পূর্বের রোস্ট পোস্ট!
রোস্ট পোস্ট (১) - "আপনি কি কালো, বেঁটে, মোটা? তাহলে আপনার বেঁচে থাকা অর্থহীন!" ওহ মিডিয়া প্লিজ শ্যাট আপ!
রোস্ট পোস্ট (২) - বাংলাদেশী বিয়ে - দুটি মনের মিলন নাকি অপসংস্কৃতি, অসহায়ত্ব, অশ্লীলতা প্রকাশের মাধ্যম? শেম শেম!
রোস্ট পোস্ট (৩) - বিবাহ বানিজ্য, পাত্র পাত্রীর নির্বাক অসহায়ত্ব, অশ্লীলতা - ঝলমলে লাইটিং এর পেছনের অন্ধকারের গল্প!
রোস্ট পোস্ট (৪) - সোশ্যাল মিডিয়া- আমাদের মন মানসিকতা কি বিকৃত হয়ে যাচ্ছে? সুস্থ হবার উপায় কি?
রোস্ট পোস্ট (৫): বাংলাদেশী ধারাবাহিক ভার্সেস ইন্ডিয়ান সিরিয়াল! আমরা কেন জনপ্রিয়তায় এত পিছিয়ে? সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে বাঁচার উপায় কি?
রোস্ট পোস্ট (৬): কোভিড ১৯ এর রিক্যাপ - কমাসে বেড়িয়ে আসা জাতীয় চরিত্রগুলো! আমরা এতো খারাপ?
রোস্ট+মেজাজটা এত বিলা হয় ক্যারে?+সচেতনতামূলক পোস্ট (৭): অন্তর্জালে প্রেম জাল! দুটি মন, কিছু প্রেম এবং অনেকটা ধোঁকা!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফেসবুকে অনেক ছেলেই নক করে। কেউ আজেবাজে ম্যাসেজ দেয় তো কেউ কবিতা লিখে পাঠায়। কোনটাকেই পাত্তা দেয়না অস্পর্শী! কিন্তু অদ্ভুত একটা ম্যাসেজ মানে প্রপোজ পেয়েছে রিসেন্টলি। একটি ছেলে লিখেছে; "জান্নাতে আমার সাথী হবে? সবসময় সঠিক পথে চলার প্রেরণা দেবে?"
অস্পর্শী! আহামরি সুন্দরী না হলেও গজ দাঁতের মিষ্টি হাসিতে অনেককেই পাগল করে দেয়। বাবা একটি নামকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এবং মা করেন সরকারি ব্যাংকে চাকরি। ভাই ইংল্যান্ডে পড়াশোনার জন্যে গিয়েছে কয়েক বছর হলো। বন্ধু বেশিরভাগই ছুটে গেছে স্কুলের পরে, ভার্সিটিতে সেভাবে কোন গ্রুপে ঢুকতে পারেনি। তাই ফ্রি টাইমে ফেসবুকিং করেই সময় কাটে ওর।
ম্যাসেজটি পেয়ে কেমন যেন একটা কৌতুহল মেশানো ভালো লাগা কাজ করল অস্পর্শীর মনে। সাথে সাথে চেক করল ছেলেটির প্রোফাইল। নাম স্পন্দন হক! টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম বলতে যা বোঝা একেবারে তাই! কথা ও ছবিতে যে ও দূর্বল হয়ে গিয়েছে, সেটা গোপন করে লিখল: না চিনে না জেনে এমন প্রস্তাব? সস্তা হয়ে গেল না বিষয়টা!?
স্পন্দন: যতটুকু জানার জেনে, ভেবে প্রস্তাব দিয়েছি। এযুগের সস্তা বিএফ জিএফ কালচারে বিশ্বাসী নই, তাই বউ হবার প্রস্তাব দিয়েছি!
অস্পর্শী: কি জেনেছেন?
স্পন্দন: এই যে, আপনার দুটো গভীর চোখ আর মিষ্টি হাসি সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে পারে। পড়াশোনা করছেন ভালো একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে। পরিবারের সবাই প্রতিষ্ঠিত। মোটকথা, ভালো পরিবারের লক্ষ্মী একটা মেয়ে যাকে আমার পছন্দ এবং আমার মায়েরও!
