক নেই, গ্রামেও ছড়িয়ে গেছে। এই ট্রেসিং আর কোনদিনই সম্ভব না, কোনভাবেই সম্ভব না। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দেড় বছর বন্ধ থাকাতে তাতে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোন জাতীয় পর্যায়ে কাজ হয়নি, হওয়া উচিত ছিল। সাথে কোভিডের পরের চ্যালেঞ্জ আছেই।
একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া বাংলাদেশকে কেউ এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:৩৭