অস্পর্শী: আপনার মা আমাকে চেনেন?
স্পন্দন: জ্বি হ্যাঁ ম্যাডাম, আপনার প্রোফাইলের সবকিছু দেখিয়েছি আর জানিয়েছি যে তার ছেলে ২৮ বছর বয়সে প্রথমবার কোন মেয়ের প্রতি এতটা সিরিয়াস হয়েছে। এখন শুধু মেয়েটির হ্যাঁ বাকি! মেয়েটি কি হ্যাঁ বলবে?
অস্পর্শী: আপনার মতো আমিও সস্তা সম্পর্কে বিশ্বাস করিনা, তাই আপনাকে জানতে চাই। আমার প্রোফাইলে সকল তথ্য দেওয়া থাকলেও আপনার ব্যাপারে তো জানার কোন উপায় রাখেন নি।
স্পন্দন: আচ্ছা ঠিক আছে। আমি স্পন্দন হক, আমেরিকায় থাকি। এখানে একটা ছোটখাট ফার্মে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি। বাকি যা জানার জেনে যাবেন, তবে আজ আমার জরুরী কাজ আছে যেতে হবে। জলদিই আবার জানাশোনা হবে। আপনার মন জয় করার জন্যে যা করার আমি সব করব।
অস্পর্শীর সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। ও কি স্বপ্ন দেখছে? সবসময় যেমন ভদ্র, সুদর্শন, রোমান্টিক জীবনসংঙ্গী চেয়েছে, সে আজ এত সহজে ধরা দিল!??
এরপরের দিনগুলোয় হাওয়ায় ভাসতে লাগল অস্পর্শী। দিনরাত চ্যাটিং করতে করতে মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যে ও হ্যাঁ বলে দিল পাগলটাকে। আজকাল স্পন্দন ওকে অস্পর্শী না ডেকে স্পর্শা ডাকে। স্পন্দনের কথা হচ্ছে, অন্য সবার জন্যে অস্পর্শী হলেও স্পন্দনের পুরো অধিকার আছে নিজের বউকে স্পর্শ করার।
এসব শুনে লাজুক ভাবে জানতে চায় স্পর্শা: তো মশাই আমি বউ কবে হলাম!?
স্পন্দন: যেদিন আমার মাও তোমার ছবি দেখে পছন্দ করল সেদিন!
এই কথার পরে স্পর্শা আর কোন ডাকে বাঁধা দিতে পারেনা। অবশ্য দিতে চায়ওনা, ওর বেশ লাগে ডাকগুলো। প্রথম প্রথম খুব সাধারণ কথাবার্তা হতো দিনে, এবং রাতে স্পন্দন রোমান্টিক গান, কবিতা শেয়ার করত।
কিন্তু আজকাল প্রায়ই একটু বেশিই রোমান্টিক কথা বলছে স্পন্দন! লজ্জা মেশানো ভালো লাগা কাজ করে স্পর্শার। এমনই ভালোবাসা মাখা সংসারের স্বপ্ন দেখত ও। প্রথম প্রথম কথাগুলো অগভীর ছিল - রান্নার সময়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা, হুট করে খোঁপা খুলে দেওয়া!! কিন্তু একসময়ে সেসব অনেক গভীরে চলে গেল! স্পর্শাও সায় দিতে থাকল।
এরই মধ্যে একদিন জন্মদিনের উপহার হিসেবে স্পন্দন কিছু ব্যক্তিগত ছবি চাইলে ভয় পেয়ে যায় স্পর্শা। ছবি দেবার পরে যদি সেটা অন্য কারো হাতে চলে যায়? নাহ! স্পনদকে সন্দেহ করছেনা, কেউ হ্যাকও করতে পারে।
মনে আসা ভয় স্পন্দনের সাথে শেয়ার করলে, স্পন্দন বলল, "এত যে চ্যাট কর, সেসবও তো কেউ হ্যাক করতে পারে! করেছে কোনদিন? ওসব শুধু সেলিব্রেটিদের সাথে হয়। আর পাগলী! আমিও আমার বাবুর মায়ের ছবি কোথাও ছড়িয়ে বেড়াব না। ওসব একান্ত আমার!"
এমন একটা ম্যাসেজে স্পর্শার সবকিছু গুলিয়ে গেল। "বাবুর মা" কথাটা শুনে শরীর অবশ হয়ে এলো। এত সিরিয়াস স্পন্দন ওকে নিয়ে?
আবেগী মনে ঘরের দরজা বন্ধ করে, বিবস্ত্র হয়ে টিভিতে দেখা মডেলদের মতো অঙ্গভঙ্গিতে বেশ কিছু ছবি তুলে নিল স্পর্শা। তার মধ্যে পছন্দসয়ী ছবিগুলো স্পন্দনের কাছে পাঠিয়ে দিল।
ছবিগুলো পেয়ে স্পন্দন আনন্দে আত্মহারা, সাথে সাথে ম্যাসেজ পাঠাল: আমার বউটা এত সেক্সি! তোমার শরীরের বাঁকে বাঁকে থাকা এই রূপ যৌবন আমাকে দিয়ে দাও সুন্দরী! হাহাহা!
এমন প্রশংসাময় মজার কথায় স্পর্শা হেসে ফেলল। সেদিন দুজনে ফোনে অন্তরঙ্গতার চরম সীমা ছুঁয়ে ফেলল!
এরপরে এলো স্পন্দনের আরেক আবদার। ভিডিও কলে অন্তরঙ্গ হতে হবে। রাতের পর রাত শুধু ফোনে অন্তরঙ্গ হয়ে মন ভরছে না ওর। স্পর্শাও কোন বাঁধা দিলনা। ও স্পন্দনকে স্বামীর জায়গা দিয়েছে মনে মনে, তাই স্পন্দনকে আদর করতে ওর কোন দ্বিধা হয়না আর। বরং আজকাল ও নিজেও খুব নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছে স্পন্দনের সাথে থাকতে থাকতে।
মেঘে ঢাকা এক দিন ছিল। স্পর্শার বাবা মা যে যার অফিসে। পুরো ঘর অন্ধকার হওয়ায়, লাইট জ্বালিয়ে দিল দিনের বেলাতেই। ভিডিও কলে একে অপরকে নিষ্পলক দেখে যাচ্ছে। ধ্যান ভাঙ্গতেই আবারো স্পন্দনের আবদার, আমার সুন্দরী বউটাকে পুরোপুরি কখন দেখব?? কিছুটা লজ্জা পেল স্পর্শা, একটু আগেও আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু স্পন্দনের সামনে অস্বস্তি লাগছে কেমন যেন। স্পন্দন ভরসা দিল নানা কথায়। সাহস পেয়ে স্পর্শা নিজের ওড়নাটা মেঝেতে ফেলে দিল। ওদিকে চরম কৌতুহলী, দুষ্টু দুষ্টু চোখে তাকিয়ে রয়েছে স্পন্দন। তারপরে কামিজটা ওঠাতে লাগল, বেড়িয়ে আসল ওর মেদহীন পেট, গভীর নাভি..............
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সেদিনটা স্পর্শার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন ছিল এবং স্পন্দনের সাথে কাটানো ভালোবাসায় মাখামাখি শেষ দিনও! যত জলদি প্রেম ও ভার্চুয়াল সংসার হলো, তত জলদি ভেঙ্গেও গেল। সেদিন রাতেই স্পন্দন ওকে একটা ফাইল পাঠিয়েছিল, যাতে ওর সকল অশ্লীল ছবি, ভিডিও সাজানো। সেসব দেখে স্পর্শা অবাক হয়ে গেল। স্পন্দন তো বলত, দেখেই সব ডিলিট করে দেয়! তাহলে? জিজ্ঞেস করতেই স্পন্দন যা বলল তাতে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল স্পর্শার মাথায়।
স্পন্দন: তুই কি পাগল? এমন ছবি কোন ছেলের হাতে পড়লে সে ডিলিট করে? তোর বাপ মা দুজনই কামায়। আমার প্রয়োজনটা তাই খুব সহজেই পূরণ করতে পারবে। তুই টাকার ব্যবস্থা কর, নাহলে তোর হট ছবিগুলো নেটে ঘুরবে।
এসব পড়ে কেঁপে উঠল স্পর্শা! ওর স্পন্দন এত বাজে ভাষায় কথা বলতে পারে? অনেকক্ষন বিশ্বাসই করতে পারেনি, ভেবেছে দুঃস্বপ্ন দেখছে। যখন বুঝতে পারল সবই সত্যি, রীতিমত ঘরের টাকা চুরি করে স্পন্দনকে পাঠিয়ে দিল। পাঠাতে গিয়ে বুঝল আমেরিকা নয়, দেশেই থাকে স্পন্দন হক মানে মোজাম্মেল আলী! ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু এক নারী কান্ডে জড়িয়ে যাবার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বয়স ২৮ নয় ৩৮! যুবক বয়সের সুদর্শন চেহারাকে ব্যবহার করে এভাবেই একটি গ্যাং এর সাথে মিলে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে যাচ্ছে।
অস্পর্শী ভাবে যেদিন থেকে ওর নামটা পাল্টে দেয় স্পন্দন, সেদিন থেকে ওর চরিত্রও পাল্টে গিয়েছিল। এতটা নির্লজ্জ, বোকা হলো কি করে ও? নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সারাদিন হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর বাবা মা, বিদেশে থাকা ভাই সবাই দু:শ্চিন্তায়। বাবা ওর প্রিয় ফুচকা আনে তো মা কাস্টার্ড বানায়। ভাই বিদেশে টানাটানির মধ্যেও টাকা জোগাড় করে উপহার পাঠায়। এসব দেখে আরো কান্না পায় অস্পর্শীর। এতসব ভালোবাসা তো জীবনে ছিলই। কেন তবে মরিচিকার পিছে ছুটল? স্পন্দনের ওপরে নয়, নিজের শরীরের ওপরে ঘৃণা চলে এসেছে ওর। এই শরীরই তো দিনের পর দিন ভার্চুয়ালি বিলিয়ে দিয়েছিল ফালতু ছেলেটাকে। শরীরের নানা জায়গায় আঘাত করতে থাকে। ভেবে নেয় এই ওর পাপের শাস্তি!
এভাবে মাস কেটে যায়। আবারো স্পন্দন টাকার ফরমায়েশ করে। অস্পর্শী বুঝে যায় এসব থেকে আর বাঁচা সম্ভব নয়। ও যতো টাকাই দিক জানোয়ারটার মন ভরবে না। সে আর নিজের আব্বু আম্মুর কষ্টার্জিত অর্থ ওর হাতে তুলে দেবেনা। পরিবার ও দুনিয়া ওর নগ্ন ছবি দেখুক সেটাও ও হতে দেবেনা। এই অবস্থা থেকে বাঁচার একটা উপায় খুঁজে পেল অস্পর্শী!
মেয়ের জন্মদিনে মেয়ের প্রিয় চকলেট কেক বানিয়েছেন অস্পর্শীর বাবা ও মা। ওপাশ থেকে ভাই ভিডিও কলে উত্তেজিত হয়ে অপেক্ষা করছে। রাত ১২ টা বাজা মাত্র "সারপ্রাইজজজ!!" বলে রুমে ঢুকে সবাই পেলেন ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত একটি লাশ! একমাত্র কন্যা সন্তান ও বোনকে হারিয়ে সেদিন থেকে আরো তিনটি প্রাণ যেন ভেতরে ভেতরে জীবন্ত লাশ হয়ে গেল! ধ্বংস হয়ে গেল গোছালো, ছিমছাম একটি পরিবার.......
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কিভাবে বাঁচবেন এবং বাঁচাবেন আপন মেয়ে/বোন কে এমন করুণ পরিণতির হাত থেকে?
১) অস্পর্শীর/মেয়েদের দায়িত্ব!
সবার আগে তো স্বজাতিকে ঝাড় দেব। বোনেরা, হ্যাভ সাম ব্রেইন। কোন ছেলে বাবুর মা ডাকলে এত আবেগী হয়ে পড়েন কেন? ওদের কাছে এসব এত বড় ব্যাপার না। এতটা বোকা কেন? মাত্র সপ্তাহ/মাসের পরিচয়ে কারো সামনে নগ্ন হয়ে যান কি করে? অনেকে বলে, না দিলে প্রেমিক ছেড়ে যাবার হুমকি দেয়। আরেহ! যে প্রেমিক, এমন কারণে ছেড়ে যাবার কথা বলে, সে তো ছবি পেলেও ছেড়ে যাবে। এক মেয়ের শরীরে তো এমন ছেলেদের মন ভরে না। আপনাকে মন্টুর মা বানালে অন্য কাউকে পিন্টুর মা বানাচ্ছে। যে কথায় আপনি আবেগের বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন, সেই একই শব্দ/বাক্য কপি পেস্ট করে অন্য কাউকেও দেওয়া হচ্ছে।
আমি বলছি না যে কাউকে কখনো ভালোবাসবেন না, বিশ্বাস করবেন না - কিন্তু তার আগে কিছু ব্যাপারে সচেতন হোন;
১) অনলাইনে নিজের ও পরিবারের সকল তথ্য দেওয়া বন্ধ করুন। সেসব দেখে স্ক্যামাররা আঁচ করে ফেলে, কোন ধরণের কথা ও কোয়ালিফিকেশন আপনাকে দূর্বল করবে।
২) খেয়াল করুন, ছেলেটি যেকোন সাধারণ কথাকেও ডাবল মিনিং এ নেবার চেষ্টা করছে কিনা। আপনার গোপন ছবি চাইছে কিনা। এগুলো হলে আর সামনের দিকে যাবেনই না। কথা বন্ধ করে দেবেন।
৩) অনলাইনে পরিচিত ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে, নিজের পরিচিত জায়গায় বান্ধবীদের নিয়ে যান।
৪) নির্জন জায়গায়/ফ্ল্যাটে নেবার কথা বললে মানা করুন। জন্মদিনের পার্টির কথা বলেও যদি বাড়িতে দাওয়াত করে, তাহলে নিজের ৩/৫ টা কাজিন/বান্ধবীদের নিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন - যেই মুহূর্তে গাড়ির/বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেল, হাজারটা চিৎকার করেও কিন্তু নিজেকে বাঁচাতে পারবেন না। খোলা আকাশের নিচে নিজেকে বাঁচানোর নানা রাস্তা থাকে।
দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে আস্তে ধীরে মানুষটিকে জানুন। খারাপ সাইন দেখলেই সরে পড়ুন। সবসময় নিজের আত্মসম্মান এবং পরিবারের সম্মানকে প্রায়োরিটি দেবেন। তাহলে অন্তর্জালের প্রেম জাল আপনাকে স্পর্শ করবে না।
২) পিতামাতার দায়িত্ব!
বাবা মা হওয়া এমনিও কঠিন, প্রযুক্তি যুগে আরো কঠিন হয়ে গিয়েছে। আগেকার দিনে, বাচ্চা বাড়িতে থাকলে মা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারতেন যে বাচ্চা ভালো আছে, নিরাপদে আছে। কিন্তু আজকাল সন্তান ঘরের মধ্যে বসে বসেই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর স্ক্যমারের খপ্পড়ে পড়তে পারে!
সন্তানের অনলাইন একটিভি চেক করা খুব জরুরী। পাশাপাশি তাদেরকে অনলাইনে হওয়া নানা রকমের স্ক্যাম সম্পর্কে খোলাখুলি শিক্ষিত ও সচেতন করতে হবে।
৩) সমাজের দায়িত্ব!
স্লাটশেমিং বন্ধ করতে হবে। স্লাটশেমিং অর্থ: একজন নারীর চরিত্র নিয়ে কটু কথা বলা কেননা সে সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী পোশাক/প্রেমিক/বিয়ে ইত্যাদি রক্ষা করতে পারেনি। আমাদের দেশে তো একজন ধর্ষিতা নারীকেও স্লাটশেমিং এর মুখোমুখি হতে হয়। "শরীর দেখাইছে বইলাই তো ওমন হইছে" সহ বাজে বাজে গালি খেতে হয় অনলাইনে/অফলাইনে। অপরাধ যাই হোক না কেন, সবসময় গালিগুলো স্লাটশেমিং এর দিকে গড়ায়। আমাদের সমাজ ভাবে একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় ফেইলিউর শরীর রক্ষা করতে না পারা।
একজন পুরুষ কোন মেয়ের দ্বারা ধোঁকা খেলে সমাজ বলে, "মেয়েরা ছলনাময়ী।" একজন নারী কোন পুরুষের দ্বারা ধোঁকা খেলে সমাজ বলে, "মাইয়া মানষের বুদ্ধি নাই। ওগো তো ওমন খারাপ পোলাই পছন্দ। উচিৎ শিক্ষা হইছে!"
নারী পরকীয়া করলে, "নোংরা মেয়েমানুষের এক পুরুষে মন ভরে না। নারীগো ঘরের বাইরে যাইতে দেওন উচিৎ না!"
পুরুষ পরকীয়া করলে "বউয়েরও দোষ আছে, স্বামীর মন ভোলাইতে পারেনাই! আর দ্বিতীয় নারীটা তো পুরাই প্রস্টিটিউট! মেয়েরাই মেয়েগো শত্রু, পোলাগো দোষ দিয়া লাভ নাই!"
ধর্ষককে সমাজ বলে, "ছেলে মানুষ তো, কম বয়স একটু আকটু!!! ভুল করে ফেলেছে! মাইয়া মানষে আশকারা দেয় বলেই এসব হয়।" এই স্লাটশেমিং এর ভয়েই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন অনেক নারী। কখনো শুনেছেন ধর্ষক আত্মহত্যা করে? নাহ! উল্টো ধর্ষিতারা নিজের প্রাণ নেয়।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে মেয়েরা অপরাধ/ভুল করলে কিছু বলা যাবে না? অবশ্যই যাবে এবং উচিৎও। তবে ভদ্রভাবে। কোন মেয়ে প্রেমে পড়ে ধোঁকা খেলে - তাকে রেপ থ্রেট দেবেন না, গালিগালাজ করবেন না। কে জানে? আপনার বোনও নিজের প্রেমিকের সাথে নোংরা আলাপ করেনা?
প্রথমে মেয়েদেরকে সচেতন ও শিক্ষিত করতে হবে। কিন্তু তারপরেও কোন মেয়ে ভুক্তভোগী হলে - তাকে গালি দিয়ে চরিত্রের দিকে আঙুল তুললে, মেয়েটির পরিবারকেও হেনস্তা করলে - মেয়েটি তো নিজের জান নেবেই। ১৮/২০ বছরের মেয়েগুলোর একটা ভুল ডিসিশন যেন মৃত্যু ডেকে না আনে, তাকে সামনের দিকে এগোতে সাহায্য করুন। আপনার পরিবারের কোন মেয়েও একই ভুল করতে পারে সেটা ভুলবেন না।
সমাজ যেদিন নারী পুরুষ দুজনকেই সমানভাবে অপরাধী করবে যেকোন অপরাধে, সেদিন সমাজ সুস্থতার দিকে এগোবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শেষ কথা: পোস্টে কিছু গভীর কথা থাকলেও ১৮+ দেইনি কেননা প্রযুক্তির যুগে ছোটরা এরচেয়ে অনেক গভীর কিছু হাতের মুঠোয় দেখতে/শুনতে পারছে। উপরন্ত, স্ক্যামাররা আন্ডারএজ ছেলেমেয়েদেরও এটাক করে। এসব পড়লে ওরা সচেতন হবে। সবাই আবেগী হয়ে বিপথে যাবার আগে গল্পের নায়িকার পরিণতির কথা ভাবুক সেই কামনায় শেষ করছি।
ছবিসূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৬